এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার এবারও রাজশাহী বোর্ডের শিক্ষার্থীদের পাসের হার সবচেয়ে বেশি। আর বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছেন ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। বোর্ড চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের অনুলিপি তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন তিনি।মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় এবার ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে, যাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন।এবার রাজশাহী বোর্ডে সবচেয়ে বেশি, ৯০ দশমিক ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। সবচেয়ে কম পাস করেছে কুমিল্লা বোর্ডে, ৫৯ দশমিক ০১ শতাংশ।গতবারও রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার সবচেয়ে বেশি ছিল, ৯৫ দশমিক ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। আর পাস সবচেয়ে কম ছিল বরিশালে, ৭৯.৪১ শতাংশ।এবার পাসের হারে বড় ধস নেমেছে কুমিল্লা বোর্ডে। গতবছর এ বোর্ডের ৮৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করলেও এবার তা এক ধাক্কায় ৬০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, এবার ঢাকা বোর্ড থেকে ৪৯ হাজার ৪৮১ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে, যা সব বোর্ডের মধ্যে বেশি।এ বোর্ডে পাসের হার ৮৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ থেকে কমে এবার ৮৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ হলেও পূর্ণ জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ হাজার ৮৩৩ জন থেকে আট হাজার ৬৪৮ জন বেড়েছে।
রাজশাহী: রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড পাসের হারের দিক দিয়ে এবার সেরা। তবে গত পাঁচ বছরের মধ্যে এই বোর্ডে এবার পাসের হার সবচেয়ে কম।এবারের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯০ দশমিক ৭০ শতাংশ।গত পাঁচ বছরের ফলাফল থেকে দেখা যায়, ২০১৩ সালে এই শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ছিল ৯৪ দশমিক ০৩ শতাংশ, ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২০১৫ সালে কিছুটা কমে পাসের হার ৯৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ হলেও ২০১৬ সালে এসে তা দাঁড়ায় ৯৫ দশমিক ৭০ শতাংশ।এবার সেই পাসের হার নেমে এসেছে ৯০ দশমিক ৭০ শতাংশে। শুধু পাসের হারেই নয়, এই বোর্ডে এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কিছুটা কমেছে। এ বছর রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৭ হাজার ৩৪৯ জন শিক্ষার্থী। গত বছর এই শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৫৯৪।এ ছাড়া শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও গতবারের চেয়ে এবার প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ বছর রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে থাকা ৪২৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। অথচ গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৮০০। এ ছাড়া ২০১৫ সালে ছিল ৯৬৯টি এবং ২০১৪ সালে ছিল ১ হাজার ৫৫টি।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড থেকে এ বছর ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৩৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ছাত্রী ৮০ হাজার ২১৯ জন এবং ছাত্র ৮৬ হাজার ৭১৯ জন। বোর্ড থেকে মোট পাস করেছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৪০৬ জন শিক্ষার্থী। শতকরা হিসাবে এটি ৯০ দশমিক ৭০ শতাংশ। ছাত্রদের পাসের হার ৯০ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৯১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮ হাজার ২৭৪ জন ছাত্রী এবং ৯ হাজার ৭৫ জন ছাত্র।বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে একটার দিকে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এই ফলাফল তুলে ধরেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তরুণ কুমার সরকার। এ সময় বোর্ডের সচিব আনোয়ারুল হক প্রাংসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কুমিল্লা:এবারের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় সারা দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার সবার নিচে। গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার এক লাফেই কমেছে ২৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। একই সঙ্গে জিপিএ-৫ কমেছে, কমেছে শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও।