ঈদে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন দিনের ছুটি শেষ হচ্ছে মঙ্গলবার। বুধবার সরকারি অফিস আদালত ব্যাংক বিমা খুলবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদের সরকারি ছুটি নির্ধারিত ছিলো ২৫,২৬ ও ২৭ জুন (রবি, সোম ও মঙ্গলবার)। শনিবার ২৫ জুন দেশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় সরকারি নির্ধারিত ছুটির ব্যত্যয় ঘটেনি। তবে বুধ ও বৃহস্পতিবার এই দুইদিন অফিস করার পর আবার শুক্র ও শনিবার দুদিনের সাপ্তাহিক ছুটি রয়েছে। এ কারণে অনেকেই বুধ ও বৃহস্পতিবারের জন্য ছুটি নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে গেছেন। তবে অফিসে যাদের উপস্থিতি অত্যাবশ্যক বুধবার অফিস খোলার দিনে তাদের ফিরতেই হবে।

জানা গেছে, বুধবার সকাল ৯টায় প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়সহ সরকারি সব অফিস, ব্যাংক, বিমা খুলবে। তবে অতীতে দেখা গেছে, ঈদের ছুটি শেষে অফিস খোলার দিনে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতি কম থাকে। ঈদ শেষ হলেও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলি থাকবে এদিনের মূল অনুষঙ্গ। এদিকে, চলতি ১০ম সংসদের ষষ্ঠদশ অধিবেশন মুলতবি থাকার পর বুধবার আবারও শুরু হবে। তাই ঈদের ছুটিতে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও সংসদ সদস্যদেরও এদিন ঢাকায় ফেরার তাড়া রয়েছে। ৩০ মে শুরু হওয়া এ অধিবেশন হচ্ছে চলতি বছরের বাজেট অধিবেশন। সংসদের জন্য এদিনটা গুরুত্বপূর্ণ।কারণ, আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা প্রায় শেষ। এদিন বিকাল চারটায় সংসদ অধিবেশন পুনরায় শুরু হওয়ার পর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেত্রী শেখ হাসিনা । তার দিক নির্দেশনামূলক বক্তৃতার ওপর ভিত্তি করেই চূড়ান্ত হবে নতুন বাজেট। প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তৃতার পরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সমাপনী বক্তৃতা করবেন। তার বক্তৃতার পর এদিন অর্থবিল ২০১৭-১৮ পাস হবে। আর ২৯ জুন বৃহস্পতিবার পাস হবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের নতুন বাজেট।ঈদের আগে সরকারি চাকরিজীবীদের শেষ অফিস ছিল গত বৃহস্পতিবার ২২ জুন। ২৩ জুন ছিলো শুক্রবার শবেকদর। ২৪ জুন ছিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি, ২৫ থেকে ২৭ জুন ঈদের ছুটি এবং মাঝে ২৮ ও ২৯ জুন অফিস খোলা। ৩০ জুন শুক্রবার ও ১ জুলাই শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। অর্থাৎ ২৮ ও ২৯ জুন অফিস বন্ধ থাকলে ২৩ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত ৯ দিন ছুটি কাটিয়ে ২ জুলাই থেকে অফিস শুরু হবে।এ ক্ষেত্রে অনেকেই প্রত্যাশা করেছিলো যে সর্বশেষ গত সোমবারের মন্ত্রিপরিষদের নিয়মিত বৈঠকে হয়তো ওই ২দিনের ছুটির জন্য একটি নির্বাহী আদেশ হতে পারে।গত কয়েক বছর ধরেই ঈদের ছুটি বাড়ানো নিয়ে বিতর্ক চলছে। গত বছর ঈদের ছুটি বাড়িয়ে তা আবার সাপ্তাহিক ছুটি শনিবারের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। তখন অনেকেই বদলি ছুটির পরিবর্তে নৈমিত্তিক ছুটির সঙ্গে সরকারি ছুটি সমন্বয়ের তাগিদ দেন।

ঈদের ছুটি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সময় পুলিশের পক্ষ থেকেও সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তাদের যুক্তি হচ্ছে, মাত্র তিন দিন ছুটি থাকায় একসঙ্গে প্রচুর লোক ঢাকা ও বিভিন্ন শহর থেকে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় ঘরমুখো মানুষ নানা হয়রানির মুখে পড়ে। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ইনোভেশন টিম থেকে ঈদের ছুটি দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করা হয়েছিলো।এর আগে অবশ্য ৬ জুন ঈদের ছুটি দ্বিগুণ করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিলোসাভারের হেমায়েতপুরের একটি দরজির দোকান চালান মো. জিয়া। গ্রাহকদের পোশাক তৈরির কাজের চাপ থাকার কারণে ঈদের আগে বাড়িতে যেতে পারেননি। তাই ঈদের পরদিন তিনি গাবতলীতে আনন্দ পরিবহনে করে গ্রামের বাড়ি মাগুরা সদরে যাচ্ছেন বউ-ছেলে নিয়ে। জিয়া বলেন, ‘কী করব? ঈদের আগে যেতে পারলাম না, তাই ঈদের পরদিনই যাচ্ছি। ফিরব পাঁচ-ছয় দিন পর।

জিয়ার মতো আরও অনেকে ঈদের পরদিন ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন বাসে করে। সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, কাউন্টারগুলোর সামনে ঘরমুখী মানুষের ভিড়। কেউ আসছে গ্রামের বাড়ি থেকে আবার কেউবা গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন প্রিয়জনদেও সঙ্গে দেখা করতে। একই অবস্থা রাজধানীর আরেক ব্যস্ত বাস টার্মিনাল মহাখালীতেও।গাবতলী থেকে উত্তরবঙ্গে চলাচল করে উত্তরণ কোস সার্ভিস। বাসটির ব্যবস্থাপক রথী দেবনাথ বলেন, আমাদের দুটি বাস ঢাকা থেকে রংপুর-সৈয়দপুর গন্তব্যে চলাচল করে। দুটি বাসেই পূর্ণ যাত্রী ছিল। মানুষ আজও বাড়ি ফিরছেন।গাবতলী হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক দুলাল ঘোষ বলেন, ঈদের পরদিনও যাত্রীর ভালো চাপ আছে, বিশেষ করে বগুড়া, নওগাঁ, দিনাজপুর, রংপুর এলাকার মানুষ বেশি যাচ্ছেন বাড়িতে।কাজের চাপ থাকায় বাড়িতে যেতে পারেননি মো. সোহেলও। তিনি ইসলামপুরে একটি পোশাকের দোকানে কাজ করেন। বাড়ি নওগাঁর রানীনগরে। সোহেল বলেন, ‘কাজের চাপ ছিল আর মালিকের সঙ্গে হিসাব-নিকাশ ছিল, তাই ঈদে যাইতে পারিনি। এ কারণে আজকেই যাচ্ছি।সাতক্ষীরা গন্তব্যের বাস এন পি গোল্ডেন লাইন। বাসটির কাউন্টারের সামনে মানুষের ভিড়। সবাই বাড়ি ফেরার টিকিট কিনছেন। বাসটির গাবতলী কাউন্টারের ব্যবস্থাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকে আমাদের ছয়টি বাস ঢাকা ছেড়ে গেছে। ৪০ সিটের বাসের প্রায় প্রতিটিই পূর্ণ ছিল।’ তিনি জানান, যেসব মানুষ ঈদের আগে যেতে পারেননি, তাঁরা আজ ফিরছেন। আজ রাত পর্যন্ত মানুষ ফিরবেন। আগামীকাল যাত্রীর চাপ বেশি থাকবে না বলে মনে করেন তিনি।সরকারি চাকরি করেন পেশায় পশুচিকিৎসক হাবিবুর রহমান খান। তাঁর কর্মস্থল সিলেটে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকায় এসেছিলেন। আজ যাবেন নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় গ্রামের বাড়িতে। সেখানে ছোট ভাই ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কয়েকটা দিন কাটাবেন। বাস ধরতে তাই এসেছেন মহাখালী বাস টার্মিনালে।হাবিবুর রহমান খানের মতো এমন অনেকেই ঈদের পরদিন বাড়ি ফেরার পথ ধরেছেন। কেউ ঈদের আগের ভিড়ভাট্টায় চিড়েচ্যাপ্টা হতে চাননি। আবার অনেকে ঈদের আগের ব্যস্ততায় সময় বের করতে পারেননি। তাই ঈদের পরদিন এসেছেন বাস ধরতে।মহাখালী বাস টার্মিনালের অন্তত ১০টি পরিবহন কোম্পানির টিকিট কাউন্টারে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে যাত্রীদের আসা যওয়ার ভিড় ছিল বেশি। দুপুরের দিকে যাত্রী কিছুটা কমে আসে। তবে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে যাত্রীর ভিড় ছিল বেশি। এ ছাড়া ঢাকা থেকে সিলেট, বগুড়া, নওগাঁ ও সিরাজগঞ্জের রুটেও যাত্রীর চাপ ছিল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঢাকার বাইরে থেকে খুব কম যাত্রী নিয়ে বাস আসছে। আর ঢাকা ছাড়ছে তুলনামূলক বেশি যাত্রী নিয়ে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে চলে এনা ট্রান্সপোর্ট (প্রা.)লিমিটেডের বাস।সকাল থেকেই এর টিকিট কাউন্টারে যাত্রীর চাপ বেশি।বিশ্রামকক্ষে বসে আছেন অনেক যাত্রী। এনা ট্রান্সপোর্টের ম্যানেজার আব্রাহাম উজ্জ্বল বলেন, যাওয়ার যাত্রী বেশি। ময়মনসিংহ থেকে গাড়ি আসছে জনা দশেক যাত্রী নিয়ে। ঢাকায় ফেরার মানুষ অনেক কম।ঢাকা থেকে বগুড়া ও নওগাঁর উদ্দেশে বাস চালায় শাহ্ ফতেহ আলী পরিবহন। টিকিট কাউন্টারের মাস্টার মো. আমিনুল জানালেন, প্রায় খালি গাড়ি ঢাকায় ঢুকছে। দুপুর পর্যন্ত যাওয়ার টিকিট বেশি বিক্রি হয়েছে।সিলেট ও সুনামগঞ্জ রোডে চলা বাসের টিকিট কাউন্টারে বেশ ভিড় লক্ষ করা গেছে। কথা হয় ফখরুল আজম নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। ঈদের আগের ভিড়ে বাড়ি যেতে চাননি তিনি। তাই ঈদের পরদিন সুনামগঞ্জ যাচ্ছেন।মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি মো. শওকত আলী বলেন, ঈদের পরদিন যাওয়ার যাত্রীই বেশি থাকে। ঢাকায় ফেরার চাপ এখনো তৈরি হয়নি। তবে বিকেল থেকে ঢাকায় আসার যাত্রীর পরিমাণ বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।