বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিন ইজতেমা মাঠে লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।শুক্রবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে জুমার জামাত শুরু হয়। ওই নামাজের ইমামতি করেন ঢাকার কাকরাইল মসজিদের মাওলানা মো. ফারুক। বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে টঙ্গীর তুরাগ পাড়ে শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) জুমার নামাজ আদায় করে লাখো মুসল্লি। ¯্রষ্টার সন্তুষ্টি কামনায় আমিন আমিন ধ্বনি ওঠে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জনসমুদ্র থেকে।জুমার নামাজে ইমামতি করেন ঢাকার কাকরাইল মসজিদের খতিব মওলানা মো. ফারুক হোসেন। এদিন দুপুর পৌনে ২টার দিকে নামাজের জামাত শুরু হয়।রাজধানী ঢাকা এবং এর আশেপাশের এলাকা থেকে জিকির কণ্ঠে শিশু, যুবক, বৃদ্ধরা দলে দলে আসেন তুরাগ পাড়ে। মূল ময়দানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মুসল্লিরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, ফুটওভার ব্রিজ ও অলিগলিতে পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ, চাদর ও পলিথিন বিছিয়ে নামাজ আদায় করেন। ভোরবেলা (বাদ ফজর) ভারতের মওলানা ওবায়দুল্লাহ্ খোরশেদ আম বয়ান পেশ করেন। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় ৫২তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপ।

গত বুধবার (১১ জানুয়ারি) দেশের ১৭টি জেলা থেকে ইজতেমা ময়দানে জেলাওয়ারি খিত্তায় অবস্থান করতে শুরু করেন মুসল্লিরা। অন্যদিকে মূল মঞ্চের পূর্ব পাশে টিন এবং শামিয়ানা দিয়ে তৈরি তাশকিল কামরায় অবস্থান করছেন অর্ধশতাধিক দেশ থেকে আসা মেহমানরা। তিন দিনে তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বিরা আখলাক, ঈমান ও আমলের উপর বয়ান করবেন। রোববার (১৫ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম ধাপ।বিশ্ব ইজতেমার মুরব্বি গিয়াস উদ্দিন জানান, প্রথম ধাপে ইজতেমায় অংশ নিয়েছে ১৭টি জেলার মুসল্লিরা। এগুলো হলো ঢাকা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, মানিকগঞ্জ, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, গাজীপুর, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, গোপলগঞ্জ, শরীয়তপুর, সাতক্ষীরা ও যশোর। দ্বিতীয় ধাপে অংশ নেবে ৩৩ জেলার মুসল্লি।ইজতেমায় যোগদানকারী ছাড়াও জুমার নামাজে অংশ নিতে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশ এলাকার লাখ লাখ মুসল্লি ভোর থেকেই ইজতেমাস্থলে যেতে শুরু করেন।সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুরের আগে ইজতেমা মাঠমুখী টুপি-পাঞ্জাবী পরা মানুষের ঢল নামে। হেঁটে, বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠে আসতে থাকেন। বেলা ১২টার দিকে ইজতেমা মাঠ উপচে আশপাশের খোলা জায়গাসহ সবস্থান জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মাঠে স্থান না পেয়ে অনেকে মহাসড়ক ও অলি-গলিসহ যেখানে পেরেছেন হোগলা পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে নামাজে শরিক হয়েছেন।ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।কাপাসিয়া থেকে আসা আব্দুল জলিল বলেন, বড় জামাতে নামাজ আদায় করা অনেক ফজিলত। তাই জুমার নামাজ আদায় করার জন্য ভোরেই বাড়ি থেকে বের হয়েছি।

