বিমান পরিচালনায় অসুবিধা সৃষ্টি করে মানুষের জীবন ঝুঁকিতে ফেললে মৃত্যুদন্ডের পাশাপাশি ৫ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রেখে আইন হচ্ছে।সর্বোচ্চ এই শাস্তির বিধানসংবলিত বেসামরিক বিমান চলাচল আইন ২০১৭ আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভায় বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে মৃত্যুদন্ডের বিধান ছাড়া খসড়াটি গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভায় নীতিগত ও পরে চূড়ান্ত অনুমোদন হয়। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের আইনি মত (ভেটিং) শেষে এটি জাতীয় সংসদে ওঠানোর আগ মুহূর্তে সর্বোচ্চ শাস্তির বিষয়টি নতুনভাবে সংযোজন করা হলো।নতুন আইনে বিমান হ্যাঙ্গারে থাকা অবস্থা থেকে শুরু করে অবতরণ পর্যন্ত যেকোনো পর্যায়ে ইচ্ছাকৃত বা বেপরোয়াভাবে এমন কোনো কাজের জন্য কারও জীবন ঝুঁকির মুখে পড়লে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে মৃত্যুদ- বা যাবজ্জীবন কারাদ- এবং অনধিক পাঁচ কোটি টাকা অর্থদন্ড।নতুন আইনে বিমান চলাচলে বিঘœ ঘটানো ছাড়াও বিভিন্ন অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, কোনো পাইলট বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বিপজ্জনকভাবে বিমান চালালে এবং তা প্রমাণিত হলে যাবজ্জীবন কারাদন্ডএবং এক কোটি টাকা অর্থদন্ডে দ-িত হবেন।

বাংলাদেশের আকাশসীমায় অবৈধভাবে ঢুকে পড়লে এখন শাস্তির বিধান নেই। আইনে বলা হয়েছে, সুরক্ষা ও নিরাপত্তার কারণ ছাড়া কোনো ব্যক্তি অবৈধভাবে বিমান নিয়ে বাংলাদেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করলে শাস্তি সর্বোচ্চ সাত বছর ও সর্বনিম্ন তিন বছর কারাদন্ড অথবা অনধিক ৫০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড। এ ছাড়া বিমানের নেভিগেশনের সঠিক আলোক বা সংকেতের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করলে যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা পাঁচ কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

গত বছরের ২৯ ফেব্র“য়ারি বেসামরিক বিমান চলাচল আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। আইনটির চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে নতুন করে বিভিন্ন অপরাধের জন্য সাজার মাত্রা বাড়ানো হয়েছে।বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলাম সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৬০ সালের দ্য সিভিল এভিয়েশন অর্ডিন্যান্স হালনাগাদ করে এই খসড়া তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে সাজাও বাড়ানো হয়েছে এ খসড়ায়।যদি কোনো ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করেন, যাতে নির্বিঘœভাবে বিমান পরিচালনায় অসুবিধার সৃষ্টি হয় এবং মানুষের জীবন ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, তবে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

এ ধরনের অপরাধের জন্য মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড, সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড দেওয়া হতে পারে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, “আইনে নতুন করে মৃত্যুদন্ডের বিধান যুক্ত করা হয়েছে।এয়ার নেভিগেশন অর্ডার’ অর্থাৎ, বিমান চালানোর অনুমতির বিধান লঙ্ঘন বা সনদ জাল করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর সশ্রম কারাদন্ড, সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদ- বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়।মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিমানের নেভিশগনের সঠিক আলো ও সংকেতের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করলে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, পাঁচ কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড হতে পারে। আইন অনুযায়ী বিমানের নেভিগেশনে হস্তক্ষেপ বড় ধরনের অপরাধ। কেউ বিমান ভ্রমণের সময় বিপদজনক পণ্য বহন করলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদন্ডের সঙ্গে ৫০ লাখ টাকা জরিমানার মুখে পড়বেন এই আইন হলে।

বিপদজনক পণ্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, এমন কোনো দ্রব্য বা বস্তু, যা স্বাস্থ্য, সম্পত্তি বা পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে অথবা এসবের জন্য ঝুকিপূর্ণ বা নিরাপত্তা বিঘিœত করতে পারে। এছাড়া আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ যেসব পণ্য বিপদজনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে, সেগুলোও এই তালিকায় থাকবে।এ আইন পাস হলে অবৈধভাবে বাংলাদেশের আকাশসীমায় প্রবেশের জন্য তিন থেকে সাত বছরের সশ্রম কারাদ- এবং সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা গুণতে হবে বলে জানান শফিউল আলম।তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কিছু নির্দেশনাও নতুন প্রস্তাবিত আইনে যুক্ত করা হয়েছে।

এদিকে,পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয়টি বিশ্বব্যাংক প্রমাণ করতে না পারায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই ধন্যবাদ জানানো হয়।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ সকালে এই বৈঠক শুরু হয়। দুপুরে বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ এ কথা জানান।মন্ত্রিপরিষদ বলেছেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার তা প্রমাণের চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। তিনি বারবার বলেছেন, এই প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি, হয়ে থাকলে বিশ্বব্যাংককে তা প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক সেটি প্রমাণ করতে পারেনি। কানাডার আদালতে প্রমাণ হয়েছে পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। এটি প্রধানমন্ত্রীর অবিচল অবস্থানের কারণেই সম্ভব হয়েছে।মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা বৈঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় অবস্থানের কারণে প্রমাণ হয়েছে, কোনো দুর্নীতি হয়নি। এজন্য তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ।মন্ত্রিপরিষদ সচিব সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, দুর্নীতি হয়নি এটি প্রমাণ হওয়ায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। তিনি বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু থেকে সরে যাওয়ায় দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছিল। দেশের জিডিপিও কাঙ্খিত ভাবে বাড়েনি। এই ঘটনা না ঘটলে জিডিপি ১ বা ২ শতাংশ বাড়ত।