রাজধানীর-আজিমপুরে-জঙ্গি-আস্তানায়-অভিযানে-নিহত-আত্মঘাতী-জঙ্গি-তানভীর-কাদেরী-ওরফে-আব্দুল-করিম
রাজধানীর-আজিমপুরে-জঙ্গি-আস্তানায়-অভিযানে-নিহত-আত্মঘাতী-জঙ্গি-তানভীর-কাদেরী-ওরফে-আব্দুল-করিম

রাজধানীর আজিমপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নিহত আত্মঘাতী জঙ্গি তানভীর কাদেরী ওরফে আব্দুল করিমের কিশোর ছেলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর মহানগর হাকিম আহসান হাবীবের খাস কামরায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে।

জঙ্গি করিমের কিশোর ছেলে জানিয়েছে, সংগঠনের নির্দেশনা অনুযায়ী তার পুরো পরিবার উত্তরা, পল্লবী, রূপনগর, বসুন্ধরা ও আজিমপুরের বাসায় ছিল। তাদের বাসায় গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীসহ নব্য জেএমবির মারজান, বাসারুজ্জামান ওরফে চকলেট, মেজর (অব.) জাহিদ ও মঈনুলের মতো অনেক জঙ্গির যাতায়াত ছিল। এমনকি গুলশান হামলার আগে পাঁচ হামলাকারী তাদের বসুন্ধরার বাসায় অবস্থান করে বলেও স্বীকারোক্তি দেয় সে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ১৪ বছর বয়সী ওই কিশোর জানায়, তার বাবা মৃত তানভীর কাদেরী জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ছিল। তার বাবার সাংগঠনিক নাম ছিল জামশেদ ওরফে আব্দুল করিম ওরফে তৌসিফ আহম্মেদ ওরফে সিপার। মায়ের নাম আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে আশা। তার মাও জঙ্গি সংগঠনে সম্পৃক্ত। মায়ের সাংগঠনিক নাম খাদিজা। তার একটি জমজ ভাই আছে। সেও জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত। তার ভাই উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৮ম শ্রেণির ছাত্র।

স্বীকারোক্তিতে ওই কিশোর জানায়, তাদের স্থায়ী ঠিকানা উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর সড়কের ৬২ নম্বর বাসার চতুর্থ তলার বি/৪ ফ্ল্যাট। গত এক মাস ধরে তারা সাংগঠনিক কারণে লালবাগ থানাধীন ২০৯/৫ লালবাগ রোডের পাঁচতলা একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলায় বসবাস করতো। পেশাগত জীবনে তার বাবা ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং, রবি ও কল্লোল গ্রুপে চাকরি করতো। পরে উত্তরায় আস-সাবিনা নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা করতো। ওই কিশোরের ভাষ্যমতে, তার মা পেশাগত জীবনে ‘মুসলিম এইড, বিডি’তে চাকরি করেছে। সর্বশেষ চাকরি করে ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’এ। তার বাবা ঢাকা কলেজ থেকে এবং মা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করেছে।

সুখী পরিবার থেকে জঙ্গি পরিবার

ওই কিশোর জানায়, তারা ছিল সুখী পরিবার। ২০১৪ সালে বাবা-মা হজ করে আসে। এরপর থেকেই তারা পাল্টাতে থাকে। তাদের দু’জনেরই আচার-আচরণে পরিবর্তন দেখা যায়। তখন তারা থাকতো উত্তরার বাসায়। মেজর জাহিদ ও মাইনুল ওরফে মুসার সঙ্গে তার বাবার দীর্ঘদিন আগে থেকে পরিচয় ছিল। তার বাবা, মেজর জাহিদ ও মুসাসহ উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি মসজিদে নামাজ পড়তো। তারা প্রায়ই উত্তরার লাইফ স্কুলের মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ে একসঙ্গে জগিং করতো। ওই কিশোর আরও জানায়, বাবার মাধ্যমেই মেজর জাহিদ ও মুসার সঙ্গে পরিচয় হয় তার। তাকে ও তার ভাইকে মুসা অংক, ইংরেজি ও বিজ্ঞানের বিষয় পড়াতো। উত্তরার বাসায় জাহিদের সঙ্গে রাশেদ আসতো। হজের পর তার বাবা স্বপ্নে দেখেন, এক মরুভূমির মধ্যে তিনি অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। স্বপ্নের বিষয়টি তিনি এক হুজুরকে জানান। ঐ হুজুর স্বপ্নের কথা কাউকে বলতে নিষেধ করেন। ওই কিশোর জানায়, হিজরতের পর তারা জানতে পারে মেজর জাহিদ তার বাবাকে জিহাদের দাওয়াত দিয়েছিল।

বাবার হাতে হাত রেখে বায়াত নেয় সবাই

ওই কিশোর জানায়, তারা সবাই তানভীর কাদেরীর হাতে হাত রেখে বায়াত নেয়। হিজরতে বের হওয়ার আগে উত্তরার বাসায় তারা একসঙ্গে বায়াত নেয়। তাদের পরিবারের চার জনই বায়াত গ্রহণ করে এই বলে যে, ‘আমরা এই খলিফার কাছে বায়াত নিলাম। তার আনুগত্য করবো ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত তার মধ্যে কুফরী না দেখা যায়।’ স্বীকারোক্তিতে ওই কিশোর বলে, ‘প্রায়ই তাদের বাসায় জাহিদ আংকেল, আন্টি (জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার), মেয়ে জুনায়রা ওরফে পিংকি এবং মুসা আংকেল আন্টিসহ যাতায়াত করতো। জাহিদ আংকেলের বাসা ছিলো উত্তরা ১৩ নং সেক্টরে। ওদের বাসায় আমরাও যেতাম। মুসা আংকেল, আন্টিসহ ওই বাসায় যেতো।

স্বীকারোক্তিতে করিমের ছেলে জানায়, ২০১৬ সালের এপ্রিলে আমরা হিজরত করি। আম্মু প্রথমে হিজরত করতে রাজি ছিল না। পরে একদিন হঠাৎ রাজী হওয়ায় আমরা মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা বলে হিজরতে বের হই। হিজরতের আগে আব্বু প্রায়ই বলতেন, আমরা এমন এক জায়গায় যাবো, যেখানে হয়তো বনজঙ্গল বা আটকানো অবস্থায় থাকতে হবে। হিজরতের পর আমরা পল্লবীর আফিফাদের বাসার চতুর্থ তলায় থাকতাম। বাসাটি পাঁচতলা ছিলো।’ সে আরও জানিয়েছে, পল্লবীর বাসায় থাকাকালীন চকলেট, মুসা আর রাশেদ আসতো। ‘রাশেদকে আমরা উত্তরার বাসা থেকে চিনতাম। সে পল্লবীর বাসায় চকলেট ও কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গি আকিফুজ্জামানের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়। কল্যাণপুরে অভিযানের দিনে আব্বুকে বলেছিলাম, এরা আমাদের ভাই নাকি? তখন আব্বু বলেছিল, হ্যাঁ, এরা আমাদের ভাই। মুছা আংকেলের বয়স ৩৮ বছরের মতো, মুখে দাঁড়ি, স্বাস্থ্য মাঝারী ও দেখতে শ্যামলা। সে শার্ট-প্যান্ট পরে। মুসা আংকেল প্রায়ই আমাদের বাসায় আসতো। কখনও একা, আবার কখনও চকলেট ও রাশেদ থাকতো। তারা বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়ে আব্বুর সঙ্গে কথা বলতো। জিহাদ, ঈমান ইত্যাদি নিয়ে কথা বলতো। সিরিয়ার যুদ্ধের ভিডিও দিত। আমরাও দেখতাম। দাবিক ম্যাগাজিন পড়তে দিত। দাবিক ম্যাগাজিন এর কয়েকটা বাংলাতে ছিল।’

গুলশান হামলার প্রসঙ্গে

জবানবন্দিতে ওই কিশোর বলে ‘একদিন রাশেদ আর চকলেট আংকেল এসে পল্লবীর বাসার পাশাপাশি অন্য এক জায়গায় বাসা নিতে বলে। তখন রমজান মাস ছিল। আব্বু তাদের কথামতো বসুন্ধরাতে বাসা নেন। আমরা রোজার প্রথম দিকে বসুন্ধরার বাসায় উঠি। টেনামেন্ট-৩ এর ষষ্ঠ তলার এ/৬ বাসায় উঠি। বাসাটি অ্যাপোলো হাসপাতাল এবং আইএসডি স্কুলের পাশে ছিল। আমরা বসুন্ধরা বাসায় ওঠার ৮/১০ দিন পর চকলেট আংকেল প্রথমে দুই জন তারপর তিন জনকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসে। এই পাঁচ জনের সাংগঠনিক নাম ছিল সাদ, মামুন, ওমর, আলিফ ও শুভ। এর কয়েকদিন পর তামিম আংকেল ও মারজান আংকেল আমাদের বাসায় আসে। একই দিনে জাহাঙ্গীর আংকেল, তার স্ত্রী, ছেলে শুভ এবং রিদয় আংকেল, চকলেট আংকেলের সঙ্গে আমাদের বাসায় আসে।’

সে আরও বলে, ‘জাহাঙ্গীর আংকেল আমার সঙ্গে গল্প করতো। গল্প করতে করতে একদিন বলেছিল যে, সে দুইটা ডাকাতি করেছিল। যার কাছে টাকা নিতো তাকে আহত করতো। টাকাপয়সা ডাকাতি ছিনতাই করে সংগঠনে জমা দিতো। তামিম, চকলেট, মারজানরা আমাদের বাসায় ব্যাগ নিয়ে আসে। ব্যাগে অস্ত্র ছিল। তামিম, সাদ, মামুন, ওমর, আলিফ, শুভ আমাদের বসুন্ধরার বাসাতেই থাকতো। তারা বাইরে কম বের হতো। তারা দরজা লাগিয়ে কথাবার্তা বলতো। আমাদের বাসার চারটি বেডরুমসহ সাতটি রুম ছিলো। তামিমসহ পাঁচজন এক রুমে থাকতো। আমি, আমার ভাই ও আব্বু ড্রইং রুমে থাকতাম। আম্মু ও শুভর আম্মু এক রুমে থাকতো। পাঁচজনের মধ্যে আলিফ ও ওমর অনেক অপারেশন করেছে বলে গল্প করতো। কুষ্টিয়ার একজন খ্রিস্টান বা হিন্দুকে মেরে রক্তমাখা প্যান্ট খুলে পালিয়ে আসে বলে গল্প করে। তারা আমাদের জিহাদের কথা বলতো। ট্রেনিং নিয়েছে বলেও জানায়।’

ওই কিশোরের ভাষ্য, ‘আংকেলরা বলতো যে তারা একটি বড় অপারেশন করবে। তবে কী ঘটনা ঘটাবে, তা গুলশান হামলার আগে জানতাম না। সেখানে যেদিন হামলা হয়, সেদিন বিকাল পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটার দিকে সাদ, মামুন, উমর, আলিফ ও শুভ কাঁধে একটি ব্যাগ নিয়ে বের হয়। বের হওয়ার সময় আমাদের সঙ্গে কোলাকুলি করে বলে, জান্নাতে গিয়ে দেখা হবে ইনশাল্লাহ। এর দু-এক দিন আগে জাহাঙ্গীর আংকেল তার পরিবার ও রিদয় আংকেল বের হয়ে যান। পাঁচজন চলে যাওয়ার পর তামিম আর চকলেট আংকেল বের হন। তামিম আর চকলেট আংকেল আমার আব্বুকে বলে যে, তোমরা যত তাড়াতাড়ি পার বাসা ছেড়ে চলে যাও। সন্ধ্যার আগে পারলে ভালো হয়। আমরা ইফতার করে ব্যাগ-কাপড় নিয়ে ট্যাক্সি ক্যাবে পল্লবীর বাসায় চলে আসি। পল্লবীর বাসায় গিয়ে আব্বু খুব টেনশন করছিল। বলে, এতক্ষণ হয়ে গেল অথচ কোনও নিউজ পাচ্ছি না!’

ওই কিশোর বলে, ‘আব্বু আমাদের বললো, দোয়া করো যেন ওরা ধরা না পড়ে এবং ভালো একটা অপারেশন করতে পারে। তিনি আমাদের বেশি বেশি ইসতাগফার করতে বলেন। কিছুক্ষণ পর আমি খবরে দেখলাম গুলশানে গোলাগুলি হচ্ছে। তখন আমরা বুঝলাম, হলি আর্টিজানে হামলা হচ্ছে। সকাল পর্যন্ত নিউজ দেখলাম। সকালে অপারেশনে অংশগ্রহণকারীদের ছবি প্রকাশ হলো। আব্বু আমাকে বললো, অনেক ভালো একটা অপারেশন হয়েছে এবং তোমার ভাইয়েরা শহীদ হয়েছে। তখন আমরা সবাই বলি আলহামদুলিল্লাহ।’ জবানবন্দিতে ওই কিশোর বলে, ‘হলি আর্টিজানের ঘটনার পর নিহতদের ছবি বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশ পেলে বসুন্ধরায় আমাদের বাসায় অবস্থানকারীদের নাম জানতে পারি। সাদের প্রকৃত নাম নিবরাস ইসলাম, মামুনের নাম রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, ওমরের নাম খায়রুল ইসলাম পায়েল বাঁধন, আলিফের নাম শফিউল ইসলাম উজ্জল এবং শুভ’র নাম মীর সালেহ মোবাশ্বের।’

আজিমপুরে অভিযানের বর্ণনা

দীর্ঘ জবানবন্দিতে ওই কিশোর জানায়, ‘হলি আর্টিজানে অভিযানের পর আমরা খুব খুশি ছিলাম। এর কিছুদিন পর রাশেদ আমাদের জানায় যে, চকলেটকে পাওয়া যাচ্ছে না। রাশেদ এ সময় আমাদের বাসা পরিবর্তন করতে বলে। এরপর আমরা বাসা চেঞ্জ করে রূপনগরে চলে যাই। আব্বুকে বলা হয়, আজিমপুরে আরেকটি বাসা ভাড়া নিতে। ১ আগস্ট আমরা আজিমপুরের বাসায় আসি। তারপর দুই বাসাতেই থাকতাম। কয়েকদিনের মধ্যে রূপনগর যাওয়া বন্ধ করে আজিমপুরের বাসায় থাকতাম। মারজান ও চকলেট আমাদের আজিমপুরের বাসায় থাকতো।’