বিজ্ঞানে ছেলেরা এবং ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে মেয়েরা পাসের হারে এগিয়ে। কেউ পাস করেনিÑএমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা দুই।গণিত, ইংরেজিসহ অন্তত আটটি বিষয়ে খারাপ করায় ওই ফলবিপর্যয় হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এসএসসি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলের বিবরণীতে ওই তথ্য পাওয়া গেছে।কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কায়সার আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ বছর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধিভুক্ত ছয় জেলার ১ হাজার ৬৯৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৭৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। কৃতকার্য হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ১১ জন। এর মধ্যে ছেলে ৪৯ হাজার ৪৫৬ জন, মেয়ে ৫৮ হাজার ৫৫৫ জন। পাসের হার ৫৯ দশমিক শূন্য ৩। ছেলেদের পাসের হার ৫৯ দশমিক ৫১, মেয়েদের পাসের হার ৫৮ দশমিক ৬৩। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৪৫০ জন। এর মধ্যে ছেলে ২ হাজার ২৯৭ জন, মেয়ে ২ হাজার ১৫৩ জন।বিজ্ঞানে এগিয়ে ছেলেরা: এ বছর বিজ্ঞান বিভাগে ৪৭ হাজার ৯১ জন পরীক্ষা দিয়ে কৃতকার্য হয় ৩৯ হাজার ৬৩১ জন। পাসের হার ৮৪ দশমিক ১৬। এতে ছেলেদের পাসের হার ৮৪ দশমিক ৩৪, মেয়েদের পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯৫। বিজ্ঞানে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৩৩৮ জন। এর মধ্যে ছেলে ২ হাজার ২৮১ জন, মেয়ে ২ হাজার ৫৭ জন।মানবিকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩০ জন: মানবিক বিভাগে ৫৪ হাজার ৯৫৭ জন পরীক্ষা দিয়ে কৃতকার্য হয় ২২ হাজার ৬০৯ জন। পাসের হার ৪১ দশমিক ১৪। ছেলেদের পাসের হার ৩৬ দশমিক ৭০, মেয়েদের পাসের হার ৪২ দশমিক ৪৫। মানবিকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩০ জন। এর মধ্যে ২ জন ছেলে, ২৮ জন মেয়ে।
ব্যবসায় শিক্ষায় মেয়েরা এগিয়ে: ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৮০ হাজার ৯৩১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে কৃতকার্য হয় ৪৫ হাজার ৭৭১ জন। পাসের হার ৫৬ দশমিক ৫৬। ছেলেদের পাসের হার ৫২ দশমিক ২১, মেয়েদের পাসের হার ৬২ দশমিক ১৮। ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮২ জন। এর মধ্যে ১৪ জন ছেলে ৬৮ জন মেয়ে।কুমিল্লা বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) মো. শহিদুল ইসলাম জানান, গত পাঁচ বছরে, অর্থাৎ ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এবারই পাসের হার ও জিপিএ-৫ একেবারেই কমে গেছে। গত বছর এ বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৪। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৬ হাজার ৯৫৪ জন। এবার জিপিএ-৫ কমেছে ২ হাজার ৫০৪টি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও ক্রমাগতভাবে পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে।এ বছর আটটি সাধারণ বোর্ডে এসএসসিতে গড় পাসের হার ৮১ দশমিক ২১। রাজশাহী বোর্ডে সর্বোচ্চ পাসের হার ৯০ দশমিক ৭০। সর্বনিম্ন পাসের হার কুমিল্লা বোর্ডে ৫৯ দশমিক শূন্য ৩।কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ফলবিপর্যয় প্রসঙ্গে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাবেক অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘প্রশাসন এবং বোর্ড এবার নকল প্রতিরোধে কঠোর ছিল। কুমিল্লা বোর্ডের ফলাফলই দেশের প্রকৃত ফলের চিত্র। এ মডেল সব বোর্ড অনুকরণ করলে অন্যান্য বোর্ডের ফলও একই হতো।কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের দুটি বিদ্যালয় থেকে এবার কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। ওই বিদ্যালয়গুলোতে পাসের হার শূন্য ভাগ। বিদ্যালয় দুটি হলো কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাজী জাফর আহমেদ গার্লস হাইস্কুল ও একই উপজেলার পায়েরখোলা উচ্চবিদ্যালয়। এর মধ্যে যথাক্রমে কাজী জাফর আহমেদ গার্লস হাইস্কুলে ২৯ জন ও পায়েরখোলায় ৩২ জন করে শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়।কমেছে শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা: এ বছর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে। গত বছর ১১৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী পাস করেছিল। এবার শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে ১০৫টি। এর আগে ২০১৬ সালে ১১৯টি, ২০১৫ সালে ১৭৬টি, ২০১৪ সালে ১৬৭টি, ২০১৩ সালে ২৭৫টি, ২০১২ সালে ১৩০টি, ২০১১ সালে ১১২টি, ২০১০ সালে ৮৫টি, ২০০৯ সালে ৪৫টি, ২০০৮ সালে ৭২টি, ২০০৭ সালে ছয়টি, ২০০৬ সালে ৩২টি, ২০০৫ সালে ১৭টি এবং ২০০৪ সালে ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাই পাস করেছিল।
