08-09-16-chapainawbgonj_cow-hat-selling-8ঈদের আর মাত্র ৪ দিন।ইতোমধ্যে জমে উঠতে শুরু করেছে রাজধানীর পশুর হাটগুলো।এবার হাটগুলোতে দেশী গরুর সংখ্যা বেশি।ঈদের তিন দিন আগ থেকে এসব হাটে কোরবানির পশু বেচাকেনার অনুমোদন দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। সেই হিসেবে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন পশুর হাটগুলোর আনুষ্ঠানিক বেচাকেনা শুরু হবে শনিবার থেকে। চলবে রাত পর্যন্ত।রাজধানীতে এবার মোট ২৩টি স্থানে পশুরহাট বসেছে। হাটে ঢোকার পথে ভেটেরিনারি চিকিৎসকরা গরু, ছাগল ও মহিষের শারীরিক পরীক্ষা করছেন ।ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এবার একটি স্থায়ী এবং ২২টি অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট বসছে। এগুলোর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৪টি ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৯টি হাট রয়েছে।

এদিকে, এদিকে, কোরবানির ঈদের আগ মুহূর্তে ভারত থেকে গরু আসা শুরু হওয়ায় সীমান্তের গরু ব্যবসায়ীরা খুশি হলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশীয় গরুর খামারি ও ব্যবসায়ীরা।পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোলের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আসতে শুরু করেছে ভারতীয় গরু।বৃহস্পতিবার (০৮ সেপ্টেম্বর) দিনভর এ সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অন্তত ৪২৬টি গরু এনেছেন ব্যবসায়ীরা।তারা বলছেন, প্রতিবছর ঈদের সপ্তাহখানেক আগে ভারত থেকে ভারত এভাবে গরু আসা শুরু হয়। এতে স্থানীয়ভাবে লালন-পালন করা গরুর ন্যায্যমূল্য পান না তারা।বৃহস্পতিবার বেনাপোল সীমান্ত ঘুরে দেখা যায় পুটখালী ও গোগাঁ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম হয়ে ভারতীয় গরু আসছে। পরে এসব গরু বেনাপোল বাজার হয়ে দেশের বিভিন্ন শহরে পাঠানো হচ্ছে।পুটখালী গ্রামের বাসিন্দা নাসিরের বাড়ির গোয়াল ও উঠানে দেখা যায় প্রায় শতাধিক ভারতীয় গরু বাঁধা।তবে এ সীমান্তে ৫টি ভারতীয় গরুর খাটাল থাকলেও সেগুলো ফাঁকা রয়েছে। ভারতীয় গরুর ব্যবসায়ীরা মানুষের নজর এড়াতে ভারত থেকে আনা গরু সীমান্তের বিভিন্ন মানুষের বাড়ি ও গোয়ালে রাখছেন।দিকে, ভারত থেকে আনা গরুর কারণে দেশীয় খামারিদের পাশাপাশি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। আগে খাটালে গরু রাখায় গরুপ্রতি ৫০০ টাকা রাজস্ব পেতো সরকার। কিন্তু বর্তমানে ব্যবসায়ীরা ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে গরু আসছেন।

স্থানীয় ভারতীয় গরুব্যবসায়ী রমজান বলেন, ‘অনেকদিন গরু আসা বন্ধ ছিল। এতে এক প্রকার বেকার ছিলাম। এখন ঈদের আগ মুহূর্তে ভারতীয় গরু আসায় আমরা খুশি।মতিঝিলের সন্নিকটে কমলাপুর হাটে গিয়ে দেখা যায় হাটের বেশিরভাগ অংশই ভরে গেছে কোরবানীর গরু, মহিষ ও ছাগলে। হাটের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় এবার চর্বিযুক্ত বড় গরুর চেয়ে অপেক্ষাকৃত ছোট গরুর চাহিদা একটু বেশি। কোরবানির জন্য মানুষ ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকার গরুই পছন্দ করছেন। এই হাটে ১০ হাজার গবাদিপশু রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।কুষ্টিয়া থেকে হাটে গরু নিয়ে এসেছেন গরু ব্যবসায়ী আলমগীর। তিনি বলেন, গরুর দাম এখনো তুলনামূলক বেশি। তবে এখনো সঠিক দাম মূল্যায়ন করা সম্ভব না। কারণ শেষ দুই দিনে গরুর সংখ্যাই দাম নির্ধারণ করে দেয়। যত স্বাভাবিক থাকুক না কেন, কোন কারণে গরুর ঘাটতি হলে দাম লাফিয়ে বাড়বে।

