বাস মালিকদের সঙ্গে আলোচনার পর সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়ে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআরটিএ।বুধবার রাজধানীর এলেনবাড়ীতে এই বৈঠকের পর বিআরটিএ চেয়ারম্যান বিআরটিএর চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমান এই সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানান।তিনি বলেন, আগামী ১৫ দিন সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ থাকবে। তারপর সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসে এই বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে।এই সময়ের মধ্যে বিআরটিএ নির্ধারিত চার্ট অনুযায়ী সব বাসের ভাড়া নিতে হবে বলে জানান বিআরটিএ চেয়ারম্যান। তা না করলে সড়কে কার্যরত ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবস্থা নেবে বলে জানান তিনি।যাত্রীরা যদি চায়, তাহলে সিটিং সার্ভিসকে একটি আইনি কাঠামোয় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে জানান বিআরটিএ চেয়ারম্যান।

সিটিং সার্ভিস বন্ধ করার পর গত রোববার থেকে ঢাকার সড়কে যাত্রী ভোগান্তির মধ্যে বুধবার এই বৈঠক ডাকে বিআরটিএ। এতে খন্দকার এনায়েতউল্লাহ খানসহ পরিবহন মালিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। গত তিন দিন পেরিয়ে গেলেও ‘সিটিং’ ভাড়ায় ‘লোকাল’ হালেই চলছে ঢাকার বিভিন্ন রুটের বাস; বাসের সংখ্যা কম থাকার পাশাপাশি ভাড়া নিয়েও ভোগান্তি কমেনি যাত্রীদের।বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ডে বুধবার সকালে মিরপুরগামী বাসের অপেক্ষায় থাকা তাসলিমা জামান তরু বলেন, আমি তো তিন দিন ধরে একই ভাড়ায় মিরপুর যাচ্ছি। দেখবেন, সিটিং সার্ভিস বন্ধ হবে না। মাঝখান দিয়ে ভাড়া বেড়ে যাবে, বলেন উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা কর্মজীবী এই নারী।ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর গত রোববার থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বচসা-মারামারির ঘটনা ঘটছে বিভিন্ন স্থানে। বিআরটিএর অভিযানের মধ্যে অনেক মালিক রাস্তায় বাসও না নামানোয় ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়দে হচ্ছে যাত্রীদের।

মিরপুর ১২ নম্বর-ফার্মগেইট রুটের বিহঙ্গ পরিবহনকে বুধবারও দেখা গেছে আগের মতোই সিটিং সার্ভিস চালাতে।যাত্রীরা অসন্তোষ জানালে বাস কন্ডাক্টর রহমত তার মালিকের কোনো নির্দেশনা না পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন, আমরা সিটিং-এই চলব।যাত্রীদের কাছ থেকে ‘সিটিং ভাড়া’ রাখা হলেও পথে পথে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা আগের চেয়ে বেড়েছে বলে জানান মিরপুরবাসী রহিমা বেগম।তিনি বলেন, সিটিং ভাড়া রাখা হচ্ছে, কিন্তু যাত্রী নিয়েছে লোকালের মতো করে। আগের থেকেও খারাপ অবস্থা।গতকালও বিহঙ্গে লোকাল ভাড়া রাখা হয়েছিল, আজকে থেকে তারা আবার নতুন নিয়ম করেছে।

মিরপুর ১২ নম্বর-মতিঝিল রুটে চালু থাকা বাস সার্ভিস বিকল্প অটো, ল্যাম্পস ও হাজী পরিবহনের আগে যেখানে পাঁচ মিনিটে একটি করে বাস আসত, সেখানে এখন আধঘণ্টায়ও বাসের দেখা মিলছে না বলে জানান চাকরিজীবী নুরূল নাসিম।ওরা গাড়ি কমিয়ে দিয়েছে। ভাড়া কম রাখলেও ঠাসাঠাসি করে যেতে হচ্ছে।উত্তরা তিন নম্বর সেক্টরের আজিজ আহমেদ সকাল পৌনে ৯টায় রাজলক্ষ্মী বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাসের অপেক্ষায়।সাংবাদিক পরিচয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, আপনার সাথে কথা বললে কি আমার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? সিটিং সার্ভিস তুলে দেওয়ার কী দরকার ছিল?আমি প্রতিদিন উত্তরা থেকে নিউ মার্কেট যাই ৫০ টাকায় সিটিং সার্ভিসে। আমার কাছে টাকার থেকে সময়টা বেশি জরুরি।তবে বাসের সংখ্যা কমে যাওয়ায় যানজটে না পড়ায় স্বস্তি দেখছেন কেউ কেউ।উত্তরা থেকে মহাখালী হয়ে গুলিস্থান ও যাত্রাবাড়ি এবং উত্তরা থেকে অন্যান্য রুটে সাধারণ দিনের মতো যানজট বুধবার দেখা যায়নি।

সকাল সাড়ে ১১টায় পল্টন মোড়ে বন্ধন পড়িবহনের যাত্রী বেসরকারী বীমা কোম্পানির ফিল্ড অফিসার কাউসার বলেন,কাজী পাড়া থেকে পল্টন আসতে ভাড়া আগেও ২২ টাকা দিতে হত, এখনও তাই।তবে স্বস্তির কথা হচ্ছে অন্যদিন আমি সকাল ৯টায় বাসা থেকে বের হলে ১১-সাড়ে ১১টা বেজে যেত, আর সেই একই রাস্তা পৌনে ১১টায় কাজীপাড়া থেকে বাসে উঠে সাড়ে ১১টায় পল্টন নেমেছি।দুপুর ১২টায় ফার্মগেইটে একটি কোচিং সেন্টারের শিক্ষক মোজাম্মেল হক বলেন,পল্টন থেকে ফার্মগেইট আসতে লেগেছে ২০ মিনিট। যানজটের কথা চিস্তা করে আমি আরও আধাঘন্টা বেশি সময় হাতে নিয়ে বের হয়েছিলাম।