%e0%a6%9f%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%97%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%9f%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%8d%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a7%8b-%e0%a6%ab%e0%a7%9f%e0%a7%87%e0%a6%b2%e0%a6%b8

গাজীপুর টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরীতে ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানার ধ্বংসাবশেষ থেকে ঘটনার ১৪দিন পর শনিবার দুপুরে এক ব্যক্তির কংকাল উদ্ধার করেছে উদ্ধারকর্মীরা। মৃতদেহটি গলে যাওয়ায় এবং আগুনে ও কেমিক্যালে পুড়ে যাওয়ায় সেটি নারী না পুরুষের তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এনিয়ে ওই কারখানায় ভয়াবহ বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হয়ে এবং ভেঙে পড়া কাঠামোর নিচে চাপা পড়ে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৬ জনে দাঁড়িয়েছে। ওই ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছে ১১ জন। নিহতদের মধ্যে ৭জনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায় নি। এদিকে ঘটনার ১৫তম দিন শনিবারও নিখোঁজদের সন্ধানে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যৌথভাবে ‘ফায়ার ফাইটিং এন্ড রেস্কিউ অপারেশন’ চালিয়েছে। এদিনও কারখানার ধ্বংসস্তুপের বিভিন্ন স্থান থেকে আগুনের ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আক্তারুজ্জামান লিটন জানান, টঙ্গীর বিসিক নগরীতে বিএনপির সাবেক সাংসদ মকবুল হোসেনের মালিকানাধীন ট্যাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় গত ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে ভয়াবহ বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ওই কারখানার বিশাল ভবনের অধিকাংশই ধ্বসে পড়ে বিশাল ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়। কারখানায় ভয়াবহ বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হয়ে এবং ভেঙে পড়া কাঠামোর নিচে চাপা পড়ে ইতোপূর্বে ৩৫ জন মারা গেছে এবং নিখোঁজ রয়েছে ১১ জন। নিখোঁজদের সন্ধানে ওই ঘটনার ১৫তম দিনে শনিবার সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যৌথভাবে ‘ফায়ার ফাইটিং এন্ড রেস্কিউ অপারেশন’ চালায়। উদ্ধার অভিযান চলাকালে দুপুর সোয়া দুইটার দিকে ধ্বসে পড়া কারখানার ৬তলা ভবনের পূর্ব পাশে একটি মেশিনের নীচ থেকে মানব কঙ্কালটি উদ্ধার করা হয়েছে। পাশেই কেমিক্যালের বিষ্পোরিত ড্রাম পড়ে ছিল। মৃতদেহটি গলে যাওয়ায় এবং আগুনে ও কেমিক্যালে পুড়ে যাওয়ায় তা নারী না পুরুষের তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফলে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩৬ জনে দাঁড়িয়েছে।

উদ্ধার কার্যক্রম ॥
এদিকে টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীর ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনার ১৫তম দিন শনিবারেও নিখোঁজদের সন্ধানে সতর্কতার সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা ‘ফায়ার ফাইটিং এন্ড রেস্কিউ অপারেশন’ চালিয়েছেন। যে কোন মুহুর্তেই ভঙ্গুর অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা কারখানার অবশিষ্ট ভবনটি ধ্বসে পড়ার আশংকা রয়েছে এতে বিধ্বস্ত ভবনের ভিতর উদ্ধার অভিযান চালানো আরো ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠে।। এছাড়াও ভবনে অরক্ষিত অবস্থায় কেমিকেলের ড্রামগুলো পড়ে থাকায় যে কোন মুহুর্তে অগ্নিকান্ড ও বিষ্ফোরণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ঝুকি নিয়েই নিখোঁজদের সন্ধানে সতর্কতার সঙ্গে উদ্ধার কর্মীরা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। ধ্বংসস্তুপ সরাতে ভবনের ছাদ ও ভিমের রড-সিমেন্ট কেটে ছোট ছোট টুকরা করা হচ্ছে। তা ছাড়া ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ধসে যাওয়া ভবনের ঢালাই, ইট-পাথর ড্রাম ট্রাক দিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে কারখানার পাশে অবিস্থত সোনালী ব্যাংকের বিসিক শিল্প এলাকা শাখার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।

আন্তঃমন্ত্রণালয়ের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠিত হচ্ছে ॥
অপরদিকে ট্যাম্পাকো দূর্ঘটনায় অধিকতর তদন্তের জন্য আন্তঃমন্ত্রনালয়ের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠিত হচ্ছে এবং বর্তমানে কর্মরত তদন্ত কমিটিগুলোর মেয়াদ আরো সাত দিন বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম। তিনি জানান, দুর্ঘটনায় অধিকতর তদন্তের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠিত হচ্ছে। তদন্ত কমিটি গুলোর মেয়াদ আরো সাতদিন বাড়ানো হয়েছে। প্রশাসনের তদন্ত রিপোর্টে আরো অভিজ্ঞ লোক নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বড় ধরনের কমিটি করার কথা বলা হয়েছে। সে লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দু’এক দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন হবে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস ও শিল্প মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ করছে। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে। ঘটনার পাঁচ দিন পর তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