রাজধানীর ভাষানটেক গরু ছাগলের হাটে গিয়ে দেখা যায়, এই হাটটিও দখল করে নিয়েছে দেশি ছোট গরুতে। কুষ্টিয়ার বেপারী খালেক মিয়া বলেন, তিনি ১২টি গরু ও ১০টি ছাগল বিক্রির জন্য হাটে তুলেছেন। এরমধ্যে ৩২ হাজার টাকায় একটি গরু বিক্রি করতে পারায় তিনি খুশি।মানিকগঞ্জের ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন বলেন, তিনি সোমবার রাতে ১৬টি ছাগল হাটে তুলেছেন বিক্রির জন্য। দুপুর পর্যন্ত তিনটি বিক্রি করেছেন।রাজধানীর হাজারীবাগের পশুর হাটে ট্রাক ভর্তি গরু-ছাগল নিয়ে আসতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। এখানে এতো গরু এসেছে যে, মাঠে আর গরু জায়গা হচ্ছে না। তাই রাস্তা পর্যন্ত হাট চলে এসেছে। এখানে ৪০ থেকে ৫০ হাজারের মধ্যে একটি মাঝারি সাইজের গরু পাওয়া যায়।

কোরবানির পশুর হাটে গরুর চাহিদা বেশি হলেও বড় এবং ছোট গরুর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ কম। সাধ ও সাধ্যের বিচারে তাই মাঝারি গরুই নিতে চাচ্ছেন বেশিরভাগ ক্রেতাশুক্রবার রাজধানীর গাবতলীর পশুরহাটে গিয়ে দেখা গেছে, বড় গরুর বেপারীরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। তারা বলছেন, ইনজেকশন দেওয়া হাইব্রিড গরুর গরম বেশি লাগে। এছাড়া হাটে আনার সময় যে ধকল গেছে তা এখনো অনেক গরু কাটিয়ে উঠতে পারেনি। কোনো কোনো বেপারীর গরু এরই মধ্যে মারাও গেছে। তাই যত তাড়াতাড়ি বিক্রি করা যায় ততই তারা হাফ ছেড়ে বাঁচেন।তবে ছোট বা মাঝারি গরু নিয়ে তারা চিন্তিত নন। কেননা, লাভ তুলনামূলক কম বিধায় ছোট গরু সকলেই কম এনেছেন। আর মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি।এক্ষেত্রে ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকার মধ্যে দাম হলে ক্রেতারা বেশি সাড়া দিচ্ছেন। কুষ্টিয়ার বেপারী টুলি মিঞা জানান, ১৭ টি গরু এনেছিলেন। এর মধ্যে ৫টা বিক্রি হয়েছে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায়।মাসুদ নামের আরেক বেপারী জানান, ৫টি গরু নিয়ে পরশু হাটে এসেছেন। এর মধ্যে ৮০ হাজার টাকায় ১টি বিক্রি হয়েছে।এদিকে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় জমে উঠতে শুররু করেছে পশুর হাট। বিক্রেতারাও আশা করছেন, শনিবারের মধেই বেশিরভাগ পশু বিক্রি হয়ে যাবে। বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা রাহাত কবীর মিরপুর থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, মাঝারি গরু কিনতে এসেছি। এক্ষেত্রে ৬০-৭০ হাজার টাকার মধ্যেই কোনো একটা নেব।ধানমন্ডির বাসিন্দা ব্যবসায়ী সোলাইমান নোমান বলেন, পছন্দ মোতাবেক ৫০ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকার মধ্যেই গরু কিনবো।

