who-logo1

মশাবাহিত জিকা ভাইরাস পুরো এশিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।এরইমধ্েয সিঙ্গাপুরে কয়েকশ মানুষের দেহে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের তথ্য এসেছে। থাইল্যান্ডে জিকা সংক্রমণের কারণে অপুষ্ট মাথা নিয়ে শিশু জন্মের অন্তত দুটি ঘটনা ঘটেছে। সোমবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত বিশ্বের ৭০টি দেশে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্েয ১৯টি দেশ এশিয়া-প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের।ফিলিপিন্সের ম্যানিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বার্ষিক সভায় এর মহাপরিচালক মার্গারেট চান বলেছেন, বিজ্ঞানীরা এখনও এই ভাইরাসকে ঠেকানোর পথ খুঁজছেন। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল, তারা এখনও অনেক জটিল প্রশ্নের উত্তর জানতে পারেননি।এমনিতে জিকা ভাইরাস প্রাণঘাতী না হলেও গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে এর ফল হতে পারে মারাত্মক। তার শিশুর জন্ম হতে পারে অপুষ্ট মস্তিষ্ক বা বড় ধরনের ত্রুটি নিয়ে।

জিকা বৃত্তান্ত: ১৯৪৭ সালে উগান্ডায় প্রথম জিকা ভাইরাস ধরা পড়ে। এতে সচরাচর মৃত্যুর ঘটনা দেখা যায় না। তবে এর লক্ষণও সবসময় স্পষ্ট থাকে না।প্রতি পাঁচজন রোগীর মধ্যে একজনের মধ্যে হালকা জ্বর, চোখে লাল হওয়া বা কালশিটে দাগ পড়া, মাথা ব্যথা, হাড়ের গিঁটে ব্যথা ও চর্মরোগের লক্ষণ দেখা যায়।বিরল ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি গিলিয়ান-ব্যারি সিনড্রোমেও ভুগতে পারেন; এর ফলে সাময়িক পক্ষাঘাত কিংবা ‘নার্ভাস সিস্টেম ডিজঅর্ডারের’ মতো ঘটনা ঘটতে পারে।গর্ভবতী মা মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হলে তার অনাগত শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হতে পারে, মস্তিষ্কের গঠন থাকতে পারে অপূর্ণ। এ রোগকে বলে মাইক্রোসেফালি।এ ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক বা ওষুধ নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রাম ও বেশি করে তরল খাবার খেতে পরামর্শ দেয়া হয়।জিকা ভাইরাস ছোঁয়াচে নয়। তবে যৌন সংসর্গের মাধ্যমে জিকা সংক্রমণের কয়েকটি ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সে ধরা পড়েছে।

গত বছর ব্রাজিল ও আশেপাশের দেশগুলোতে জিকার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর এ বছর ফেব্র“য়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জিকার কারণে বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে।গত মার্চে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চট্টগ্রামের এক ব্যক্তির রক্তের পুরনো নমুনায় জিকা ভাইরাসের অস্তিত্ব পেয়েছে জাতীয় রোগ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইইডিসিআর। তবে জিকার বিষয়টি জানার আগেই তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। সেপ্টেম্বরের শুরুতে সিঙ্গাপুরে প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকায় জিকার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্তদের মধ্েয ১৯ জন বাংলাদেশিও ছিলেন। তাদের সবাই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে কর্মস্থলে ফিরে গেছেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম গত ২৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে বলেন, এই মুহূর্তে দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী না থাকলেও আশপাশের বিভিন্ন দেশে মশাবাহিত এ রোগ ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশেও ঝুঁকির মধ্েয রয়েছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ভাইরাস ঠেকাতে হলে মশা নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে হবে। আর এ কাজটি করতে হবে প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে; কারণ এডিস মশা ঘরের মধ্যে ফুলদানি বা পাত্রে জমানো পরিষ্কার পানিতে বংশবিস্তার করে।