ডিএনএ টেস্টের জন্য রবিবার নমুনা দিবেন নিখোঁজ দু’জনের স্বজন ॥
ট্যাম্পাকো দূর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে অজ্ঞাত ৭ লাশের পরিচয় সনাক্ত করতে ডিএনএ টেস্টের জন্য ইতোমধ্যে কয়েকজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকাস্থ মালিবাগে সিঅইডি ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবে নিখোঁজ ১১ জনের স্বজনদের মধ্যে ৯ জনের স্বজনরা গত বুধবার তাদের লালা ও রক্ত দিয়েছেন। অপর নিখোঁজ কারখানার ক্লিনার মো. মামুন (২৮) ও চুন্নু মোল্লা (২২)-এর স্বজনরা রবিবার নমুনা দেবেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ট্যাম্পাকো’র ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি ॥
এদিকে, কারখানায় বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কারখানার মালিক বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হেসেনকে প্রধান আসামী করে টঙ্গী মডেল থানায় এপর্যন্ত দু’টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর কারখানা মালিকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি দায়ের করেন নিহত শ্রমিক জুয়েলের পিতা আব্দুল কাদের। পরে ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে টঙ্গী মডেল থানার এস আই অজয় কুমার বাদী হয়ে কারখানা মালিকসহ ১০ জনকে আসামী করে দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন। উভয় মামলায় মালিকের স্ত্রীকেও আসামী করা হয়েছে। দু’টি মামলা দায়ের হলেও বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

দূর্ঘটনায় আরো এক নববধূ নিহত হওয়ার দাবী ॥
টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীর ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পথচারী এক নববধূ নিহত হওয়ার দাবী জানিয়েছে তার স্বজনরা। ঘটনার ১২দিন পর গত বৃহস্পতিবার নিহতের বাবা এ দাবী করলেও সত্যতা নিশ্চিত না হওয়ায় নিহতদের তালিকায় তার নাম অন্তর্ভক্ত হয়নি। ফলে দেয়া হয়নি আর্থিক অনুদানও। নিহত ওই নববধূর নাম আসমা আক্তার। সে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানার রউয়া গ্রামের আব্দুল মতিনের মেয়ে এবং সুমনের স্ত্রী। নিহতের বাবা আব্দুল মতিন জানান, টঙ্গী বিসিকের রেডিসন অ্যাপারেলস পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন আসমা। প্রায় দেড় মাস আগে আসমার বিয়ে হয়। ঈদের ছুটিতে আসমা ও তার স্বামী সুমন গত ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে বাড়িতে যাচ্ছিলেন। তারা টঙ্গী বিসিক প্রধান সড়ক দিয়ে হেঁটে যাওয়ার পথে হঠাৎ ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এসময় ওই কারখানার ধ্বসে পড়া ভবনের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন আসমা। কিন্তু সামান্য আগে থাকায় সুমন অল্পের জন্য রক্ষা পান। পরে সুমন পথচারিদের সহযোগিতায় ভবনের ধ্বংসাবশেষের নিচ থেকে আসমার লাশ বের করে হাসপাতালে না নিয়ে স্থানীয় মিরাশ পাড়ায় ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। সেখানে গোসল করিয়ে ও কাফন পরিয়ে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানার রউয়া গ্রামে নিয়ে দাফন করেন। পরবর্তীতে ট্যাম্পাকো দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্বজনদের আর্থিক অনুদানের টাকা দেয়া হচ্ছে এমন খবর পেয়ে তিনি বুধবার গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে প্রথম যোগাযোগ করতে এসে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নিহতদের তালিকায় আসমার নাম নেই।

প্রসঙ্গতঃ টঙ্গীর বিসিক নগরীতে বিএনপির সাবেক সাংসদ মকবুল হোসেনের মালিকানাধীন ট্যাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় গত ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে ভয়াবহ বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ওই কারখানার বিশাল ভবনের অধিকাংশই ধ্বসে পড়ে বিশাল ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়। কারখানায় ভয়াবহ বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হয়ে এবং ভেঙে পড়া কাঠামোর নিচে চাপা পড়ে এ পর্যন্ত ৩৬ জন মারা গেছে এবং নিখোঁজ রয়েছে ১১ জন। পরিচয় শনাক্তের পর ২৯জনের লাশ তাদের স্বজনরা দাফনের জন্য নিয়ে গেছে। নিহতদের মধ্যে ৭জনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায় নি। তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ টেষ্টের জন্য ইতোমধ্যে নিখোঁজ ১১ জনের মধ্যে ৯ জনের দু’জন করে মোট ১৮ স্বজনের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বাকী দু’জনের স্বজনদের নমুনা রবিবার সংগ্রহ করার কথা রয়েছে। নিখোঁজদের সন্ধানে গত ১২ সেপ্টেম্বর হতে উদ্ধার অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের সদস্যরা। শনিবারও নিখোঁজদের সন্ধানে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের যৌথ ‘ফায়ার ফাইটিং এন্ড রেস্কিউ অপারেশন’ চালিয়েছে। তবে এদিন ধ্বংসস্তুপ থেকে এক মানব কংকাল উদ্ধার করে উদ্ধার কর্মীরা। ইতোমধ্যে হতাহত ও নিখোঁজদের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়েছে।

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।