%e0%a6%9f%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%97%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%9f%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%8d%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%95%e0%a7%8b-%e0%a6%ab%e0%a7%9f%e0%a7%87%e0%a6%b2%e0%a6%b8%e0%a7%87

গাজীপুর টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরীতে ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানার ধ্বংসাবশেষ থেকে ঘটনার ১৮ দিন পর বুধবার আরো মানব কংকাল উদ্ধার করেছে উদ্ধারকর্মীরা। বিধ্বস্থ কারখানার ছয়তলা ভবনের নিচ তলায় ধ্বংসাবশেষ সরানো এবং উদ্ধার কাজে নিয়োজিত কর্মীরা দুপুরে আংশিক ওই দেহাবশেষ উদ্ধার করেন। উদ্ধারকৃত কংকালটি একজনের দেহাবশেষ নাকি আগে পাওয়া কঙ্কালের অংশ তা শনাক্ত করতে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এদিকে বুধবারেও নিখোঁজদের সন্ধানে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিসসহ উদ্ধার কর্মীরা যৌথ ‘ফায়ার ফাইটিং এন্ড রেস্কিউ অপারেশন’ চালিয়েছে।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আক্তারুজ্জামান লিটন ও টঙ্গী মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার জানান, টঙ্গীর বিসিক নগরীতে বিএনপির সাবেক সাংসদ মকবুল হোসেনের মালিকানাধীন ট্যাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় গত ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে ভয়াবহ বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ওই কারখানার বিশাল ভবনের অধিকাংশই ধ্বসে পড়ে বিশাল ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়। কারখানায় ভয়াবহ বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হয়ে এবং ভেঙে পড়া কাঠামোর নিচে চাপা পড়ে ইতোপূর্বে ৩৯ জন মারা গেছে এবং নিখোঁজ রয়েছে ১১ জন। নিখোঁজদের সন্ধানে ওই ঘটনার ১৯তম দিনে বুধবার সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যৌথভাবে ‘ফায়ার ফাইটিং এন্ড রেস্কিউ অপারেশন’ চালায়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড গত ১২ সেপ্টেম্বর হতে এ অভিযানে অংশ নিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে। উদ্ধার অভিযান চলাকালে বুধবার দুপুরে ধ্বসে পড়া কারখানার ভবনের নীচতলা থেকে মানব দেহের আংশিক কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে। এরআগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর একই স্থান থেকে তিনটি মানব কংকাল উদ্ধার করা হয়। বুধবার সেখান থেকে উদ্ধার করা দেহখন্ডটি নিহত ওই শ্রমিকদের নাকি নিখোঁজ অন্য কোনো শ্রমিকের তা তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আক্তারুজ্জামান লিটন আরো জানান, জেলা প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীর ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হয়ে এবং ভেঙে পড়া কাঠামোর নিচে চাপা পড়ে সোমবার পর্যন্ত ৩৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও নিখোঁজের তালিকায় ১১ জনের নাম রয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২৯ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের লাশ ইতোমধ্যে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহত অপর ১০ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হাসপাতালে সংরক্ষিত নিহত ওই ১০ অজ্ঞাতসহ বুধবার উদ্ধারকৃত দেহাবশেষ যদি ডিএনএ পরীক্ষার পর জেলা প্রশাসনের তালিকাভুক্ত নিখোঁজ ১১ শ্রমিকের স্বজনদের মিলে যায় তাহলে আর কোনো শ্রমিক নিখোঁজ নেই বলে ধরে নেয়া যাবে। এজন্য ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট দেয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে স্বজনদের। তবে একজন নিখোঁজ থাকা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে।

টঙ্গী মডেল থানার এসআই ও ট্যাম্পাকো দূর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুমন ভক্ত জানান, বুধবার উদ্ধার করা দেহখন্ডটি একজনের দেহাবশেষ নাকি আগে পাওয়া কঙ্কালের অংশ তা শনাক্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে পরিচয় নিশ্চিত হতে এর ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। দুর্ঘটনার পর গাজীপুর জেলা প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস, বিসিক ও বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গত ২৩ সেপ্টেম্বর তদন্ত তিতাসের উচ্চ পর্যায়ের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

এদিকে টঙ্গীর ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কারখানার মালিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে হতাহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় হতাহতদের কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেছে আদেশ দিয়েছেন।

কারখানায় গত ১০ সেপ্টেম্বর বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কারখানার মালিক বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হেসেনকে প্রধান আসামী করে টঙ্গী মডেল থানায় এপর্যন্ত দু’টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর কারখানা মালিকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি দায়ের করেন নিহত শ্রমিক জুয়েলের পিতা আব্দুল কাদের। পরে ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে টঙ্গী মডেল থানার এস আই অজয় কুমার বাদী হয়ে কারখানা মালিকসহ ১০ জনকে আসামী করে দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন। উভয় মামলায় মালিকের স্ত্রীকেও আসামী করা হয়েছে। দু’টি মামলা দায়ের হলেও বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

প্রসঙ্গতঃ টঙ্গীর বিসিক নগরীতে বিএনপির সাবেক সাংসদ মকবুল হোসেনের মালিকানাধীন ট্যাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় গত ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে ভয়াবহ বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ওই কারখানার বিশাল ভবনের অধিকাংশই ধ্বসে পড়ে বিশাল ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়। কারখানায় ভয়াবহ বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হয়ে এবং ভেঙে পড়া কাঠামোর নিচে চাপা পড়ে জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোলরুমের হিসেব অনুযায়ী গত সোমবার পর্যন্ত ৩৯ জন মারা গেছে এবং নিখোঁজ রয়েছে ১১ জন। এরমধ্যে নিহত ১০ জনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায় নি। বুধবার কারখানার ধ্বংসাবশেষ থেকে আরো মানব কংকাল উদ্ধার করেছে উদ্ধারকর্মীরা। নিহত অজ্ঞাতদের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ টেষ্টের জন্য ইতোমধ্যে নিখোঁজ ১১ জনের দু’জন করে মোট ২২ স্বজনের কাছ থেকে নমুনা রেফারেন্স ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে। নিখোঁজদের সন্ধানে গত ১২ সেপ্টেম্বর হতে উদ্ধার অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের সদস্যরা। বুধবারও নিখোঁজদের সন্ধানে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিসসহ উদ্ধার কর্মীরা যৌথ ‘ফায়ার ফাইটিং এন্ড রেস্কিউ অপারেশন’ চালিয়েছে। ইতোমধ্যে হতাহত ও নিখোঁজদের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়েছে।

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।