10-09-16-boilar-blast-pakaging-tongi-26

গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্প নগরীতে ট্যাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানার আগুন প্রায় ২৭ ঘন্টা পর রবিবার সকালে নিয়ন্ত্রণে এলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নিভেনি। ফলে হতাহতদের খোঁজে এখনো কারখানার ভিতরে তল্লাশি করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তবে রবিবার সন্ধ্যায় ওই কারখানার সংলগ্ন রাস্তার উপর থেকে ধ্বংস স্তুপ সরিয়ে আরো ৪জনের লাশ উদ্ধার করেছে উদ্ধার কর্মীরা। নিহত এ চারজন পথচারী বলে ধারনা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কারখানার ধ্বংস স্তুপ থেকে ধোঁয়া ও আগুন বেরোতে দেখা গেছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট আগুন নেভাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ধ্বসে পড়ার পর কারখানার অবশিষ্ট পাঁচতলা ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। যে কোনো মুহুর্তে ওই ভবন ধ্বসে পড়তে পারে বলে আশংকা করছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা। ট্যাম্পাকো কারখানায় ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা বয়লার বিস্ফোরণে নয়, গ্যাস লাইন লিক হওয়ার কারনে ঘটেছে বলে কারখানা পরিদর্শন শেষে দাবি করেছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের বয়লার পরিদর্শক ইঞ্জিনিয়ার শরাফত আলী। এদিকে রবিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিপন দাস (৩২) নামে আরও এক শ্রমিক মারা গেছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা ২৯ জনে দাড়িয়েছে। এর আগে শনিবার রাতে গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. আলী হায়দার খান ২৪ জনের নিহতের কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন।

গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্প নগরীতে ট্যাম্পাকো ফয়েলস নামের প্যাকেজিং কারখানায় শনিবার ভোরে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এসময় কারখানায় রাতের শিফটের শ্রমিকরা কাজ করছিল। একারখানায় প্যাকেজিং ও প্লাস্টিকের প্যাকেট এবং ফয়েল তৈরী করা হয়। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পাঁচতলা কারখানা ভবনের কাঠামোও ধসে পড়ে। আগুনে দগ্ধ হয়ে এবং ভেঙে পড়া কাঠামোর নিচে চাপা পড়ে শনিবার রাত পর্যন্ত মৃত্যু হয় ২৪ জনের। আহত হয় অর্ধশতাধিক। আহতদের মধ্যে অন্ততঃ ৩৫ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল ও উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রবিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রিন্টিং অপারেটর রিপন দাস (৩০) নামের আরো একজন মারা যায়। এছাড়াও রবিবার সন্ধ্যায় ওই কারখানার পূর্ব পাশে রাস্তার উপর ধ্বসে পড়া ভবনের ধ্বংস স্তুপ অপসারণ করে আরো ৪ জনের লাশ উদ্ধার করেছে উদ্ধার কর্মীরা। ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনার সময় কারখানা সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ওই চার পথচারী ধ্বসে পড়া ভবনের নীচে চাপা পড়ে মারা যায়। এ নিয়ে ওই ঘটনায় রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে এখনো ধ্বংস স্তুপ থেকে লাশের পঁচা দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।

এদিকে ট্যাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানার অগ্নিকান্ডের ২৮ ঘণ্টা পর রবিবার সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নিভেনি। প্রায় ৩৮ ঘন্টা পর রবিবার সন্ধ্যায় কারখানা ভবনের ভগ্নাশেংর নিচতলা এবং ৪ ও ৫তলা থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। ধ্বংস স্তুপ থেকে মাঝে মধ্যেই জ¦লে উঠছে আগুন। সন্ধ্যার পর পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা পানি দিয়ে আগুন পুরোপুরি নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে পুরো কারখানার চারদিক থেকে আগুন নেভানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের কমিউনিটি ভলান্টিয়াররাও কাজ করছেন। আগুন না নেভায় এবং ভবন ঝুকিপূর্ণ হওয়ার ফলে হতাহতদের খোঁজে এখনো কারখানার ভিতরে তল্লাশি করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ইতোমধ্যে ধ্বসে পড়ার পর কারখানার অবশিষ্ট পাঁচতলা ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। এটি যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে বলে ফায়ার সার্ভিস ঢাকা বিভাগীয় ডিডি মো. মোজাম্মেল হক জানান।

শিল্প মন্ত্রীর পরিদর্শণ ॥

রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিল্প মন্ত্রী আমির হোসেন আমু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় মন্ত্রী বলেন, গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্প নগরীতে প্যাকেজিং কারখানায় বিস্ফোরণের পর অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কারও গাফিলতি থেকে থাকলে তাদের শাস্তি হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চলছে।

এ ঘটনায় আমরা সবাই মর্মাহত, শোকাহত। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সবাই এ ব্যাপারে শোক প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়ের পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকার নিহতদের আর্থিক সহায়তা এবং আহতদের সকল প্রকার চিকিৎসা সেবা দেবে। শিল্প মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সমস্ত শিল্প নগরীর কোথাও কোনো লিকেজ আছে কিনা, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট আছে কিনা, বয়লার নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা, মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো বয়লার চালু আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখার জন্য। থাকলে সেগুলো বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এসময় স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. জাহিদ আহসান রাসেল, শিল্প মন্ত্রণালয় সিনিয়র সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া, বিসিক শিল্পনগরীর চেয়ারম্যান মো. হযরত আলী, গাজীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোলায়মান, সহকারী পুলিশ সুপার মো. বেলায়েত হোসেন, শিল্প পুলিশের সুপার শোয়েব আহম্মেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ফায়ার সার্ভিসের কে কি বলছেন ॥

ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক জহিরুল আমিন মিয়া রবিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুরোপুরি নিভে গেলে ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করা হবে।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লে. কর্নেল মোশারফ হোসেন বলেন, আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিস বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছে। ভবনের ভাঙ্গা অংশের কারণে পানি সব স্থানে পৌছানো যাচ্ছে না। যেখানে পুনরায় আগুন বা ধোঁয়া উঠছে সেখানেই পানি দেয়া হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের কোন ইউনিটকেই প্রত্যাহার করা হয়নি। ২৫টি ইউনিটই কাজ করছে। ১০টি পাম্পের সাহায্যে সার্বক্ষনিক পানি ছিটানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে একটি পুকুর শুকিয়ে গেছে। আরেকটি পুকুরে পাম্প বসানো হয়েছে। কারখানার ৩টি ভবনই একসঙ্গে ধসে পড়ায় এবং সর্বত্রই কেমিকেলের ছড়াছড়ির কারণে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে আনতে সমস্যা হচ্ছে। তবে আশপাশের ভবনগুলোকে রক্ষা করতে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। যে কোন মূহুর্তে ভবন দেবে যেতে পারে বা কেমিকেলের কারণে আরো বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। ফলে আমরা সাবধানে পদক্ষেপ নিচ্ছি। বিকেল ৪টা থেকে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন কারখানায় অ্যামোনিয়াম জাতীয় গ্যাস সংরক্ষণ করে রাখা হয়। কিন্তু এখানে এ ধরনের গ্যাস আমরা শনাক্ত করতে পারিনি। তবে এখানে এমন কিছু ক্যামিকেল ছিল যা বিস্ফোরণে সহায়তা করে।

তিনি আরো জানান,আাগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের পাশাপাশি দুটি হাইরাইজ ভেহিকল রয়েছে, যার একটি বীমা ইউনিট ও অন্যটি স্নোকেল। তিনটি লাইটিং ইউনিটও কাজ করছে। কারখানার চারটি ভবনেই আগুন লেগেছিল। এর মধ্যে তিনটির আগুন আমাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি। পাঁচতলার একটি ভবনের আগুন আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, যখন আগুন কম ছিল তখন আমরা দেখেছি, ভেতরে অনেক কাগজ, রোল মজুদ ছিল। কিছু ফুয়েলও আছে। যা দাহ্য পদার্থ থেকে বার বার জ্বলে উঠছে। ইতিমধ্যে বুয়েটের দুজন ইঞ্জিনিয়ার, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ার ও রাজউকের ইঞ্জিনিয়াররা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাদের সবার সমন্বয়ে একটি টিম তৈরি করা হয়েছে। তাদের পরামর্শে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ওই টিমেরও অভিমত হলো, পাঁচতলা ভবনও যেকোনো সময় ধসে যেতে পারে। তাই ফায়ার সার্ভিসের টিম যেন নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেয়। পাশাপাশি আমাদের পক্ষ থেকে সাধারণ জনগণকে পরামর্শ দেব যেন তারা নিরাপদ জায়গায় অবস্থান নেয়।

বয়লার অক্ষত ॥

বয়লার বিস্ফোরণে নয়, গ্যাস লাইন লিক হয়ে টাম্পাকো কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের বয়লার পরিদর্শক ইঞ্জিনিয়ার শরাফত আলী। ট্যাম্পাকো কারখানা পরিদর্শন শেষে শনিবার রাতে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্যাম্পাকো কারখানায় দুটি বয়লার রয়েছে। এগুলো আগামী ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত নবায়ন করা আছে।তিনি বলেন, আমরা বয়লার রুম পরিদর্শন করে দেখেছি, অগ্নিকান্ডের পরও কারখানার দুটি বয়লার অক্ষত আছে। তাই বয়লার বিস্ফোরণে নয়, গ্যাস লিকেজ থেকে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। কারখানার বয়লার অপারেটর ইনচার্জ ইমাম উদ্দিন বলেন, কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের কোনো সম্ভাবনাই নেই। আমরা বয়লার রুমে গিয়ে দেখেছি বয়লার দুটি এখনও অক্ষত আছে। তবে গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে কারখানায় গ্যাস লাইনে লিকেজ সৃষ্টি হয়েছিল। সে কারণে হয়তো অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ট্যাম্পাকো কারখানায় মোট ৪টি বয়লার ছিল। তবে প্রতিষ্ঠানটির এ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দাবি করছেন দুটি ও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ওই কারখানায় দুটি বয়লারের অনুমোদন রয়েছে। এদিকে, কারখানায় সরকারিভাবে গ্যাস ব্যবহারের অনুমোদন ছিল ১০ পিএসআই। কারখানার বয়লার এবং জেনারেটর গ্যাসের সাহায্যে চলতো। এ দুর্ঘটনার পর থেকে কারখানার আশপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে তিতাস কর্তৃপক্ষ।

আহতদের অনুদান দিলেন বিভাগীয় কমিশনার ॥

টঙ্গীর ট্যাম্পাকো কারখানায় অগ্নিকান্ড ও ভবন ধ্বসের ঘটনায় রবিবার আহতদের দেখতে আসেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার হেলাল উদ্দিন আহমেদ। এ সময় তিনি তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেন। অনুদান প্রাপ্তরা হলেন- রোকন ইসলাম (৩৫), জাহাঙ্গীর মৃধা (৪০), আমিনুল হক (২৬), আনোয়ার আলম (৪৫) শিপন (২৫), প্রাণকৃষ্ণ (৩৬) ফেরদৌস (৩৮), শাহীন আলম (২২) এবং জাকির আলম (২৫)।

জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম ॥

গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্প নগরীর প্যাকেজিং কারখানায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় টঙ্গীর আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতুর পাশে জেলা প্রশাসন কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছে। গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল হাসেম ওই কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব পালন করছেন। শনিবার সকালে ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের পর ওই কারখানার নয় নিখোঁজ শ্রমিক-কর্মচারীর একটি তালিকা করেছে জেলা প্রশাসন।

এ ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল হাসেম বলেন, কারখানার নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা কন্ট্রোল রুমে এসে তাদের পরিচয়পত্র, ছবি ও নাম দিয়ে যাচ্ছে। সে অনুযায়ী নিখোঁজদের তালিকা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত নিখোঁজ ৯ জনের তালিকা পাওয়া গেছে। তবে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ঘটনায় ২৯ জন মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদিকে সন্ধ্যায় আগুন নেভানোর পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কারখানা সংলগ্ন রাস্তার উপর থেকে ধ্বংস স্তুপ অপসারণ করে আরো চার জনের লাশ উদ্ধার করেছে। তল্লাশি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে আরও মৃতদেহ রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করে এ মুহুর্তে বলা সম্ভব নয়।

কন্ট্রোল রুমের নিখোঁজ শ্রমিকের তালিকায় রয়েছেন-মাগুরা সদরের চনপুর ইডারন গ্রামের আ. মালেক মোল্লার ছেলে আজিম উদ্দিন (৩৬), টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের উকুলকি গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে জহিরুল ইসলাম (৩৭), গাজীপুর মহানগরের হিমারদিঘী আমতলী বস্তি হরিজন কলোনির দিলীপ ডোমের ছেলে শ্রী রাজেশ বাবু (২২), লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের শিবপুর গ্রামের মো. আবু তাহেরের ছেলে রিয়াদ হোসেন মুরাদ (৩২), সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের ঝিগারবাড়িয়া গ্রামের মমতাজ আলীর ছেলে মো. ইসমাইল হোসেন (৪৫), একই এলাকার সুলতান গাজীর ছেলে মো. আনিছুর রহমান (৩০), কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের মেছেরা গ্রামের মৃত আব্বাস আলীর ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম (৪০), চাঁদপুরের কচুয়ার তেঘরিয়া গ্রামের ইউনুস পাটোয়ারীর ছেলে নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী (৪৫) ও কুমিল্লার মুরাদনগরের টনকী গ্রামের মো. তোফায়েল হোসেনের ছেলে মাসুম আহমেদ (৩০)।
এদিকে, নিখোঁজদের খোঁজ নিতে ছবি হাতে কন্ট্রোল রুমে এসে স্বজনদের কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে।

হাসপাতালের ছুটি বাতিল ॥

এদিকে আহতদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা ও গাজীপুরের সব সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. নাজিব আহম্মেদ এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। গাজীপুরে কারখানায় দুর্ঘটনায় হতাহতদের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন তিনি। আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের ছুটি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি সব সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বলেছেন।

টাম্পাকো কারখানার ধ্বংসস্তুপ অপসারণ কার্যক্রম শুরু ॥

রবিবার বিকেল ৪টার পর থেকে ধ্বসে পড়া ট্যাম্পাকো ফয়েল কারখানা ভবন অপসারণের কাজ শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস.এম আলম। তিনি জানান, ফায়ার সার্ভিসের দুই শতাধিক কর্মী ধ্বসে পড়া কারখানা ভবনের ড্যাম্পিং কাজ শুরু করেছে।

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।