নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৬ষ্ঠ বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নারীর উন্নয়ন ছাড়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়- এ গভীর উপলব্ধি থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর নারী সমাজের উন্নয়নে পদক্ষেপ নেন। তিনি আমাদের উপহার দেন ’৭২ এর অনন্য সংবিধান। যা কেবল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির কথাই বলেনি; অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে নারী-পুরুষের সমতাও সমুন্নত করেছে।

বুধবার জাতীয় সংসদের ১৪তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরে টেবিলে উত্থাপিত সরকার দলীয় সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান প্রধানমন্ত্রী।এদিন বিকেল ৩টা ২৫ মিনিটে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দিনের কার্যসূচি শুরু হয়।

জাতীয় সংসদে সর্বপ্রথম জাতির পিতা নারীদের জন্য ১৫টি আসন সংরক্ষিত করেন। এটাই বাংলাদেশের ইতিহাসে নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে প্রথম বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। যার ফলে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের প্রথম সংসদেই নারীরা প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায়, বলেন প্রধানমন্ত্রী।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে দেশের নারী সমাজের উন্নয়নে কাজ করেছে উল্লেখ করে সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে নারী উন্নয়নের গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।বর্তমান সরকার নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন মন্ত্রণালয়গুলোতে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। স্পিকার, মন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, সিনিয়র সচিব/সচিব পদে, ব্যাংকিং সেক্টরে উচ্চপদ, রাষ্ট্রদূত, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আমরা নারীদের নিয়োগ/দায়িত্ব প্রদান করেছি। সকল মন্ত্রণালয়ে নারী উন্নয়ন সংক্রান্ত ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে।

নারীর ক্ষমতায়নের সরকারের ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে ও জেন্ডার সমতা নির্ধারণে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ৪টি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হল, নারীর সামর্থ্য উন্নীতকরণ, নারীর অর্থনৈতিক প্রাপ্তি বৃদ্ধিকরণ, নারীর মত প্রকাশ ও মত প্রকাশের মাধ্যম সম্প্রসারণ এবং নারীর উন্নয়নে একটি সক্রিয় পরিবেশ সৃষ্টিকরণ। শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা নারী উন্নয়নের আমাদের ভূয়সী প্রশংসা করছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৬ অনুযায়ী ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭২তম যা দক্ষিণ এশিয়ার যে কোনো দেশের চাইতে ভালো অবস্থান নির্দেশ করেছে। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী অংশগ্রহণের মান হিসেবে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ ৬ষ্ঠ স্থানে।নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ সরকার এবং সরকার প্রধান হিসেবে বিভিন্ন পুরস্কারপ্রাপ্তির কথা উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, অর্জিত সাফল্যে নারীরা আজ সমাজকে আলোকিত করেছে। এই পুরস্কার এদেশের সকল নারীর।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন ভবিষ্যতে তাদের অর্পিত সাংবিধানিক দায়িত্ব অনুযায়ী একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের মো.আয়েন উদ্দিনের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।শেখ হাসিনা বলেন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮-এ নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা এবং অনুচ্ছেদ ১১৯-এ নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার।প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি সংবিধানের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন।শেখ হাসিনা বলেন, অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি ১জন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ৪ জন নির্বাচন কমিশনারের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন।তিনি বলেন, নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে শপথের মাধ্যমে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন।

বিনা বিচারে কারারুদ্ধরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে। সে বিধান আইনে রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরে টেবিলে উত্থাপিত নুরুল ইসলাম মিলনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা কারাগারে আটক রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান আছে। এসব মামলা তদন্তাধীন পর্যায়ে থাকতে পারে বা বিচারকি পর্যায়েও থাকতে পারে। বিচারকি পর্যায়ে দীর্ঘসূত্রতা থাকলে এসব মামলায় কারাগারে আটক ব্যক্তিদের জামিনে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা সংশ্লিষ্ট বিচারকের এখতিয়ারাধীন।সরকার এসব মামলা দ্রুত বিচারের লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে। এসবের মধ্যে রয়েছে দ্রুত বিচার আদালত ও ট্রাইব্যুনাল গঠনসহ মামলার বিচারকার্য ত্বরান্বিত করার জন্য বিভিন্ন অবকাঠামোগত এবং সংস্থারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলেও জানান তিনি।প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এছাড়াও অপরাধীরা যেন বিনা বিচারে দীর্ঘদিন আটক না থাকে সে লক্ষ্যে বর্তমান সরকার তাদের দ্রুত বিচার সম্পন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বর্তমান সরকার দীর্ঘদিন আটক অপরাধীদের সংখ্যা জানার জন্য তাদের পরিসংখ্যান নিয়ে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিচ্ছে।

তিনি বলেন, আমি জেলে থাকা অবস্থায় জানতে পারি যে, অনেক মানুষ বিনা অপরাধে জেলে আটক অবস্থায় রয়েছে। এসব আটক ব্যক্তিদের অবিলম্বে জেল থেকে মুক্ত করা প্রয়োজন। কিছু এনজিও এবং সরকারি জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে এইসব ব্যক্তিদের কারাগার থেকে মুক্ত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং এ প্রক্রিয়া চলমান আছে।তিনি আরো বলেন, যারা বিনা বিচারে আটক রয়েছে তারা সংশ্লিষ্ট আটককারী কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে। তাছাড়া, যদি রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে তবে আইনে সে বিধানও রয়েছে।