লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড় ও শীলাবৃষ্টিতে শতশত ঘরবাড়ি, ধান, পাট, ভূট্টা, শাকসবজিসহ নানা ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ঘরের টিনের চালা ভেঙ্গে গৃহহীন হয়ে পড়েছে অসংখ্য পরিবার। ক্ষেতের ফসল বিনষ্ট হওয়ায় হাজার হাজার কৃষক হয়েছে দিশেহারা। আর সবকিছুই হাড়িয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলো। গত শুক্রবার রাত ৮-১২ পর্যন্ত এ কালবৈশাখী ঝড়ের ঘটনাটি ঘটে।

মঙ্গলবার সরেজমিনে আদিতমারী উপজেলায় গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান, ভুট্রা, পাট, শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সব চাইতে বেশি ক্ষতি হয়েছে ধানের। শতশত হেক্টর জমিতে ধানের গাছ দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু গাছে কোন ধান নেই। একই অবস্থা হয়েছে পাট গাছেও। আর ভুট্রা গাছেরও হয়েছে কঠিন বেহাল দশা। শতশত হেক্টর জমির ভুট্রা গাছ মাঠিতে লুটিয়ে পড়েছে। একদিকে কালবৈশাখী ঝড়ে ঘরবাড়ি, গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় সাধারণ লোকের যেমন দুঃখ দুর্দশার শেষ নেই। তেমনি অপর দিকে ক্ষেতের ফসলের অপরিসীম ক্ষতি হওয়ার সাধারণ কৃষকের চোখে কোন ঘুম নেই। ধারদেনা, চড়াসুদে এনজিও ও ব্যাংক ঋৃন নিয়ে চাষাবাদ করেন কৃষকেরা। কালবৈশাখী ঝড়ে সেই ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সাধারণ কৃষকেরা আজ দিশেহারা। এখন আগামী একটি বছর তাদেরকে কাটাতে হবে তঞ্চনা, বঞ্চনা, যন্ত্রনা আর খুবই কষ্টের মাঝে।
এবিষয়ে সরকারের আশু দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন অসহায় এই কৃষক কৃষাণিগন।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, আদিতামারী উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে এবারে প্রায় ১৫৮২ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি সাধন হয়েছে। এতে মাট ৩৫০০জন কৃষকের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ধান ৬৩০ হেক্টর, ভুট্টা ৪২৫ হেক্টর, আউশধান ৪০৫ হেক্টর, পাট ৭৫ হেক্টর, তিল ১০ হেক্টর বাদাম ১৫ হেক্টর, শাক সবজি ১৯০ হেক্টর, মুখডাল ০৭ হেক্টর। এছাড়াও ঐ ঝড়ে শতশত গাছপালা উপড়ে পরেছে। এতে ঘরের টিন ও গাছের ডালের আঘাতে আহত হয়েছে প্রায় ২০-৩০জন।

একদিকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি ও অন্যদিকে গরুছাগলসহ নিজেদের থাকার ঘরটিও নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে উপজেলার কৃষক ও ছিন্নমূল মানুষেরা। বিশেষ করে তিস্তার চড় অঞ্চলের কাচা ঘরবাড়ীগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, হঠাৎকরে আসা ঝড় ও শীলাবৃষ্টিতে বাড়ীঘরের ব্যাপক ক্ষতিসাধান হয়েছে, ব্যাংক ও এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ধান, ভুট্ট, পাট সহ নানাবিধ ফসলের চাষাবাদ করেছি কিন্তু সকল ফসলও নষ্ট হয়ে গেছে কালবৈশাখীর ছোবলে।
এ ঘটনায় দক্ষিণ বত্রিশহাজারীর কৃষক অহেদ আলীর সাথে কথা হলে তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ঋণ নিয়ে সাড়ে চার বিঘা জমিতে ২৮বি জাতের ধান আবাদ করেছি শীলা বৃষ্টিতে আমার সকল ফলস নষ্ট হয়ে গেছে। ধানের গাছত ধানের শীষ আছে কিন্তু ধান নাই। এখন মুই বউ বাচ্চা নিয়ে কি খাইম।
শুধু আহেদ আলী নয় এরক শত শত কৃষকের সমুদয় ধান ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সামনের দিন গুলো কিভাবে কাটবে সেই চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে আদিতমারীর কৃষকেরা