একুশে পদক প্রাপ্ত দেশের খ্যাতিমান প্রবীণ ফটো সাংবাদিক আফতাব আহমেদ হত্যা মামলা দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দ্রুত রায় কার্যকর এবং ফটো সাংবাদিক জিয়া ইসলামকে গাড়ী চাপা দেওয়া চালক কল্যান কোরাইয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানব বন্ধন করেছ বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন। রবিবার বাংলাদেশ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দুপুর ১২টায় এ মানব বন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয় ।

এ সময় ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম মহসিন বলেন, প্রবিন ফটো সাংবাদিক আফতাব আহমেদ হত্যা মামলা ২ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো মামলার কোনো কূলকিনারা হয়ানি। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের সকলের প্রিয় আফতাব ভাইকে নিজ বাসায় দুর্বৃত্তরা হত্যা করে । অপরদিকে প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক জিয়া ইসলামকে গাড়ী চাপা দেওয়া চালক কল্যান কোরাইয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানান।

সংগঠনের সাবেক সেক্রেটারি নুরুদ্দিন আহমেদ নুরু বলেন আফতাব আহমেদ হত্যা মামলা দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দ্রুত রায় কার্যকর ও জিয়া ইসলামকে গাড়ী চাপা দেওয়া চালক কল্যান কোরাইয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি আদায়ে কালক্ষেপন করা হলে আন্দোলনে ডাক দেয়া হবে। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্ববান জানান।

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন , সিনিয়র সাংবাদিক বুলবুল আহমেদ, সলিমুল্লাহ সেলিম, সানাউল হক, ফিরোজ চৌধূরি, গোলাম মোস্তফা, ইন্দ্রজিত কুমার ঘোষ, নাসিম শিকদার, বাবুল তালুকদার প্রমুখ।মানব বন্ধনে অর্ধশতাধিক ফটোসাংবাদিক উপস্থিত হন।

উল্লেখ্য ২০১৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর পশ্চিম রামপুরা ওয়াপদা রোডে ৬৩ নম্বরের নিজ বাসায় খুন হন ফটোসাংবাদিক আফতাব আহমেদ। পরদিন সকালে তার হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ৪ তলার ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় আফতাব আহমেদ একাই বসবাস করতেন। লাশ উদ্ধারের সময় তার বাসার আলমারিসহ প্রায় সবকটি আসবাবপত্র তছনছ অবস্থায় পাওয়া যায়। লুট করা হয় নগদ টাকা, দুটি বাক্সে ভরা তার কর্মজীবনে ব্যবহৃত সবকটি ক্যামেরা ও দুর্লভ ছবি।

সেদিনই তার শ্যালক মনোয়ার আহমদ সাগর রামপুরা থানায় আফতাব আহমেদের ব্যক্তিগত গাড়িচালক কবিরকে প্রধান আসামি করে ও অজ্ঞাত কয়েক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত চলাকালে আফতাবের গাড়ি চালক হুমায়ুন কবীরসহ ৫জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করার সময় বাধা দেয়ায় আফতাবকে হত্যা করা হয় বলে তদন্তকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

আলোকচিত্র সাংবাদিকতায় অনন্য অবদানের জন্য ২০০৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন আফতাব আহমেদ। ১৯৬৪ সালে দৈনিক ইত্তেফাক দিয়ে তার আলোকচিত্র সাংবাদিকতার শুরু। ২০০৬ সালে কর্মজীবন থেকে অবসর নেন তিনি। আফতাব আহমেদ তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ, ’৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুহত্যা, স্বৈরশাসনসহ সবকটি আন্দোলন-সংগ্রামে সাহসিকতার সঙ্গে ছবি তুলেছেন। কর্মজীবনে আফতাব আহমেদ সুনামের সঙ্গে বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। তবে প্রবীণ এ আলোকচিত্রীর কর্মজীবন শুরু হয় স্কুলের শিক্ষকতা দিয়অপরদিকে, গত ৯ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা সিটির উল্টো দিকের রাস্তায় এক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন দৈনিক প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক জিয়া ইসলাম। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিক তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

সংকটাপন্ন অবস্থা দেখে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জিয়াকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করেন। চিকিৎসকেরা জানান, তার একটি পা ভেঙে গেছে। তবে সবচেয়ে গুরুতর হলো মাথার আঘাত।

গত মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে জিয়া ইসলামকে অ্যাপোলো হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়।পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য জিয়াকে এয়ার এম্ব্যুলেন্সে সিঙ্গাপুর নেয়া হয়।

এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় মামলা করেন দৈনিক প্রথম আলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপক মেজর (অব.) সাজ্জাদুল কবীর। মামলায় জিয়াকে গাড়ি চাপা দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার অভিনেতা-মডেল কল্যাণ কোরাইয়াকে আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত কল্যাণ কোরাইয়ার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তিন দিনের মধ্যে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন এবং পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান ।