Titas

আবাসিক খাতে গ্যাসের দাম প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। সোমবার সকালে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আয়োজিত গণশুনানিতে এমন প্রস্তাব তুলে ধরেন তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মীর মসিউর রহমান।ব্যবহৃত গ্যাসে সিঙ্গেল বার্নারের (এক চুলা) মাসিক ১১০০ টাকা ও দুই চুলা ১২০০ টাকা করার প্রস্তাব করেন তিতাসের এমডি।বর্তমানে এক চুলা ৬০০ টাকা ও দুই চুলা ৬৫০ টাকা বিল নেয়া হচ্ছে।

এছাড়া গণশুনানিতে বিদ্যুতে ব্যবহৃত গ্যাসের ক্ষেত্রে ৬৩ শতাংশ, সারে ব্যবহৃত গ্যাসের ক্ষেত্রে ৭১ শতাংশ, ক্যাপটিভে ব্যবহৃত গ্যাসের ক্ষেত্রে ১৩০ শতাংশ, শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের ক্ষেত্রে ৬২ শতাংশ, বাণিজ্যিকে ব্যবহৃত গ্যাসের ক্ষেত্রে ৭২ শতাংশ, সিএনজিতে ব্যবহৃত গ্যাসের ক্ষেত্রে ৮৩ শতাংশ এবং বাসাবাড়িতে মিটারে ব্যবহৃত গ্যাসের ক্ষেত্রে ১৪০ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস।এদিকে যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন ভোক্তাদের সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশনের অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ও ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) প্রতিনিধিরা।গত বছর ২৭ আগস্ট গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সে সময় এতে এক চুলা ব্যবহারকারীদের ৬০০ টাকা এবং দুই চুলা ব্যবহারকারীদের ৬৫০ টাকা পরিশোধ করার কথা বলা হয়।

এর আগে এক চুলা ব্যবহারকারীদের ৪০০ টাকা এবং দুই চুলা ব্যবহারকারীদের ৪৫০ টাকা পরিশোধ করতে হতো।বর্তমান চার্জ দশমিক ২৩১ টাকা বা ২৩ পয়সা থেকে কমিয়ে দশমিক ০২১ টাকা বা ২১ পয়সা করার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে তিতাস চার্জ বাড়িয়ে ১ টাকা ০৩৮ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছিল। সোমবার (৮ আগস্ট) দ্বিতীয় দিনের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির গণশুনানি। এদিন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড’র প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি গ্রহণ করা হবে।

সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণ কোম্পানিটি আবাসিকে একচুলার মাসিক বিল ৬’শ টাকা থেকে ৮৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১১’শ টাকা, দুই চুলা ৬৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২’শ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে।অন্যদিকে মিটারযুক্ত আবাসিক গ্রাহকদের ১৪০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। এতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য ৭ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৬ দশমিক ৮০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে।বৃ্দ্িধর তালিকায় মিটারযুক্ত আবাসিকের পরেই রয়েছে ক্যাপটিভ পাওয়ার। এই খাতে ১৩০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে তিতাস গ্যাস। এই খাতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের বর্তমান দর রয়েছে ৮.৩৬ টাকা। দর বৃদ্ধির প্রস্তাবে ১৯ দশমিক ২৬ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।এছাড়া বিদ্যুতে ৬৩ শতাংশ, সার উৎপাদনে ৭১ শতাংশ, শিল্প কারখানার জন্য ৬২ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ৭২ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে তিতাস গ্যাস।

রোববার (৭ আগস্ট) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে গণশুনানি শুরু হয়েছে। মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন পড়বে না? শুনানি গ্রহণ করছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন চেয়ারম্যান এআর খান সদস্য রহমান মোরশেদ ও মাকসুদুল হক।

সোমবার হচ্ছে দ্বিতীয় দিনের মতো গণশুনানি। মঙ্গলবার বিরতি দিয়ে ১০ আগস্ট পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি, ১১ আগস্ট বাখরাবাদ গাস কোম্পানি, ১৪ আগস্ট কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, ১৬ আগস্ট জালালাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও ১৭ আগস্ট সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির গ্রাহক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর শুনানি গ্রহণ করা হবে।১৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে পেট্রোবাংলা, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস ও বাপেক্সের সরবরাহ করা গ্যাসের পাইকারি মূল্য বাড়ানোর বিষয়ে গণশুনানি হবে। এতে অংশ নিয়ে মতামত দেওয়ার সুযোগ রয়েছে ভোক্তাদের। তবে সকালে উপস্থিত হয়ে আলোচনায় নিজের নাম লিপিবদ্ধ করতে হবে।

এর আগে গত বছর আগস্টে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম গড়ে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল, যা গত সেপ্টেম্বর কার্যকর হয়। প্রসঙ্গত, প্রতি ঘনমিটার গ্যাস সঞ্চালন চার্জ দশমিক ২৯৫৬ টাকা বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। তবে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) এ চার্জ প্রতি ঘনমিটারে দশমিক ৩২৬৭ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছিল। রোববার বিকেলে রাজধানীর টিসিবি ভবনে অডিটোরিয়ামে জিটিসিএলের গ্যাসের দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত আবেদনের বিষয়ে গণশুনানির পর সঞ্চালন চার্জ পুননির্ধারণের সুপারিশ তুলে ধরে কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।এসময় উপস্থিত ছিলেন কমিটির আহ্বায়ক, পরিচালক (গ্যাস) ও পরিচালক (অর্থ ও হিসাব এবং পেট্রোলিয়াম একেএম মনোয়ার হোসেন আখন্দ, সহকারী নাজিয়া হক, কামরুজ্জামান, নিশিত কুমার এবং শরিফুল ইসলাম শাহীন।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আয়োজিত শুনানিতে কমিশনের চেয়ারম্যান এ আর খান, সদস্য মাকসুদুল হক ও রহমান মুরশেদ। আর প্রস্তাবকারী পক্ষে ছিল জিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব সারওয়ার, পরিচালক (অর্থ) শরিফুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কারিগরি কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, রাজস্ব চাহিদা অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিটিসিএল’র প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ট্রান্সমিশন চার্জ ০.১৫৬৫ টাকা হতে ০.২৯৫৬ টাকায় (৮৮.৮৮ শতাংশ বৃদ্ধি) পুননির্ধারণ করা প্রয়োজন।

তার ব্যাখ্যায় বলা হয়, জিটিসিএলকে কস্ট-প্লাস ভিত্তিতে পরিচালনার জন্য ২০১৬-১৭ অর্থবছরে টিইসি কর্তৃক নিরুপিত চলতি পরিচালন রাজস্ব চাহিদার পরিমাণ ৭৪৩৪.৪৬ মিলিয়ন টাকা। সুপারিশকৃত রাজস্ব চাহিদা মোতাবেক জিটিসিএল’র গ্যাস ট্রান্সমিশন সেবার ব্যয় দাঁড়ায় দশমিক ৩২৬৭ টাকা। এর মধ্যে দশমিক ২৯৫৬ টাকা অর্জন করতে হবে গ্যাস ট্রান্সমিশন সেবা হতে এবং অবশিষ্ট দশমকি ০৩১১ টাকা অর্জিত হবে কনডেনসেট ট্রান্সমিশন সেবা, ইন্টারেস্ট ইনকাম এবং অন্যান্য আয় খাত হতে।নিরুপিত রাজস্ব চাহিদা অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিটিসিএল’র প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ট্রান্সমিশন চার্জ দশমিক ১৫৬৫ টাকা হতে দশমকি ২৯৫৬ টাকায় (৮৮.৮৮ শতাংশ বৃদ্ধি) পুননির্ধারণ করা প্রয়োজন।এর আগের প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের সঞ্চালন ট্যারিফ ০.১৫৬৫ থেকে বাড়িয়ে নূন্যতম ০.৩৬৬৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। অর্থাৎ দশমিক ২১ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করে সংস্থাটি।

দিনের সমাপনী পর্যায়ের শুনানির শুরুতেই জিটিসিএলকে জেরা করেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিনিধি ড. এম সামসুল আলম। এরপর যথাক্রমে কমিউনিস্ট পার্টিও সদস্য রুহীন হোসেন প্রিন্স ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক খন্দকার সালেহ সূফী প্রমুখ।