উৎসব মুখর পরিবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তন শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তন উপলক্ষে হাজারো গ্র্যাজুয়েটের পদচারণায় শনিবার (৪ মার্চ) মুখর হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সমাবর্তনে দেওয়া হয় গাউন পরে নিজের স্মৃতি বিজড়িত ক্যাম্পাসের শেষ মুহূর্তগুলোকে ধারণ করে রাখতে সেলফি-ছবি তুলে যাচ্ছেন বিদায়ী গ্র্যাজুয়েটরা।
রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মোঃ আবদুল হামিদ ৫০তম সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন।এবারের সমাবর্তনে ৯৪টি স্বর্ণপদকের জন্য ৮০ জন পদকপ্রাপ্ত, ৬১ জন পিএইচডি, ৪৩ জন এমফিল ও ১৭ হাজার ৮৭৫ জন গ্র্যাজুয়েট অংশগ্রহণ করেছেন।কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিও’র প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক অমিত চাকমা সমাবর্তন বক্তৃতা প্রদান করেন। তাঁকে এ অনুষ্ঠানে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করা হয়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সমাবর্তন সংস্কৃতি প্রচলনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, সমাবর্তন দিবস শিক্ষার্থীদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। এ দিবসটির জন্য শিক্ষার্থীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা একাডেমিক সার্টিফিকেট ও পদক গ্রহণ করে থাকেন।অথচ স্বাধীনতা পূর্ব ও উত্তরকালে দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সংস্কৃতি চালু হয়েছে। এ সংস্কৃতি ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
শিক্ষা জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জনের স্বীকৃতি আজকে পাচ্ছি। এ আনন্দ বলে বোঝানা যাবে না। আজ যেন ফিরে গেছি ৫ বছর আগে। ক্যাম্পাসের আড্ডা, হেঁটে বেড়ানো, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে খুনসুটি, সব যেন চোখে ভাসছে। পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন ও বইমেলা; আহা! কী আনন্দের ছিলো সেই দিনগুলো।শিক্ষা জীবনের বহুল কাঙ্খিত সমাবর্তনে যোগ দিতে এসে এ কথা বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্থনীতি বিভাগের টুম্পা রানি দে। প্রতিটি শব্দচয়নে তার গলায় ঝরছিল আবেগ, বাজছিল প্রিয় ক্যাম্পাসকে বিদায় বলার সুর।ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, সমাবর্তন উপলক্ষে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে।লাল, বেগুনী ও কমলা রঙের পতাকা, ব্যানার ও ফেস্টুনে সজ্জিত করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। সবখানেই কালো গাউন পরিহিত গ্রাজুয়েটদের পদচারণা।উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা ঢাবি গ্র্যাজুয়েটরা। ছবি: দীপু মালাকারবিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে চলছে সমাবর্তন অনুষ্ঠান। তার বাইরে ঐতিহাসিক কার্জন হল, টিএসসি, রাজু ভাস্কর্য, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর, কলা ভবন, বটতলা, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ চত্বর, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, সিনেট ভবনের সামনে চলছে সমাবর্তনের আনন্দ মাতম। বহুল প্রতীক্ষিত দিনটাকে স্মরণীয় করতে গ্র্যাজুয়েটরা অনেকেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে এসেছেন।প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে দিনটি ধরে রাখতে চলছে ক্যামেরায় একের পর এক ক্লিক। সমাবর্তনের ক্যাপ ছুড়ে দিয়ে বাঁধভাঙা উল্লাসে আকাশ ছুঁতে চাইছেন কেউ কেউ।
দু’বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়েছেন রাজিব আহসান। সময় না মেলায় এর আগের সমাবর্তনে অংশ নিতে পারেননি বন্ধুদের সঙ্গে। এবার বেছে নিয়েছেন কাক্সিক্ষত দিনটি। বন্ধুরা ছাড়াও সঙ্গী হয়েছেন তার প্রিয় সহধর্মিনীও।রাজিব আহসান বলেন, এই দিনটার জন্য ফার্স্ট ইয়ার থেকে অপেক্ষা করি। ভালো লাগা বলে বোঝানো যাবে না। তার সঙ্গে দুঃখ বোধও হচ্ছে, প্রিয় ক্যাম্পাসের সঙ্গে শিক্ষা জীবনের সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ায়।টিএসসি চত্বরে রাজু ভাস্কর্য ঘিরে বন্ধুদের নিয়ে উল্লাসে মাতেন শিখা সরকার। দলবেঁধে কালো গাউন পড়া দলটি বারবার গলা ফাটানো চিৎকার তুলে শূন্যে লাফিয়ে আনন্দ-উল্লাস করে।এদিকে, বিশ্বিদ্যালয় থেকে সদ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি চাকরি করে ঘর সংসারে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া গ্র্যাজুয়েদেরও দেখা গেল সমাবর্তনে।এদেরই একজন শাহনাজ পারভীন। বর্তমানে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে অধ্যাপনা করছেন তিনি। শাহনাজ বলেন, সময় সুযোগে হচ্ছিল না সমাবর্তনে যোগ দেওয়ার। এবার হলো। আজকে এসে বহু স্মৃতি মনে পড়ছে। একটা সময় ক্যাম্পাস ছিলো ধ্যান-জ্ঞান। সমাবর্তন নেওয়া হয়নি বলে মনে করতাম, ক্যাম্পাসের কাছে আমার এখনও পাওনা রয়েছে। আজকে তা-ও শেষ, আনন্দের সঙ্গে কষ্টও হচ্ছে।