সার্বিক বিষয়ে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কায়সার আহমেদ বলেন, ইংরেজি, গণিতসহ অন্তত আটটি বিষয়ে খারাপ ফল করায় সার্বিক ফলবিপর্যয় হয়েছে। এ ছাড়া এবার খাতা মূল্যায়ন ও পরীক্ষাকেন্দ্রে কড়াকড়ি আরোপ এবং কঠোর নজরদারিও ছিল। বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবদুল খালেক বলেন, ইংরেজি ও গণিতে যেসব বিদ্যালয় খারাপ ফল করেছে, তাদের চিঠি দেওয়া হবে। পাসের হার কমার বিষয়টি বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতে ভালো করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।মাধ্যমিক পরীক্ষায় চলতি বছর যশোর শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা কমেছে। এবার এই বোর্ডে পাসের হার ৮০ দশমিক ০৪ শতাংশ। গত বছর এই হার ছিল ৯১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা গত বছরের চেয়ে প্রায় তিন হাজার কমেছে ।পাশের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা কম হলো কেনÑএমন প্রশ্নের উত্তরে যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র বলেন, নির্ভরযোগ্য নম্বর প্রদান কর্মসূচির আওতায় এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করা হয়েছে। এ কর্মসূচির মূল বিষয় ছিল, যার যে নম্বর প্রাপ্ত, সে যেন সেই নম্বর পায়। অর্থাৎ পরীক্ষার খাতায় শিক্ষার্থীর যেন যথাযথ মূল্যায়ন হয়। এই মান যাচাই নিশ্চিত করার জন্য খাতা বণ্টনের আগে প্রধান পরীক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ বছর খাতা যথাযথ মূল্যায়নের কারণে ফলাফল একটু খারাপ হলেও শিক্ষার গুণগত মান বেড়েছে বলে তিনি দাবি করেন।পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, পদার্থ বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে ছেলেমেয়েরা একটু খারাপ করেছে। তবে ফেল করার মতো প্রশ্ন হয়নি। হয়তো ৮০-এর বেশি নম্বর ওঠানো তাদের জন্য কষ্টকর ছিল। গণিত বিষয়ে পাসের হার সবচেয়ে কম। আর জিপিএ-৫ পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে সবচেয়ে কম। এটিও ফল খারাপ হওয়ার জন্য একটি বড় কারণ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ হাজার ৪৬০ জন। যেখানে গত বছর পেয়েছিল ৯ হাজার ৪৪৪ জন। চলতি বছর ৩ হাজার ৫২৪ জন ছেলে আর ২ হাজার ৯৩৬ জন মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে।যশোর বোর্ডের অধীনে এ বছর ২ হাজার ৫০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৭৩ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ১৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। কেউ পাস করেনি এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা রয়েছে দুটি। এ দুটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার আবদুল আজিজ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সাতক্ষীরার তালা উপজেলার উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এ দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে যথাক্রমে পাঁচ ও চারজন শিক্ষার্থী এবার পরীক্ষায় অংশ নেয়।এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, জানতে চাইলে মাধব চন্দ্র রুদ্র বলেন, ‘শূন্য পাসের হারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে স্বীকৃতি বাতিলসহ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ পাঠানো হবে।

