06-10-16-military-firing-line_mirpur-stadium-2বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে মিরপুরে হঠাৎ করেই বিকট আওয়াজে বোমার বিস্ফোরণ! কিছুক্ষণের মধ্যে খেলোয়াড়রা জিম্মি! জরুরি তলবে মাঠে নামে সেনাবাহিনী। জিম্মি হওয়া খেলোয়াড়দের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন সেনা সদস্যরা। কয়েক মিনিট ধরে চলে গোলাগুলি। কমান্ডো স্টাইলে ‘জিম্মিকারীদের’ ওপর আক্রমণ করে সেনাবাহিনী।‘জিম্মিদশা’ থেকে মুক্ত করে খেলোয়াড়দের। এরপর একাডেমিতে অবস্থিত খেলোয়াড়দের হেলিকপ্টারে করে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয়।

এটা সিনেমার কোনও দৃশ্য নয়। বৃহস্পতিবার মিরপুর স্টেডিয়ামে এটাই ছিল সেনাবাহিনীর আধঘণ্টা ধরে চলা কমান্ডো মহড়ার অংশ। সেনাবাহিনীর আধঘণ্টার এ মহড়া একদিকে যেমন ছিল শ্বাসরুদ্ধকর, আরেক দিকে হয়ে ওঠে মনোমুগ্ধকর। মহড়ায় দুটি হেলিকপ্টারের সাহায্যে প্রায় ৫০ জন প্যারা কমান্ডো সদস্য দুই ধাপে বিসিবি একাডেমিতে প্রবেশ করেন। এরপর তারা তাদের কমান্ডো অভিযান চালান। এই মহড়ার মূল উদ্দেশ্য ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টেস্ট সিরিজে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। যাতে এই সিরিজটি সফলভাবে আয়োজন করা সম্ভব হয়। যেকোনও নাশকতা মোকাবিলা করে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবে সেনাবাহিনীও। যেকোনও মুহূর্তে পুলিশকে সহায়তা দিতে সেনবাহিনী প্রস্তুত থাকবে। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে জরুরি প্রয়োজনে ৩০ মিনিটের মধ্যে স্টেডিয়াম চত্বরে উপস্থিত হবেন এই কমান্ডোরা। বিশ্ববাসীর আস্থা ধরে রাখা ও আয়োজক হিসেবে সফলতার মুকুটে আরও একটি পালক যুক্ত করার লক্ষ্যেই বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের দায়িত্বে যুক্ত থাকবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

এব্যাপারে ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটেলিয়ান এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এম ইমরুল হাসান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশ ও জাতির যেকোনও প্রয়োজনে অবদান রাখতে সর্বদা অঙ্গিকারবদ্ধ। বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে যেকোনও দায়িত্ব প্রদান করলে, সেটা সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমরা সব সময় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকি। তারই ধারাবাহিকতায় চলমান বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ক্রিকেট সিরিজের নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একমাত্র বিশেষায়িত ফোর্স ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটেলিয়ন, বাংলাদেশ আর্মি এভিয়েশন এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এবং সাথে অন্যান্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে একটা সার্বিক মহড়া এই মাত্র অনুষ্ঠিত হলো।’ বিশেষ কোনও পরিস্থিতির উদ্ভব হলেই কেবল সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাঠে প্রবেশ করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা কথা আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই সেটা হলো এই সিরিজ সংক্রান্ত এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত যেকোনও প্রয়োজনে ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটেলিয়ন অর্থাৎ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা প্রস্তুত আছে।’

প্রসঙ্গত, ইসিবি বিসিবির কাছে একটি সিকিউরিটি পরিকল্পনা চেয়েছিল এবং বাংলাদেশ সরকার ইংল্যান্ড দলকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিকিউরিটির নিশ্চয়তা দিয়েছিল। সে অনুযায়ী নিরাপত্তা ইস্যুতে কাজ করছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। উল্লেখ্য, আগামী ৭ ও ৯ অক্টোবর মিরপুরে অনুষ্ঠিত হবে একদিনের আন্তর্জাতিক সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচ। ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম হবে তৃতীয় ও শেষ একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এরপর দুই দল অংশ নেবে টেস্ট সিরিজে। ১৪-১৫ ও ১৬-১৭ অক্টোবর চট্টগ্রামের এম. এ. আজিজ স্টেডিয়ামে দুটি দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচে অংশ নেবে সফরকারীরা। ২০ অক্টোবর থেকে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হবে প্রথম টেস্ট। ২৮ অক্টোবর থেকে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ঢাকার মিরপুরে।