হরকাতুল জিহাদ নেতা ফাঁসির দন্ড প্রাপ্ত আসামী মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নিতে গাজীপুরের টঙ্গীতে প্রিজন ভ্যানকে লক্ষ্য করে হাত বোমা নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা। এসময় এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। তার কাছ থেকে তাজা একটি হ্যান্ড গ্রেনেড, ৫টি ককটেল, ২টি পেট্রোল বোমা, ২টি চাপাতিসহ বেশকিছু বিষ্ফোরক দ্রব্য ও টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে টঙ্গীর কলেজ গেইট এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। আটককৃত যুবকের নাম মোস্তফা কামাল (২৪)। সে ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা থানার পাগলী গ্রামের মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে।

গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টর মোঃ হাফিজুল ইসলাম জানান, সোমবার বিকেলে গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টর মোঃ হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টঙ্গীর কলেজ গেইট এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিল। এসময় ঢাকার আদালত থেকে পুলিশ প্রহরায় প্রিজন ভ্যানে করে হরকাতুল জিহাদ নেতা ফাঁসির দন্ড প্রাপ্ত আসামী মুফতি হান্নানকে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রিয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। একজন ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে পুলিশের ৫ সদস্য একটি পিকআপ ভ্যান নিয়ে ওই প্রিজনভ্যানকে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছিল। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে প্রিজন ভ্যানটি ওই এলাকায় পৌছলে মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নিতে ক’দুর্বৃত্ত প্রিজন ভ্যানকে লক্ষ্য করে পরপর কয়েকটি হাত বোমা নিক্ষেপ করে। নিক্ষিপ্ত বোমাগুলোর মধ্যে দু’টি বোমা সড়কে পড়ে বিষ্ফোরিত হয়। অপর একটি বোমা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পুলিশের পিকআপ আরোহী এক কন্সটেবলের গায়ে লেগে গাড়িতে পড়ে। ব্যাস্ততম এলাকায় হঠাৎ বোমা বিষ্ফোরণের শব্দে স্থানীয়রা দিগবিদিক ছুটোছুটি শুরু করে। এসময় ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা ধাওয়া করে বোমা নিক্ষেপকারী এক যুবককে দু’টি ব্যাগসহ একটি ব্যাক প্যাক ও অপরটি ল্যাপটপের জন্য ব্যাগ) আটক করে এবং অন্য দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। তবে কেউ আহত হয় নি। ঘটনাস্থলের পাশে শিল্প পুলিশের একটি ফাঁড়ি রয়েছে। ওই ফাঁড়ি থেকে পুলিশের বেশ কয়েক সদস্য ট্রাফিক পুলিশদের সহায়তায় এগ্রিয়ে আসে। পরে পুলিশ ওই যুবকের ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে তাজা একটি হ্যান্ড গ্রেনেড, ৪টি ককটেল, ২টি পেট্রোল বোমা, ২টি চাপাতিসহ বেশকিছু বিষ্ফোরক দ্রব্য ও সাড়ে ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বিষ্ফোরিত দু’টি হাতবোমার আলামত ও পুলিশের পিকআপ ভ্যান থেকে অবিষ্ফোরিত অবস্থায় একটি হাতবোমা উদ্ধার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত যুবক পুলিশকে জানায়, সে মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নিতে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রিজন ভ্যান লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করেছিল। আটক ওই যুবককে টঙ্গী মডেল থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। পরে অতিরিক্ত পুলিশের প্রহরায় আসামীর প্রিজনভ্যানটি কাশিমপুর কারাগারের উদ্দ্যেশে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে। খবর পেয়ে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন।

এব্যাপারে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার মিজানুর রহমান জানান, প্রিজনভ্যানে বোমা হামলার বিষয়টি পুলিশ সন্ধ্যা পর্যন্ত কারা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে নি। ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী মুফতি হান্নান ২০১৩ সাল থেকে এ কারাগারে বন্দি রয়েছে। তবে হাজিরা দেয়ার জন্য এ কারাগার থেকে দেশের বিভিন্ন আদালতে নেয়া হয়। আদালতে হাজিরা দেয়ার জন্য মুফতি হান্নানকে দু’দিন আগে এ কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগারে নেয়া হয়। সোমবার আদালতে হাজিরার জন্য কয়েক জঙ্গীকে একাধিক প্রিজনভ্যানে করে সকালে এ কারাগার থেকে ঢাকায় নেয়া হয়। মুফতি হান্নানকে কড়া পুলিশ প্রহরায় একটি ভ্যানের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল। আদালতের কাজ শেষে সোমবার তারা পুনঃরায় পুলিশ প্রহরায় কারাগারে ফিরে আসে। এরমধ্যে কোন্ প্রিজনভ্যানে হামলা করা হয়েছিল তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী মুফতি হান্নানকে নিয়ে প্রিজন ভ্যানটি অক্ষত অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কারাগারে পৌছে।

এদিকে ওই ঘটনার পর ব্যাস্ততম টঙ্গীর কলেজ গেইট এলাকায় স্থানীয়দের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকায় পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।