বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেছেন, আগামী নির্বাচন হবে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে। আওয়ামীলীগ যেভাবে চিন্তা করে সেভাবে নির্বাচন হবে না। বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও দেশের গণমানুষ যেভাবে চায় বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন সেভাবেই হবে। আগামী নির্বাচন ও সরকারের রূপরেখা কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া জাতির সামনে উপস্থাপন করবেন। এখন তারই প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আপনারা প্রস্তুত ও ঐক্যবদ্ধ থাকুন।

তিনি আরো বলেন, দেশে আইনের শাসন বলতে কিছু নেই। বিচার বিভাগের উপর হস্তক্ষেপ হচ্ছে বলে প্রধান বিচারপতি বলেছেন। আমি অনুরোধ করছি-প্রধান বিচারপতির কথা শুনুন, সর্বোচ্চ আদালতের সভাপতির কথা শুনুন। দেশে আইনের শাসন কায়েম করতে দিন। বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে চলতে দিন। কোনভাবেই আইন নিজের হাতে নিয়ে দেশকে ধ্বংস করবেন না, দেশের সংবিধানকে ধ্বংস করবেন না, দেশকে বিকিয়ে দিবেন না।

তিনি বলেন, মইনউদ্দিন ফখরুদ্দিন সরকারের সময় খালেদা জিয়াকে দেশ থেকে বের করে দেয়ার জন্য মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও লোক দেখানো মামলা হয়। কিন্তু শেখ হাসিনা নিজে ক্ষমতায় এসে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নিয়েছেন, আর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা গুলো এখনো রয়ে গেছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৪৭টি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। খালেদা জিয়া যখন বালির ট্রাক দ্বারা তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ সে সময়ে দারুস সালাম থানায় যে মামলা হয়েছে তাতেও খালেদা জিয়াকে আসামি করে চার্জশীট দেয়া হয়েছে।

তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুর শহরের বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে গাজীপুর জেলা বিএনপি আয়োজিত প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

তিনি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় এর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি বাংলাদেশ থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে কত টাকা নিয়েছেন আগামি দিনে জনগণের কাছে তার হিসাব দিতে হবে।

সভায় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম বলেন, গাজীপুরের মতো যে জেলায় পুলিশের এসপি হারুন অর রশীদ রয়েছে, সে জেলায় এখনো বিএনপি টিকে আছে তা আমার বিশ^াসযোগ্য হচ্ছে না। কারণ পুলিশের ওই কর্মকর্তা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে নানাভাবে হয়রানী ও নির্যাতন করেছে।

গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে প্রতিনিধি সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান। বক্তব্য রাখেন সাবেক এমপি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাসান উদ্দিন সরকার, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, সালাহ উদ্দিন সরকার, হুমায়ুন কবীর খান, মজিবুর রহমান, ডাঃ মাজহারুল আলম, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শিল্পপতি মোঃ সোহরাব উদ্দিন, বিএনপি নেতা আজিজুর রহমান পেরা, ইজাদুর রহমান মিলন, ড. শহিদুজ্জামান, আহমদ আলী রুশদী, সাখাওয়াৎ হোসেন সবুজ, হান্নান মিয়া হান্নু, সৈয়দ হাসান সোহেল, আখতার হোসেন বাবুল, হুমায়ুন কবীর রাজু প্রমূখ।
প্রতিনিধি সভায় গাজীপুর জেলার প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিট থেকে প্রতিনিধিরা যোগদেন। এক পর্যায়ে প্রতিনিধি সভাটি জনসভায় রূপ নেয়। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে কোন প্রকার বিরতি ছাড়াই বিকাল তিনটা পর্যন্ত এ প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আগামি দিনের আন্দোলন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং দ্রুততম সময়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন গুলোর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি গুলো পুনর্গঠনের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আগামি দুই মাসে মধ্যে গাজীপুর জেলা, মহানগর এবং অঙ্গ সংগঠন গুলোর কমিটি সমূহ গঠন করা হবে বলে জানানো হয়।

এদিকে, সভায় যোগ দিতে যাওয়ার সময় নেতা-কর্মীদেরকে পুলিশ শহরের শিববাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে বাঁধা দিয়েছে এবং লাঠিচার্জ করেছে। এতে মোবারক হোসেনসহ অন্ততঃ ২০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছে বলে জেলা বিএনপি’র সভাপতি ফজলুল হক মিলন জানিয়েছেন।