বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না উল্লেখ করে গুচ্ছগ্রামের মানুষদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মানসিকতা নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রতিটি জায়গায় মানুষকে ভালোভাবে চলার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। আপনারা যে বাড়ি পেলেন তার পরিচর্যা করবেন। আপনাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাজ করবেন। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে এই মানসিকতা নিয়ে কাজ করবেন।

বুধবার সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন গুচ্ছগ্রাম-২য় পর্যায়ের প্রকল্পের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী সাতটি জেলার মোট দশটি উপজেলায় ১১টি গুচ্ছগ্রামের উদ্বোধন করে তিনি এসব কথা বলেন।প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।

এই সাতটি জেলা হচ্ছে লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, রংপুর, গাইবান্ধা ও ফরিদপুর।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নিঃস্ব মানুষকে ঠিকানা দিতে হবে। এটিই বর্তমান সরকারের মূলনীতি। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই নিঃস্ব অসহায় মানুষকে ঘর-বাড়ি তৈরি করে দিতে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর আগে সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

তিনি বলেন, ‘এনজিওর মাধ্যমে যারা সহায়তা নিতে চান, আমরা এনজিও সংস্থাসমূহকে বলেছি যাতে জনগণের কাছ থেকে কম কম লাভ করা হয়।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করবো। সমস্ত বঞ্চনা থেকে মানুষকে মুক্তি দেবো। বিভিন্ন অঞ্চলের নিঃস্ব মানুষের ঠিকানার ব্যবস্থা করার জন্য আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’

‘আমাদের সীমিত শক্তি দিয়ে আমরা আপনাদের জন্য যেসব লোন, ট্রেনিং, বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলাম, এই আমানতকে নিজেদের কল্যাণে ব্যবহার করবেন। যে আমানত তুলে দিলাম সেটা দিয়ে নিজের ভাগ্য গড়ার কাজে ব্যবহার করতে হবে। এই আমানতের খেয়ানত যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। যত্ন করবেন। তাহলেই সবাই এগিয়ে যেতে পারবে।’

তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা বেঁচে থাকলে আজ খুব খুশি হতেন। এতগুলো মানুষ থাকার জন্য বাড়ি-ঘর পেলো। এই কর্মসূচির প্রথম সূচনা করেছিলেন তৎকালীন পানি সম্পদ মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত। ‘কিন্তু ‍দুঃখজনক হলেও সত্য, ১৫ আগস্টে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সঙ্গে তাকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের যে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন তার সুফল প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবো। বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হবে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের স্থান বাংলাদেশে হবে না। আমাদের ছেলে-মেয়েরা পড়ালেখা শিখবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে।’

একই স্থান থেকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস বিরোধী ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ঢাকা বিভাগের সঙ্গে বেলা ১১টায় ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।

গুচ্ছগ্রামগুলো হচ্ছে- লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলাধীন সানিয়াজং, লালমনিরহাট সদর উপজেলাধীন হীরামানিক ১ ও ২, পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল কোট ভাজনী বালাদূতি, ঠাকুরগাঁও’র পীরগঞ্জ উপজেলার বাইরাচুনা সিরাইল, দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার অন্তর্গত বাগপুর-২, দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার রিফিউজি পাড়া-১, রংপুরের পীরগাছা উপজেলাধীন জুয়ান-১, রংপুরের গঙ্গাছড়া উপজেলাধীন আর্জি জয়দেব, গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলাধীন সালাইপুর এবং ফরিদপুর সদর উপজেলাধীন কবিরপুর-৫। এই ১১টি গুচ্ছগ্রামে ৩৯০টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। উপকারভোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৪১৫ জন।

সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়নাধীন গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প ২য় পর্যায় প্রকল্পটি ১ অক্টোবর ২০১৫ সালে শুরু হয়েছে এবং প্রকল্পের ব্যাপ্তি ২০২০ সাল পর্যন্ত। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৪১ কোটি ৮১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। প্রকল্পের আওতায় দেশব্যাপী ২ হাজার ৫শ’ গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করে ৫০ হাজার ভূমিহীন, গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হবে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের জুনে। চলতি অর্থ বছরে এই প্রকল্পের আওতায় ১৩৫টি গুচ্ছগ্রাম তৈরি করে ৪ হাজার ৬শ’টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হবে। যাতে ব্যয় হবে ৯০ কোটি টাকা।