ওই কিশোর বলে, ‘নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার অপারেশনে তামিমসহ আরও দুইজন মারা গেলে জাহিদ আংকেল ব্যাগসহ আমাদের বাসায় আসে। সে আমাদের জানায় যে, নারায়ণগঞ্জ থেকে একজন পালিয়েছে। সেই পুলিশকে তথ্য দিয়েছিল। তারপর থেকে জাহিদ আংকেল আমাদের বাসাতেই ছিল। সেদিন থেকে জাহিদ আংকেলের মেয়ে পিংকি আমাদের সঙ্গে থাকতো। যেদিন রূপনগরে অপারেশন হয়, সেদিন সন্ধ্যার একটু আগে জাহিদ আংকেল আমাদের বাসা থেকে রূপনগরের বাসায় যায়। সেদিন রূপনগরের অপারেশনে জাহিদ আংকেল মারা যায়।’

ওই কিশোর বর্ণনা অনুযায়ী, ‘১০ সেপ্টেম্বর (শনিবার) রাত সাড়ে সাতটার দিকে আজিমপুরের বাসায় কারা যেন নক করে। আমি দরজার ফাক দিয়ে দেখি অনেক লোক। আব্বুকে বলি আব্বু অনেক লোক। তখন আব্বুও দেখে অনেক লোক। তারপর আব্বু আম্মুকে একটি পিস্তল ও বটি দিয়ে বলে এগুলো কাছে রাখো। আব্বু বলে, কে? তখন ওরা বলে, আমরা পুলিশ। তখন আব্বু বলে আপনাদের কাছে কার্ড আছে? তখন বাইরে থেকে কার্ড দেখায়। আব্বু দরজা খোলে। ওরা বলে এত দেরি করে দরজা খুললেন কেন? আপনাদের পরিবারের সবাইকে দেখতে চাই, ডাকেন। পুলিশ আমাকে নাম জিজ্ঞাসা করলে আমি বলি রাসেল। পুলিশ আব্বুর নাম জিজ্ঞাসা করে, আব্বু বলে জামসেদ। পুলিশ পিংকির নাম জিজ্ঞাসা করে। পুলিশ আব্বুর ফোন নিয়ে নেয়। তারপর পুলিশ আমাদের বাসা চেক করতে চায়। আব্বু ডানদিকে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ আব্বুকে ধরে ফেলে। আমি পুলিশকে ধাক্কা দেই। তখন তিন পুলিশ আমাকে ধরে ফেলে। আমাকে পুলিশ পাশের রুমে নিয়ে যায়। তখন আমার আব্বু ওই রুম হতে বের হয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। তখন পুলিশ বলে, এদের কাছে অস্ত্র আছে। পুলিশ দরজা ভেঙে বের হওয়ার চেষ্টা করলে আব্বু বটি দিয়ে এদিক ওদিক ঘোরাতে থাকে। তখন পুলিশ আমাকে সামনে ধরে। আমি বলি, আব্বু আমার লাগবে। তখন আব্বু বলে লাগলে হয় শহীদ হবা, না হলে আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দেবে। তারপর একজন পুলিশ আমাকে বারান্দায় নিয়ে যায়। এর মাঝে আন্টিরা মরিচের গুড়া ছিটিয়ে দেয়। পুলিশ তোষক দিয়ে আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করে। এরপর অনেক পুলিশ আসে । তারা দরজা ভেঙে আমাকে এবং আমার সঙ্গে থাকা পুলিশদের উদ্ধার করে। এর আগে প্রিয়তি আন্টি চাকু দিয়ে একজন পুলিশকে আঘাত করে এবং আমি চাকু দিয়ে একজনকে আহত করি। অনেক গোলাগুলি হয়। পুলিশ সদস্যরা আমাদের ও আহত পুলিশদের উদ্ধার করে নিয়ে আসার সময় দেখি, আব্বুর গলাকাটা এবং প্রিয়তি আন্টির গায়ে রক্ত। আম্মুকে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় নড়াচড়া করছে। আব্বু সম্ভবত সুইসাইড করেছে। আব্বু আমাদের বলতো যদি কখনও ধরা পড়ি তখন সুইসাইড করবো। পুলিশ আমাদের বাসা হতে চারটি পিস্তল ও গুলিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র উদ্ধার করে। আমার আরেক ভাই আমাদের সঙ্গে ছিল না। আব্বু তাকে রূপনগরের বাসা থেকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেয়। তবে কোথায় পাঠায়, জানি না।’