ক্ষমতায় গেলে ২০৩০ সাল নাগাদ বিএনপি বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চায়, তার রূপরেখা ‘ভিশন ২০৩০’ নিয়ে শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনে আসছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা সরকার পরিচালনার দায়িত্বে গেলে কি কি কাজ করব, ২০৩০ সালে কীভাবে আমরা দেশকে দেখতে চাই, সেই স্বপ্নটা কীভাবে জাতিকে দেখাতে চাই-সেই বিষয়গুলো এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করব।শুক্রবার সকালে স্কয়ার হাসপাতালে বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী সাহেরা হোসেনকে দেখার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে ভিশন ২০৩০ নিয়ে কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

খালেদা জিয়া আগামী ১০ মে ওই সংবাদ সম্মেলনে আসছেন বলে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে খবর এলেও ফখরুল বলেন, বিষয়টি নির্ভর করবে ভেনুর প্রাপ্যতার ওপর। তবে ‘শিগগিরিই’ এই সংবাদ সম্মেলন হবে।আমাদের জাতীয় কাউন্সিলে ম্যাডামের (বেগম খালেদা জিয়া) বক্তব্যে ভিশন ২০৩০ এর রূপরেখা দেওয়া হয়েছিল, সেটা ছিল আউটলাইন। এখন পূর্ণাঙ্গ করে দেওয়া হবে। এটার সঙ্গে নির্বাচনী ইশতেহার বা নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখার কোনো সম্পর্ক নেই।ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত সাহেরা হোসনকে গত সোমবার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।মির্জা ফখরুল হাসপাতালে গিয়ে তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন এবং সাহেরার ছেলে খোন্দকার আকবর হোসেন বাবুল, খোন্দকার আখতার হামিদ ডাবলু ও মেয়ে দেলোয়ারা হোসেন পান্নার সঙ্গে কথা বলেন।বিএনপির পল্লী উন্নয়ন বিষয় সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী ও নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদারও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে দেশে গণতন্ত্র নেই, বিচার বিভাগ স্বাধীন ভূমিকা পালন করতে পারছে না।মর্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি বারবার বলেছে, যে দেশে গণতন্ত্র থাকে না, সে দেশে বিচার বিভাগের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করতে পারে না। সরকার বিচার বিভাগের ওপর চাপ সৃষ্টি করলে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। বিএনপি এ কথাগুলো বলে এলেও অনেকে সেটা বুঝতে পারেননি।আরেক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, হাওর অঞ্চলে ত্রাণ তৎপরতা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সরকারের উচিত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাকে অবিলম্বে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা এবং সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া।

এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কিছু দিনের মধ্যেই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।খন্দকার মোশাররফ বলেন, অনেকে বলছে- আপনারা নির্বাচনে যাবেন না? যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, জনগণ ভোট দিতে পারে তাতে যেতে বিএনপি রাজি।নির্বাচন নিয়ে নানা রকম ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, গায়ের জোরে টিকে থাকার জন্য। দেশনেত্রী নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তা সরকার রাখে নাই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাকে নিয়ে প্রশ্ন তুলে এই বিএনপি নেতা বলেন, একজন আমলা যিনি জনতার মঞ্চে উঠেছিলেন সেই চিহ্নিত সাবেক আমলাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করেছেন। উদ্দেশ্য তাকে দিয়ে ভোট লুট করতে হবে।নির্বাচন কমিশনে যারা রয়েছেন তারা প্রশ্নাতীত নয়, আমরা তাদের সন্দেহ করি। কিন্তু এটাও বিশ্বাস করি, যদি নির্বাচনকালে একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনও বাধ্য হবে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে। সে লক্ষ্যে আগামী কিছু দিনের মধ্যেই দেশনেত্রী খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের একটি প্রস্তাব দেবেন।

পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে কী কী করতে হবে সে বিষয়ে খালেদা জিয়া ১০ মে ‘ভিশন ২০৩০’ তুলে ধরবেন বলে জানান খন্দকার মোশাররফ।বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দিলেই তা বাস্তবায়ন হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা রূপরেখা দিলাম আর শেখ হাসিনা সঙ্গে সঙ্গে মেনে নেবেন। এটা কেউ আশা করে না। তাই আগামী নির্বাচনের আগে একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করতে হবে।এই দাবি আদায় করতে না পারলে ২০১৪ সালের মতো আবারও ভোট ডাকাতির’ চেষ্টা হবে মন্তব্য করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আপনি একবার এদেশের জনগণকে এবং বিদেশি বন্ধুদের ব্লাফ দিয়েছেন, প্রতারণা করেছেন। দ্বিতীয়বার করতে পারবেন না। বিগত নির্বাচনের সময় শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন, আমরা অতি শীঘ্রই নির্বাচন দেব। কিন্তু শেখ হাসিনা দেয় নাই।

২০১৪ সালের পর দেশে অনুষ্ঠিত কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আগের দিন রাতে বাক্স ভর্তি করে কেন্দ্র দখল করে নিজেদের ভোট নিজেরা দিয়েছে।জনগণ ভোট দিলে তাদের কোনো পাত্তা থাকবে না। জনগণ ভোট দিতে পারলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জামানত রক্ষা করা সম্ভব হবে না।গত শনিবার চট্টগ্রামেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এক বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, উনি বলেছেন নির্বাচনে পাশ না করলে কর্মীদের পিঠের চামড়া থাকবে না। নিশ্চয় অপকর্ম, দুর্নীতি, লুটপাট করেছেন- তাই ধারণা হয়েছে পালাতে পারবেন না।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই সরকার ও সংসদের বৈধতা নেই। বৈধতার প্রশ্ন এমন পর্যায়ে গেছে যে, বাংলাদেশের জনগণ ও বিদেশি গণতান্ত্রিক শক্তির চাপে আছে।আরেকটি অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের আবার ক্ষমতায় যেতে দেওয়া যাবে না। আগামী নির্বাচনে মানুষ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে প্রতিবাদী ভোট দিয়ে আসবে। আমীর খসরু বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ স্বভাবগতভাবে জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে।বিএনপি নাকি নির্বাচনে না গেলে নিবন্ধন চলে যাবে। আরে মশায়, বিএনপির নিবন্ধন বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের সাথে। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বিএনপির জন্য দরকারি কিছু নয়।