বরিশাল: বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় পাশের হার ৭৭ দশমিক ২৪ শতাংশ।এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ২৮৮জন শিক্ষার্থী । পাশ ও জিপিএ’র হারে ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা ।বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো: আনোয়ারুল আজিম।তিনি বলেন, এবছর ৯৩ হাজার ৬৭৬ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ছাত্র ৪৭ হাজার ৩৬১ জন ও ছাত্রী ৪৬ হাজার ৩১৫ জন । আর পাশ করেছে ৭২ হাজার ৩৫৮ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ৩৫ হাজার ৩৯১ জন ও ছাত্রী ৩৬ হাজার ৯৬৭ জন। ছাত্রীদের পাশের হার ৭৯ দশমিক ৮২ ও ছাত্রদের ৭৫ দশমিক ৭৩।জিপিএ-৫-এর মধ্যে ছেলেরা পেয়েছে ১ হাজার ৩৩টি ও মেয়েরা ১ হাজার ২৫৫টি। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ রয়েছে ২ হাজার ১১৭টি, মানবিক বিভাগে ৯৪ ও বাণিজ্য বিভাগে পেয়েছে ৭৭টি জিপিএ-৫।অন্যদিকে বিভাগে পাশের হারে ৮২ দশমিক ৭৮ ভাগ নিয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে ঝালকাঠী জেলা। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে এবার ১ হাজার ৪১৪টি স্কুল থেকে ৯৩ হাজার ৬৭৬ পরীক্ষার্থী ১৪৮টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।গত বছর বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে পাশের হার ছিলো ৭৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। চলতি বছর পাশের হার কমেছে ২ দশমিক ১৭ ভাগ।
চট্টগ্রাম: মাধ্যমিক পরীক্ষায় এ বছর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাসের হারের পাশাপাশি জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে।সার্বিকভাবে এবার দশ বোর্ডে ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে, যাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন।চট্টগ্রাম বোর্ডে এবার পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ, যা গতবছর ৯০ দশমিক ৪৫ শতাংশ ছিল।এ বোর্ডের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৮ হাজার ৩৪৪ জন এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে। গতবছর পূর্ণ জিপিএ পেয়েছিল ৮ হাজার ৫০২ জন।বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ফল ঘোষণা করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান জানান, এবার ১ লাখ ১৭ হাজার ৮৯৭ জন শিক্ষার্থী এসএসসিতে বসেছিল, তাদের মধ্যে ৯৯ হাজার ২২ জন পাস করেছে।গতবার ১ লাখ ১৩ হাজার ৭০ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছিল ১ লাখ ২ হাজার ২৬৪ জন।বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের তুলনায় মানবিকের পাসের হার বরাবরই কম থাকে। তবে এবার চট্টগ্রাম বোর্ডে মানবিকের পাসের হার কমে গেছে প্রায় ১০ শতাংশ পয়েন্ট।চট্টগ্রাম বোর্ডে এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৯২ দশমিক ০৭ শতাংশ, মানবিকে ৭৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৮৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে।গতবার উত্তীর্ণ হওয়ার হার ছিল বিজ্ঞানে ৯৫ দশমিক ৯১ শতাংশ, মানবিকে ৮৩ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৯১ দশমিক ৬২ শতাংশ।এবছর বিজ্ঞান বিভাগে ৭ হাজার ৪৩৩ জন, মানবিকে ৪৩ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৮৬৮ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবার কলেজিয়েট স্কুল থেকে সবচেয়ে বেশি- ৪২৪ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এরপরই আছে সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়; ৩৫৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে এ স্কুল থেকে। এছাড়া ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ২৮৪ জন, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৮০ জন, নাসিরবাদ (বালক) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২২২ জন, নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১৯৬ জন, চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯৫ জন, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯৩ জন, বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৬৪ জন ও কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৩৪ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।এবছর চট্টগ্রাম বোর্ডে ৫৬টি স্কুলের শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছে এবং একটি স্কুলের কোনো পরীক্ষার্থী পাস করতে পারেনি বলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান।তিনি বলেন, ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়ন হাট গার্লস হাই স্কুল থেকে এবটর নয়জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। তাদের একজনও পাস করেনি।