টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে রাঙামাটি, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে ২৯ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রাঙামাটিতে ১৯ জন, বান্দরবানে ছয়জন ও চট্টগ্রামে চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে এসব লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় গাছচাপা পড়ে একজন এবং কর্ণফুলী নদীতে এক যুবক নিখোঁজ রয়েছেন।

 

নিহতদের মধ্যে আটজনের নাম পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন রুমা আক্তার, নুড়িয়া আক্তার, হাজেরা বেগম, সোনালী চাকমা, অমিত চাকমা, আইয়ুস মল্লিক, লিটন মল্লিক, চুমকি দাস। এঁরা শহরের যুব উন্নয়ন ও ভেদভেদি এলাকায় বসবাস করতেন।

রাঙামাটির কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহম্মদ রশীদ বলেন, ‘এটা একটা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। মৃতের সংখ্যা আরো অনেক বাড়বে। শহরের যুব উন্নয়ন, ভেদভেদি, শিমুলতলী, রাঙাপানিসহ অনেক স্থানেই এখনো মানুষ মাটিচাপা পড়ে আছে।’ এদিকে, জেলার কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের কারিগরপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে উনু চিং মারমা (৩০) ও নিকি মারমা (১২) নামের দুজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছায়া মং মারমা।

এ ছাড়া উপজেলায় গাছচাপা পড়ে আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন। তিনি আরো জানান, কর্ণফুলী নদীতে ইকবাল নামের এক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন।
এদিকে, রাঙামাটি শহরের অধিকাংশ এলাকাই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। এতে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে বাড়তি ইউনিট কাজে যোগ দিতে আসছে।

চট্টগ্রামের প্রতিনিধি শামসুল হক হায়দরী জানিয়েছেন, চন্দনাইশ উপজেলায় পাহাড় ধসে শিশুসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন দুজন। গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। ধোপাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু ইউছুপ চৌধুরী এ তথ্য জানিয়েছেন। আবু ইউছুপ চৌধুরী জানান, পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী আসগর আলীর কাঁচা ঘরের ওপর মাটি ধসে পড়ে। এ ঘটনায় আজগর আলীর শিশুকন্যা মাহিয়া মাটির নিচে চাপা পড়ে মারা যায়।

এ ছাড়া ছনবুনিয়া উপজাতিপাড়ায় একটি ঘরের ওপর পাহাড় ধসে একই পরিবারের দুই শিশু কেউচা কেয়াং (১০), মেমাউ কেয়াং (১৩) এবং গৃহবধূ মোকাইং কেয়াং (৫০) নিহত হন। এ ঘটনায় ওই পরিবারের সানুউ কেয়াং (২১) ও বেলাউ কেয়াং (২৮) নামের আরো দুজন আহত হয়েছেন। তাঁদের বান্দরবান হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউছুপ চৌধুরী।

আজ মঙ্গলবার ভোরে বান্দরবানের টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে বান্দরবানে শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। লেমুঝিরি ভিতরপাড়া থেকে একই পরিবারের তিন শিশু, আগাপাড়ায় মা-মেয়ের এবং কালাঘাটায় এক কলেজছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী স্টেশন অফিসার স্বপন কুমার ঘোষ। নিহতরা হলেন লেমুঝিরির বাসিন্দা সমুন বড়ুয়ার তিন সন্তান শুভ বড়ুয়া (৮), মিতু বড়ুয়া (৬) ও লতা বড়ুয়া (৪), আগাপাড়ার কামরুন নাহার (২৭) ও তাঁর মেয়ে সুখিয়া আক্তার (৮) এবং কালাঘাটার কলেজছাত্র রেবা ত্রিপুরা (১৮)। এ সময় আহত আরো পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানান ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা।

এদিকে, অব্যাহত বর্ষণে ভোররাতে বাজালিয়ায় সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস জানায়, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে গত রোববার থেকে বান্দরবানে টানা ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বর্ষণে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের বাজালিয়া, রাঙামাটি সড়কের পুলপাড়া বেইলি ব্রিজ তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, পাহাড় ধসে রুমা উপজেলার সঙ্গেও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে দুদিন ধরে। অবিরাম বর্ষণে বান্দরবানে কয়েক সহস্রাধিক ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। দুর্গত এলাকার মানুষ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন।