প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য অপসারণে যা যা করা দরকার, তিনি তা করবেন। আজ মঙ্গলবার রাতে গণভবনে কওমি আলেমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এই আশ্বাস দেন।একই বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর মর্যাদা দেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে এই স্বীকৃতি দেওয়া হলো।’

ভাস্কর্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হলো কীভাবে আমরা জানি না। … আমি প্রধান বিচারপতিকে (সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) ইতিমধ্যেই খবরটা দিয়েছি এবং খুব শীঘ্রই আমি ওনার সঙ্গে বসব এবং এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করব এবং আমি নিজেও ব্যক্তিগত মনে করি এটা এখানে থাকা উচিত না।’

‘তবে আমি আপনাদের বলব, আপনারা ধৈর্য ধরেন। কারণ এটা নিয়ে কোনো হৈ চৈ করা না। একটা কিছু যখন করে ফেলেছে, সেটাকে আমাদের সরাতে হবে। তার জন্য আমার ওপর অন্তত এইটুকু ভরসা আপনারা রাখবেন যে, এই ব্যাপারে যা যা করার, আমি তা করব।’

বক্তব্যে ভূমি আইনের অধীনে কোনো ধর্মীয় স্থাপনা সরানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ১৯৮৪ সালে প্রথম উমরাহ করতে যাই মক্কা ও মদিনা শরিফে। ১৯৮৫ সালে আমি প্রথম হজ করতে যাই। তখন মক্কা-মদিনা শরিফে যে পরিমাণ ছোট ছোট মসজিদ ছিল এবং এত হোটেল-টোটেল, মসজিদ অনেক কিছু ছিল। আপনারা দেখেন, এখন কিন্তু কিছু নাই।’

রোমান যুগের ন্যায়বিচারের প্রতীক ‘লেডি জাস্টিস’র আদলে একটি ভাস্কর্য কিছুদিন আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়। এরপর থেকে হেফাজতসহ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন তার বিরোধিতায় নামে। হেফাজত এই ভাস্কর্য সরানোর দাবি জানিয়ে সরকারকে ৫ মে মতিঝিলে ফের সমাবেশের হুমকি দিয়ে আসছে। ওলামা লীগও তা অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছিল। ভাস্কর্যটির বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি নিজেও এটা পছন্দ করিনি। বলা হচ্ছে এটা নাকি গ্রিক মূর্তি। আমাদের এখানে গ্রিক মূর্তি আসবে কেন? আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটা এখানে থাকা উচিৎ না। “গ্রিকদের পোশাক ছিল এক রকম। এখানে আবার দেখি শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে। এটাও হাস্যকর হয়েছে।”

ভাস্কর্য অপসারণের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে কথা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোনার পর গণভবনে উপস্থিত আলেমরা আনন্দিত ওঠেন। শেখ হাসিনা বলেন, “প্রধান বিচারপতির সঙ্গে খুব শিগগিরই বসব। আপনারা ধৈর্য ধরেন, এটা নিয়ে হৈ চৈ করবেন না। আমার উপর আপনারা এটুকু ভরসা রাখবেন। এটায় যা যা করা দরকার আমরা তা তা করব।”

প্রধানমন্ত্রী ভাস্কর্য সরানোর দাবিতে একমত হলেও তার দলের কয়েকজন নেতা হেফাজতের দাবির সমালোচনা করে আসছিলেন।সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছিলেন, “হেফাজত আজকে যেভাবে বলছে, তাতে মনে হচ্ছে এটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নয়, মনে হচ্ছে এটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র।”