ঢাকা থেকে আসা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমি তাবলীগ জামাতে যোগ দিতে নয়, দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজে অংশ নিতে টঙ্গীর ইজতেমায় এসেছি। এত লোকের সাথে আমার নামাজটা বা মোনাজাতটা যদি আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়।বিশ্ব ইজতেমায় এবার এখন পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার বিদেশি মুসল্লি অংশগ্রহণ করলেও মিয়ানমার থেকে কেউ আসেননি বলে আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। গাজীপুর জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মো. মোমিনুল ইসলাম জানান, এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত শতাধিক দেশ থেকে ছয় হাজার ৮৮৭ জন বিদেশি মুসল্লি ইজতেমায় যোগ দিয়েছেন।এর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া, পানামা, মিসর, ওমান, সুদান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, কাতার, অস্ট্রেলিয়া, ব্র“নাই, কানাডা, কম্বোডিয়া, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, ইরান, জাপান, মাদাগাস্কার, মালি, সেনাগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা, তাঞ্জানিয়া, ত্রিনিদাদ, রাশিয়া, আমেরিকা, বেলজিয়াম, ক্যামারুন, চীন, ফিজি, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, ফিলিপিন্স, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, কোরিয়া, আলজেরিয়া, ইরাক, ফিলিস্তিন, কুয়েত, মরক্কো, কাতার, সোমালিয়া, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইন, জর্দান, মৌরিতানিয়া, দুবাইসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের মুসল্লিগণ রয়েছেন বলে তিনি জানান।ইজতেমার আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বী মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, মুসল্লিদের এ সংখ্যা আরও বাড়বে। ইজতেমার মূল বয়ান উর্দুতে হলেও তাৎক্ষণিকভাবে বিদেশিদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় আলাদাভাবে তা তরজমা করা হচ্ছে। ইজতেমা ময়দানের উত্তর পাশে বিদেশি মেহমানদের জন্য পৃথক নিবাস নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।বিশ্ব ইজতেমার বিদেশি মুসল্লিদের দায়িত্বে থাকা মুরুব্বী মো. আনিসুর রহমান জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইজতেমার মুরুব্বীদের পরামর্শ অনুযায়ী এবার রোহিঙ্গাদের বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বুধবার (১১ জানুয়ারি) থেকে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে এসে চটের তৈরি সুবিশাল শামিয়ানার নিচে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। শুক্রবার লাখো মুসল্লির সঙ্গে জুমার নামাজে অংশ নিতে অনেকে আগেই ইজতেমার ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন। এবার দেশের ১৭টি জেলা ও অর্ধশতাধিক দেশ থেকে আগত মুসল্লিরা অংশ নিয়েছেন বিশ্ব ইজতেমায়। ইতোমধ্যে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের অংশগ্রহণে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে পুরো ইজতেমা ময়দান। জুমার নামাজে অংশ নিতে ভোর থেকে গাজীপুরসহ আশপাশের জেলা থেকে পায়ে হেটে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমার মাঠে হাজির হচ্ছেন।

তিন দিনব্যাপি চলবে পর্যায়ক্রমে শীষস্থানীয় মুরুব্বীদের বয়ান। আগামী রোববার (১৫ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে ইজতেমার প্রথম ধাপের। বিভিন্ন জেলার তাবলিগ জামাতের মুসল্লিরা ইজতেমা মযদানে এসে নিজ নিজ জেলাওয়ারি খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। বিদেশি মেহমানদের জন্য নির্মিত তাশকিল কামরার টিনের শামিয়ানার পূর্ব পাশে স্থাপিত মুল মঞ্চ। সেখান থেকে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ স্থানীয় মুরুব্বীরা আরবি ও উর্দুতে বয়ান করবেন এবং মুসল্লিদের সুবিধার্থে তা বাংলায় অনুবাদ করা হবে। এছাড়াও এসব বয়ান ইংরেজি, ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করা হবে।ইজতেমা এলাকায় গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সংযোগ, মুসল্লিদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাসহ সরকারি- বেসরকারি দফতরের বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে ইজতেমা ময়দানে গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য কর্মকর্তারা মাঠে অবস্থান করছেন।প্রথম ধাপে ইজতেমায় অংশ নিয়েছে দেশের ১৭টি জেলার মুসল্লি। দুই ধাপে অংশ নেবে ৩৩ জেলার মুসল্লি। আগামী ১৫ জানুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম ধাপ। ফের ২০ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপ। একই ভাবে আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে ২২ জানুয়ারি সমাপ্তি ঘটবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার।