রাজশাহীর তানোর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিলকুমারী বিলের অভ্রান্তরীন মুক্ত জলাশয় দীর্ঘ ৮ বছর ধরে ইজারা ছাড়াই মাছ নিধন করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার বিলের প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার মাছ ধরে রাতেই অন্যত্র তা বিক্রি করে সকালে মেলা স্থলে দেদারসে পুকুরের মাছ এনে মেলা বসিয়ে তা বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এবারো সরকারের ইজারা মূল্য পরিশোধ করা হয় নি। ফলে ১১৭৫ বিঘার জলাশয় হতে বছরে ২০ লক্ষ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিলকুমারী বিলের ধারে তানোরের ডাকবাংলা ফুটবল মাঠে এ মেলা বসে। মেলা স্থলের মাঠ ঘিরে তৈরি করা হয়েছিল প্যান্ডেল ও এক প্রান্তে মঞ্চ। সকালে ওই মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাঃ শওকাত আলী। এসময় উপস্থিত ছিলেন তানোর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিলূফা ইয়াসমিন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরাফাত সিদ্দিকী প্রমূখ। মেলায় এবার প্রায় ১৯ টি আড়ত বসেছিল। প্রতিটি আড়ত ঘিরে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সেখানে নিলামে হয়েছে মাছ বিক্রি। দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষ ও স্থানীয় খুচরা বিক্রেতারা মাছ কিনেছেন। খুচরা বিক্রেতাদেরও মেলায় মাছ বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ মেলায় উপজেলার বিভিন্ন পুকুর থেকে মারা মাছ আড়তগুলোতে বিলের মাছ বলে বিক্রি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০০৮ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে মৎস্য মন্ত্রণালয়কে বিল ইজারার বিধি হস্তান্তর করে পরিপত্র প্রদান করা হয়। পরে পরিপত্রে ‘মা’ মাছ সংরক্ষণের জন্য তানোর উপজেলার বিলকুমালী বিলের বিলজোয়ানী ও ধানতৈড় মৌজার ২ একর মুক্ত জলাশয়ে অভয়াশ্রম স্থাপনের জন্য কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। সেখানে মাছের অভয়াশ্রম স্থাপনের পর বিলকুমারী বিলের বিলজোয়ানী ও ধানতৈড় মৌজার ১১৭৫ বিঘা অভ্যান্তরীন মুক্ত জলাশয় ইজারা প্রদানের জন্য ২০১০ সালে মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়।

পরিপত্রে বলা হয়, নিবন্ধনকৃত মৎস্যজীবিকে ১ বিঘা জলাশয়ে মাছ ধরার জন্য ১ হাজার ৫০০ টাকা ইজারা মূল্য দিতে হবে। তবেই ওই জলাশয়ে সারা বছর মাছ ধরা যাবে। সেই মোতাবেক উপজেলা মৎস্য অফিস জলাশয় ইজারা কমিটি তৈরি করে প্রতি বছর শতকরা ১০ পারসেন্ট মূল্য বৃদ্ধি করে ইজারা আহবান করবেন। ইজারা মূল্য পরিশোধের পর নিবন্ধনকৃত মৎস্যজীবিরা মাছ ধরতে পারবেন। তবে অভিযোগ রয়েছে এসব বিধি নিষেধ গোপন রেখে উপজেলা মৎস্য অফিস স্থানীয় মৎস্যজীবিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিলের অভ্যান্তরীন মুক্ত জলাশয় ও দুটি অভয়াশ্রমের ‘মা’ মাছ নিধনের জন্য প্রতি বছর মেলা বসান।
বিল কমিটির সভাপতি দর্শনাথ হলদার মেলায় পুকুরের মাছের অধিপত্য বিষয়টি অস্বীকার করে প্রতিবেদকে জানান, এবার তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন যাতে অন্য কেউ পুকুরের বা অন্য কোন জায়গার মাছ মেলা স্থলে এনে বিক্রি বা প্রদর্শন না করতে পারে। এত কিছুর পরেও কেউ অসৎ কাজে জড়ালে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। কিন্তু সরকারের ইজারা মূল্য পরিশোধ ছাড়াই মাছ ধরার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

এ বিষয়ে সদ্য যোগদানকারী তানোর সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিলুফা ইয়াসমিন জানান, মন্ত্রণালয় থেকে বিলের অভ্যান্তরীন মুক্ত জলাশয় ইজারার পরিপত্র দেখে তিনি মৎস্য অফিসকে অবহিত করেন। পরে সরকারি বিধি মোতাবেক ইজারা মূল্য পরিশোধের জন্য চিঠি দেন। এনিয়ে উপজেলা মৎস্য অফিসার আরাফাত সিদ্দিকী জানান, ২০০৮ সাল থেকে এই মেলা চলছে। বাংলাদেশে আর কোথাও বিলের মাছের এমন মেলা বসে না। তবে বিলকুমারী বিলের অভ্যান্তরীন মুক্ত জলাশয় ইজারা প্রদানের পরিপত্র সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন না। একারণে বিগত বছরগুলোতে মৎস্যজীবিরা ইজারা ছাড়াই মাছ নিধন করেছেন। তবে, গতকাল বুধবার মৎস্যজীবিরা ইজারা মূল্য পরিশোধ করতে রাজি হয়েছেন। একারণে মাছ ধরার অনুমতি দেয়া হয়।

মিজানুর রহমান, তানোর (রাজশাহী) সংবাদদাতা