প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে যান্ত্রিক ত্র“টির ঘটনায় করা মামলায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের দুই আসামির সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম জাকির হোসেন টিপু এ আদেশ দেন।রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া দুজন হলেন বাংলাদেশ বিমানের প্রকৌশলী মো. রোকনুজ্জামান ও টেকনিশিয়ান সিদ্দিকুর রহমান। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম (সিটি) বিভাগের পরিদর্শক মাহবুবুল আলম আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছিলেন।

গত ২৭ নভেম্বর হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানের ইঞ্জিনে ত্র“টি দেখা দেয়, যার কারণে সেটি তুর্কমিনিস্তানের রাজধানী আশখাবাদে জরুরি অবতরণ করে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, এটা ‘মানবসৃষ্ট’। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই দফায় প্রকৌশল বিভাগের নয়জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এ ঘটনায় ফৌজদারি মামলা করার ব্যাপারে সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।কয়েক দিন আগে এ ঘটনায় ঢাকা বিমানবন্দর থানায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রকৌশল বিভাগের তিন কর্মকর্তাসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অবহেলা ও ‘অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রম’-এর অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।এজাহারভুক্ত এই নয় কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

২২ ডিসেম্বর এ মামলায় গ্রেপ্তার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাত কর্মকর্তার সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। আর অপর দুই আসামি (মো. রোকনুজ্জামান ও সিদ্দিকুর রহমান) আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠান। গত ২৭ নভেম্বর হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং যান্ত্রিক ত্র“টির কারণে তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাত বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়। ইঞ্জিন অয়েলের ট্যাংকের একটি নাট ঢিলে থাকায় ওই বিপত্তি ঘটে।এর পেছনে নাশকতা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে বিমান মন্ত্রণালয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ তিনটি তদন্ত কমিটি করে।

প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে ঘটনার তিন দিনের মাথায় ছয় কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আরও তিন প্রকৌশলী সাময়িক বরখাস্ত হন।এরপর মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় বরখাস্ত নয়জনকে আসামি করে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(গ) ধারায় মামলা করেন বিমানের পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট) এস এম আসাদুজ্জামান।মামলার এজাহারে বলা হয়, বিভাগীয় তদন্তে ওই নয়জনের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি নিয়া অবহেলামূলক আচরণ করতঃ অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রম করার প্রমাণ পাওয়া গেছে।উড়োজাহাজের এই ‘বি’ নাটটি ঢিলা (লাল পাইপের) পাওয়া গিয়েছিল; পাশের অয়েল সেন্সর লাইনে (কালো পাইপ) কাজ হয়েছিল তার কয়েক দিন আগে।উড়োজাহাজের এই ‘বি’ নাটটি ঢিলা (লাল পাইপের) পাওয়া গিয়েছিল; পাশের অয়েল সেন্সর লাইনে (কালো পাইপ) কাজ হয়েছিল তার কয়েক দিন আগে।মামলার দুই দিনের মাথায় গত ২১ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সাত আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন দিন তাদের আদালতে হাজির করা হলে সবাইকে সাত দিন করে রিমান্ডে পাঠায় আদালত।এরা হলেন – বিমানের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (প্রোডাকশন) দেবেশ চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার (পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) এস এ সিদ্দিক, ভারপ্রাপ্ত মুখ্য প্রকৌশলী (এনসিসি) বিল্লাল হোসেন, প্রকৌশলী কর্মকর্তা লুৎফর রহমান, সামিউল হক, মিলন চন্দ্র বিশ্বাস, জাকির হোসাইন।

মামলার বাকি দুই আসামি সিদ্দিকুর ও রোকনুজ্জামান ওইদিনই হাকিম আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। মহানগর হাকিম স্নিগ্ধা রানী চক্রবর্তী শুনানি করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।অপর সাত আসামিকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনে সেদিন সিদ্দিকুর ও রোকনুজ্জামানের জন্যও রিমান্ডের আবেদন করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। সেই আবেদনের শুনানি হয় বুধবার। আদালত পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মিরাশ উদ্দিন বলেন, দুই আসামিকে ১০ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হয়েছিল। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম জাকির হোসেন টিপু সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।