নিখোঁজের ছয় মাস পর বাসায় ফিরেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ছোট ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী ফিরে এসেছেন। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কে বা কারা তাঁকে ধানমন্ডিতে বাসার কাছে ফেলে যায় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে কারা হুম্মামকে রেখে গেছে, এত দিন তিনি কোথায় ছিলেন, তা হুম্মাম জানেন না।

সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর ছোট ভাই গিয়াসউদ্দীন কাদের চৌধুরী বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ফোনে বলেন, বুধবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার বাসার কাছে অবস্থিত সুলতানা কামাল মহিলা কমপ্লেক্সের পাশে কে বা কারা হুম্মামকে রেখে যায়। সে কিভাবে এলো, কারা নিয়ে গিয়েছিলো, কারা দিয়ে গেলো এসব নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এখনো কথা বলেনি হুম্মাম। তার মানসিক অবস্থা ভালো নয়। সে এখন বিশ্রামে আছে। হুম্মামের বাবা সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীকে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়। সেই মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয় ২০১৫ সালের নভেম্বরে। তিনি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। তার ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

সাত মাস আগে গত বছরের ৪ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনের রাস্তা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে কয়েকজন হুম্মামকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে তাঁর আইনজীবীদের অভিযোগ। এরপর থেকে তিনি ‘নিখোঁজ’ ছিলেন।হুম্মামের চাচা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, গত বৃহস্পতিবার ভোররাতে কে বা কারা হুম্মামকে ধানমন্ডি লেকের পাড়ে মসজিদের সামনে রেখে যায়। হুম্মামের শারীরিক অবস্থা মোটামুটি ভালো। এক প্রশ্নের জবাবে গিয়াস কাদের বলেন, হুম্মাম এত দিন কোথায় ছিলেন, কে বা কারা তাঁকে নামিয়ে দিয়ে গেছেÑএ বিষয়ে হুম্মাম কিছু জানেন না। এসব বিষয়ে হুম্মাম তাঁদের কিছু বলেননি।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির পর বিএনপির নতুন কমিটিতে জায়গা পান তাঁর ছোট ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। হুম্মাম এখন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য।

গত বছরের ৪ আগস্ট হুম্মাম কাদের চৌধুরীর আইনজীবী আমিনুল গণী টিটোর সহকারী আইনজীবী চৌধুরী মো. গালিব রাগীব প্রথম আলোকে বলেছিলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেওয়া হয়। এই রায় ফাঁস করার মামলার শুনানিতে হাজিরা দিতে ওই দিন দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ব্যক্তিগত গাড়িতে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনের রাস্তায় আসেন হুম্মাম। তখন তিন-চারজন লোক নিজেদের ডিবি পরিচয়ে হুম্মামকে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে অন্য মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এ সময় হুম্মাম তাঁদের কাছে পরোয়ানা দেখতে চান। এরপর তাঁকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।গত ২৫ ফেব্র“য়ারি বাংলাদেশে ক্রমে বাড়তে থাকা গুমের ঘটনা বন্ধে সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেয় জাতিসংঘের একটি কর্ম গ্র“প।জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রচারিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে হুম্মাম কাদের চৌধুরীর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।