বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক চুক্তি হলে তা হবে আত্মঘাতী ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী। ভারত সফরের আগে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য সরকারের পাতানো খেলার অংশ’ বলে মন্তব্য এসেছে বিএনপির পক্ষ থেকে।বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে রিজভী এসব কথা বলেন।বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিবের ভাষ্য, বাংলাদেশের নিরাপত্তা যদি ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়, তাহলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বলতে কিছু থাকবে না।রিজভী বলেন, দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি জনগণ মেনে নেবে না। বরং এই ধরনের চুক্তি প্রতিরোধে জনগণ সর্বশক্তি নিয়ে এগিয়ে আসবে।

সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হঠাৎ করে ভারতবিরোধী বক্তব্য দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করতে চেয়েছেন, করেছেন। তিনি বলেছেন ২০০১ সালে ভারতের র এবং যুক্তরাষ্ট্র মিলে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। হঠাৎ করে শেখ হাসিনার র এর বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রদান রহস্যজনক।হঠাৎ করে তার র এর বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়া একটি পাতানো খেলা ও তামাশারই অংশ বলে আমরা মনে করি।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ মার্চ যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে বলেছিলেন, গ্যাস রপ্তানিতে তিনি রাজি হননি বলে ২০০১ সালে র ও যুক্তরাষ্ট্রের যোগসাজশে আওয়ামী লীগকে ভোটে হারানো হয়েছিল।প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফর নিয়ে কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির নেতারা। সফরে যেসব চুক্তি হবে সেগুলো প্রকাশ্যে আনার দাবি রয়েছে তাদের।আগামী ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে যাওয়ার সূচি চূড়ান্ত হয়েছে।

রিজভী বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, দক্ষিণ এশিয়াভিত্তিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বলছে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাক্ষরিত কয়েকটি চুক্তি এবং তাদের কাছ থেকে সাবমেরিন কেনার পর ভূ-রাজনৈতিক নিরাপত্তার প্রশ্নে উদ্বিগ্ন ভারত। সেই উদ্বেগ দূর করতেই প্রধানমন্ত্রীর সফরে প্রতিরক্ষা চুক্তি সম্পাদনের তোড়জোড় করছে ভারত।আমরা মনে করি, ভারতের সঙ্গে সামরিক চুক্তি হলে তা হবে আত্মঘাতি ও স্বাধীনতাবিরোধী। দেশের নিরাপত্তা যদি ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয় এবং সে দেশের ইচ্ছা অনুযায়ী যদি প্রতিরক্ষানীতি গ্রহণ করতে হয়, তাহলে এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বলে কিছুই থাকবে না। আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, এরকম রাষ্ট্রবিরোধী গোপন চুক্তি হলে জনগণ তা কখনও মেনে নেবে না বরং তা প্রতিরোধে সর্বশক্তি দিয়ে এগিয়ে আসবে।রুহুল কবির রিজভী বলেন, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্যই ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা একটি ফাইল খুলেছিল, যা ভারতের সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন সানডে’তে ছাপা হয়েছিল প্রায় ২৫-২৬ বছর আগে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই আসার পর ওই ফাইলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার আগে ইন্ধিরা গান্ধী ওই ফাইলটি চালু করেন।

পুনরায় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসলে ফাইলটি আবার চালু করা হয়। এর কিছুদিনের মধ্যেই ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে দেশের স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন কিছু উচ্ছৃঙ্খল সৈনিকদের হাতে। সুতরাং র’ কাদের স্বার্থে কাজ করে দেশের জনগণ ভালোভাবেই জানে।

জনসভায় নৌকার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভোট চাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, আরপিও অনুযায়ী এটা নির্বাচনী আচরনবিধি লঙ্ঘন। উনি প্রধানমন্ত্রী, উনি তো হচ্ছেন একটি লাভজনক পদে আছেন, উনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। উনি জনসভা করে নৌকায় ভোট চাওয়ার কথা বলেছেন। এর এফেক্ট তো লক্ষ্মীপুরে হবে, কুমিল্লার সিটি করপোরেশনের নির্বাচনেও হবে।আমরা মনে করি, কুমিল্লায় যে নির্বাচন হচ্ছে, তার প্রাক্কালে ওই নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য এই কথাটি প্রধানমন্ত্রী বলছেন।সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জিয়াউর রহমান খান, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, এবিএম মোশাররফ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।