রাজশাহীর তানোর উপজেলার সীমানা ঘেঁষা আমনুরা ধিনগর গ্রাামের মেয়ে তুকাজ্জেবান খাতুন দুই হাত থেকেও নেই। দুই পা থাকলেও তা দিয়ে ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না। উচ্চতা মাত্র তিন ফিট ৫ ইঞ্চি। কিন্তু তাতে কি? দৃঢ় মনোবল আর প্রচন্ড ইচ্ছা শক্তির বলে শারীরিক প্রতিবন্ধিতা জয় করে পিএসসি, জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি। তার নির্দিষ্ট কোনো স্বপ্ন না থাকলেও ইচ্ছে বড় হয়ে দেশের জন্য কাজ করা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদর উপজেলার আমনুরা ধিনগর গ্রামের হতদরিদ্র সালাম উদ্দিন ও আমেনা বেগমের বড় মেয়ে তুকাজ্জেবান খাতুন জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। তার দুই হাতই এক প্রকারের অচল। দুই পা থাকলেও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। অনেক চিকিৎসা করিয়েও লাভ হয়নি। তার ছোট বোনও একই প্রতিবন্ধি। সেও শারীরিক প্রতিবন্ধিতা জয় করে পিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। আর প্রতিবন্ধী তুকাজ্জেবান তার শারীরিক অক্ষমতাকে জয় করার জন্য ছোটবেলা থেকেই দুই হাতের মুচকানো আঙ্গুল দিয়ে লেখার চর্চা শুরু করে ধীরে-ধীরে এগিয়ে চলছেন। এরই ধারাবাহিকতায় অদম্য ইচ্ছা শক্তির কারণে প্রতিবন্ধী তুকাজ্জেবান এবার আমনুরা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছে। আর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে চলমান এসএসসি পরীক্ষায় ১৩ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা দিচ্ছে তুকাজ্জেবান।

গত রোববার বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা চলাকালিন সময়ে কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, অন্য পরীক্ষার্থীদের মতোই অনেকটা স্বাভাবিকভাবে মনোযোগ সহকারে পরীক্ষা দিচ্ছেন তুকাজ্জেবান। নিজ ইচ্ছাশক্তিতে সহপাঠীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কষ্ট হলেও আনন্দের সঙ্গে পরীক্ষা দিচ্ছেন বলে এসময় জানান তিনি। তুকাজ্জেবানের বাবা আব্দুস সালাম জানান, তার পাঁচ মেয়ে সন্তানের মধ্যে তুকাজ্জেবেন খাতুন বড়। তার ছোট মেয়েও একই প্রতিবন্ধি। তার বসত ভিটা ৫ শতক জমি ছাড়া আর কিছুই নেই। তবুও অভাবি সংসারের মধ্যেই মেয়ের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে তাদের ইচ্ছাকে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, মেয়ে দুইটার অনেক চিকিৎসা করিয়েছি কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাদের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। বড় ধরনের অপারেশন করাতে হবে। কিন্তু আমি দরিদ্রতার কষাঘাতে মেয়েদের চিকিৎসা করাতে পারছি না। মেয়েদের চিকিৎসা সহায়তার জন্য তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। আমনুরা আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কুদরত-ই-খুদা বলেন, তুকাজ্জেবান স্কুলের মধ্যে একমাত্র প্রতিবন্ধি ছাত্রী চলমান এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছে। তার ছোট বোন তার মতই প্রতিবন্ধি এবার ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। তুকাজ্জেবান খাতুন লেখা পড়ার করায় বেশ আগ্রহ রয়েছে।

এদিকে, মুন্ডুমালা উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব মি. কামেল মার্ডী প্রতিবন্ধি তুকাজ্জেবান প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি আর তীব্র মনোবলকে স্যালুট জানিয়ে বলেন, সে যে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারছে এটা বিশাল ব্যাপার। তবে পরীক্ষার আগে প্রতিবন্ধী হিসেবে বোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী তাকে সব সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু সে নিজে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতই পরীক্ষা দিবে বলে জানান। তার যথেষ্ট আগ্রহ ও আত্মবিশ্বাস রয়েছে। তুকাজ্জেবান আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন বলেও জানান তিনি।

মিজানুর রহমান, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি