29-09-16-bd-pm-sheikh-hasinas-birthday-reception_virginia-9সংকটের সময় প্রবাসীদের সাহসী ভ‍ূমিকায় প্রবাসীদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রবাসীদের কাছে আমার অনেক ঋণ। বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় বিকেলে ওয়াশিংটনের ভার্জিনিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সব্যসাচী লেখক কবি শামসুল হকের মৃত্যুতে ওয়াশিংটনের ভার্জিনিয়ার টাইসন কর্ণারের রিটজ কার্লটন হোটেলের বলরুমে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্বাবধায়ক সরকারের সময় দেশে ফেরার প্রাক্কালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রায় একশত প্রবাসী আমার সঙ্গে দেশে গিয়েছিলেন। প্রবাসীদের সাহসী ভূমিকায় আজো আমি বেঁচে আছি। এখনো আল্লার রহমতে দেশের সেবা করে যাচ্ছি। জন্মদিনে কেক কাটার কথা থাকলেও সব্যসাচী লেখক কবি শামসুল হকের মৃত্যুর কারণে কোনো আনুষ্ঠানিকতা করেন নি। ওয়াশিংটনের কর্মীদের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করার কথা থাকলেও তা করেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠিক বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠানস্থলে এসে উপস্থিত হন।

মতবিনিময় সভায় প্রায় পঞ্চাশ মিনিট বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারো বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর খুনি হিসাবে উল্লেখ করে বলেন। হত্যা ক্যু ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছিলেন এবং যতদিন ক্ষমতায় ছিলেন হত্যা ক্যু ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা আকঁড়ে ধরে রেখেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে আইনের শাষন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। অপরাধীদের বিচার হচ্ছে। জতির জনকের হত্যার বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হবে। দেশ বিরোধীদের ঠাঁই আর স্বাধীন বাংলাদেশে হবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে দেয়ার অভিপ্রায়ে দেশের ৪ হাজার ৫শ’ ৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। বিদ্যু‍ৎখাতে আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎখাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে জাতীয় গ্রিডে অতিরিক্ত ৬ হাজার ৩২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযোজন, যার ফলে বিদ্যুতের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৭ শতাংশ থেকে ৬২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

শিক্ষাখাতে সাফল্যের কথা উল্লেখ প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো- শতভাগ ছাত্রছাত্রীর মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম। নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি ব্যবস্থা। বর্তমান ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নতুন করে জাতীয়করণ করেছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণ করা হয়েছে।

১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিশুর শতকরা হার ছিল ৬১, বর্তমানে তা উন্নীত হয়েছে শতকরা ৯৭.৭ ভাগে। শিক্ষার সুবিধাবঞ্চিত গরিব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন-২০১২ প্রণয়ন করা হয়েছে, গঠন করা হয়েছে ‘শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট’।

প্রায় পঞ্চাশ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রবাসী শ্রমিকদের উন্নয়ন, শিল্প ও বাণিজ্য খাতে সফলতা অর্জনসহ নানা বিষয়ে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসীদেরকে আরো বেশি করে দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবার আহ্বান জানান।