শিক্ষাবর্ষের প্রথম মাস প্রায় শেষ। অথচ এখনও সন্তানকে ভর্তি করাতে পারেননি। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও প্রতিকারের উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না অভিভাবকরা। বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ প্রধান শাখায় গিয়ে এ চিত্র মিলেছে।
ভুক্তভোগী অভিভাবকদের তথ্যানুযায়ী স্কুল পর্যায়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের নিয়েই তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। জানা গেছে, অনেকের সন্তানই এ প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণি থেকে অধ্যয়ন করছে। বিগত পরীক্ষাগুলোতে ফলাফল সন্তোষজনক হলেও যে কোন কারণেই এবার কিছুটা খারাপ হয়েছে। অথচ এ সমস্যা সমাধানে তারা কোনো উপায় খুঁঝে পাচ্ছেন না। এমনকি বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য কোনো শিক্ষকের সাক্ষাতও মিলছে না। অভিভাবকদের অভিযোগ, সন্তান লেখাপড়ায় অমনোযোগী বা পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি বিদ্যালয় থেকে কখনও অবহিত করা হয়নি। বছর শেষে পরীক্ষার ফলাফল দেখেই তারা সন্তানের পরিণতি জানতে পারেন। তখন কিছুই করার থাকে না।

শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সামন্ত মনোভাবের অভিযোগ তুলে কয়েকজন অভিভাবক আক্ষেপের স্বরে বলেন, দেশ সেরা বিদ্যাপীঠ হবার কারণেই এখানকার শিক্ষকদের মধ্যে অহংবোধ জেঁকে বসেছে। এ কারণে এই প্রতিষ্ঠানে সন্তান ভর্তি করাতে যতো কষ্ট, তার চেয়ে বেশি কষ্ট কোনো শিক্ষকের সাক্ষাত লাভ। আবার কোনো কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে রয়েছে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ। এমনকি শিক্ষার্থীর সমস্যা নিয়ে কথা বলারও সুযোগ নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক জানান, বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর অনেকে তাদের সন্তানের পড়ার মান নিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ করতে যান। কিন্তু শ্রেণি শিক্ষক, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক কিংবা প্রধান শিক্ষক কারো দেখা পাননি। এমনকি ফটক খোলা হয় না। ফটকের দারোয়ানের সাফ জবাব, ‘প্রধান শিক্ষকের নির্দেশ রয়েছে’। কেউ কৌশলে ভেতরে প্রবেশ করে শিক্ষকের দর্শন পেলেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তাকে বিদায় দেওয়া হয়েছে। এমনকি কোন কোন অভিভাবকের উপস্থিতিতে দারোয়ান-পিয়ন ডেকে এনে ‘কিভাবে ভেতরে প্রবেশ করলো’ জানতে চেয়ে ভর্ৎসনা করা হয়েছে। আবার বিদ্যালয়ের টেলিফোনটিও (নং ৫৮৩১০৫০০) অনেকদিন ধরে অচল। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক জিনাত আক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ বেশি। মাসাধিককাল ধরেই তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না। আসলেও কিছু সময় থেকে চলে যান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার অন্তঃস্বত্বা মেয়ের পাশে থাকতেই তিনি বেশি সময় বাইরে কাটাচ্ছেন। আর এ জন্য শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের দুর্ভেগের অন্ত নেই। বিশেষ করে শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রথম দিকে ভর্তিসহ নানা আনুষ্ঠানিকতা থাকে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক গরহাজির থাকায় সকলকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

এদিকে স্কুল পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থীর ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সব বিষয়ে তাদের ফলাফল ‘এ’ ‘এ মাইনাস’ গ্রেডের। কিন্তু কোনো একটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষার্থীকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করাচ্ছে না। এ বিষয়ে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে আবেদন এমনকি সন্তানের বিষয়ে আরো যতœশীল হবার অঙ্গীকার দেয়ার পরও কর্তৃপক্ষের মন গলছে না। বছরের প্রথম মাস পেরিয়ে গেলেও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন অনেক অভিভাবক। এতে শিক্ষার্থীর এক বছর নষ্ট হওয়া ছাড়াও তার উপর মানসিক প্রভাব পড়ার বিষয়টি তুলে ধরা হলেও সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ জরুরি বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।