দেশের সবচেয়ে বড় কোরবানির পশুরহাট বসে গাবতলীতে। রাজধানীতে আরো ২৩টি হাট বসলেও ক্রেতা-বিক্রেতার চোখ গাবতলীর এ হাটেই।সরেজমিনে দেখা গেছে, এবারও এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় গরুটিও উঠেছে এ হাটেই। গাবতলীর হাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পশু আনা হলেও কুষ্টিয়ার গরুই এখানে বেশি। তাই বড় গরুটির নামও বেপারিরা দিয়েছেন ‘কুষ্টিয়া এক্সপ্রেস। তবে অনেকে বড় পাহাড় বলেও ডাকছেন একে।কুষ্টিয়া সদর উপজেলা থেকে বশির আহমেদ এ গরুটি এনেছেন। দুই বছর আগে দুই লাখ টাকায় দুই দাতি ইন্ডিয়ান ষাঁড় কিনেছিলেন তিনি। আর মোটাতাজা করতে তার ব্যয় হয়েছে আরো দুই লাখ টাকা। তাই সবমিলিয়ে তিনি এটির দাম হাঁকছেন ২০ লাখ টাকা। তবে এটির দাম এখন পর্যন্ত উঠেছে ১২ লাখ টাকা । বশির জানান, কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকা না হলে ‘কুষ্টিয়া এক্সপ্রেস’কে ছাড়বেন না তিনি ।তিনি আরও জানান, হাটে বড় বড় ৭টি গরু এনেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত একটিও বিক্রি হয়নি। তবে তার আশা শনি-রবিবারের মধ্যেই সব বিক্রি হয়ে যাবে।কুষ্টিয়া এক্সপ্রেস লম্বায় নয় ফিটের মতো আর উচ্চতায় ছয় ফিটের কাছাকাছি। গোশত ১০ মণের বেশি হবে বলেও জানান তিনি। লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠেও একই চিত্র। গরু আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন এলাকা থেকে। এ মাঠে প্রতিবছরই গরু নিয়ে আসেন মানিকগঞ্জের মমতাজ। তিনি বলেন, থাকা খাওয়া গোসল ও ঘুমানোর কষ্ট খুব বেশি। এ ছাড়া গো-খাদ্য কিনতে হয় বেশি দামে। পথে পথে চাদাঁ, তারপর গাড়ি ভাড়া। এসব খরচের পর গো-খাদ্যর জন্য বাড়তি খরচ করতে গিয়ে লাভের অংশ কমে যায়।

মমতাজ আরও বলেন, গো-খাদ্যের মধ্যে ভূষি প্রতি কেজি ৩০ টাকা, গমের ভূষি ৪০ টাকা, খেসারির ভূষি প্রতি কেজি ৪০ টাকা, ছোলা-বুটের ভূষি প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, ডালের পাউডার প্রতি কেজি ৩২ টাকা, খৈল প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, সবুজ ঘাসের ছোট আটি ২০ এবং বড় আটি ৪০ টাকা, খড়ের আটি ছোট আটি ১৫ এবং বড় ৩০ টাকায় কিনতে হয়। এদিকে পশু হাটগুলোর দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়,পশুর হাটগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা আওতায় আনা হয়েছে, জাল টাকা শনাক্তকরণ যন্ত্রসহ নিরাপত্তার জন্য প্রত্যকে হাটে পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প রয়েছে। একই সঙ্গে ইউনিফর্ম পরিহিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও কাজ করছেন।অধিক পরিমাণ নগদ অর্থ বহনের জন্য রয়েছে পুলিশ স্কট। পশু আনা-নেওয়ার বিভিন্ন পয়েন্টে মোতায়েন করা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশী টহল। হাটের আশেপাশের রাস্তায় যানজট নিরসনের জন্য রয়েছে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ।