18-11-16-khaleda-zia-3

নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।একই সঙ্গে সব দলের ঐক্যের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের খুঁজে বের করতে পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠনেরও কথা বলেছেন তিনি। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সৎ, সাহসী, অবাধ ও সুষ্ঠু স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের বিকল্প নেই। এ ছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনের যোগ্যতার কথাও বর্ণনা করেন তিনি।

একজন নারীসহ চারজন কমিশনার নিয়োগের প্রস্তাব করেন খালেদা জিয়া।এ ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য নির্বাচন কমিশনারদের হতে হবে সর্বজন শ্রদ্ধেয়, সৎ,অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও দলনিরপেক্ষ। বাছাই কমিটির কাছে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল অথবা স্বাধীনতার পর থেকে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো দুজন করে নাম প্রস্তাব করতে পারবে। সেখান থেকে বাছাই কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। তবে চূড়ান্ত মনোনয়নের পর কেউ যদি দায়িত্ব পালন করতে অসম্মতি প্রকাশ করেন, তবে একই প্রক্রিয়ায় আবারও বাছাই করতে হবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করেন তিনি।এ সময় ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার দাবি জানান খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আঠারো বছর বয়সী সব নাগরিককে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রবাসীদেরও এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন তিনি।নির্বাচনকালীন প্রশাসন যাতে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে সে জন্য নির্বাচন কমিশনকে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। ভোটকেন্দ্রে ছবিসহ ভোটার তালিকা সরবরাহ করতে হবে। যাতে কেউ জাল ভোট দিতে না পারে। যাঁদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে, তাঁরা যেন কোনো বাধা ছাড়াই ভোট দিতে পারেন, সে ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীর নিযুক্ত এজেন্টকে রেখে অবাধে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভোট গণনা শুরু করতে হবে। কোনো ধরনের বিরতি ছাড়াই ভোট গ্রহণ চলবে। নির্বাচনে দলনিরপেক্ষ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষক রাখতে হবে।নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ছাড়া এসব বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন খালেদা জিয়া।

এ ছাড়া নির্বাচনকালীন একটি সহায়ক সরকার গঠন করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে পরবর্তীকালে বিস্তারিত প্রস্তাব তুলে ধরা হবে। খালেদা জিয়া বলেন, এই কমিশন হতে হবে সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অথবা স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিটি দলের ঐকমত্েযর ভিত্তিতে।সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের কয়েকটি ধারাও সংশোধনের প্রস্তাব করেছেন সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির নেত্রী।

বিএনপির ভাষায় ‘সরকারের আজ্ঞাবহ’ কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ফেব্র“য়ারিতে। এরপর যে নির্বাচন কমিশন হবে তার অধীনেই ২০১৯ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।২০১২ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ‘সার্চ কমিটির’ মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। এবারও সেভাবেই রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন করে দেবেন বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ইতোধ্যে জানিয়েছেন।কাজী রকিব নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের অধীনে অধিকাংশ নির্বাচনেই অংশ নেয়নি বিএনপি। দলটি সব রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে নতুন ইসি গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে।সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে ‘বিতর্কিত’ আখ্যায়িত করেন এবং বলেন বিগত নির্বাচনগুলোতে ভোট দিতে না পেরে’ জনগণ ক্ষুব্ধ।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ভাষায়, সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন জনগণ চায়, যেখানে তারা নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারবেন এবং তার ফলাফল কেউ বদলে দিতে পারবে না’।আর এ জন্য একটি ‘স্বাধীন ও শক্তিশালী’ নির্বাচন কমিশন গঠনের ‘বিকল্প নেই’ বলে তিনি মন্তব্য করেন।নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া ছাড়াও প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা কেমন হওয়া উচিৎ- সে বিষয়ে নিজের প্রস্তাব তিনি তুলে ধরেন।বৃহস্পতিবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদার এসব প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয় বলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা জানিয়েছেন।