এয়ারটেলকে সঙ্গে নেয়ার দীর্ঘ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে একীভূত কোম্পানির লাইসেন্স হাতে পেয়েছে রবি। একীভূতকরণের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির পর গ্রাহকদের আরও কার্যকর সেবা দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মোবাইল অপারেটরটি। প্রতিষ্ঠান বড় হওয়ায় টেলিকমখাতে আরও বেশি বিনিয়োগের আশ্বাসও দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ইতিহাসে টেলিকমখাতের সবচেয়ে বড় অংকের এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়াকে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে নিয়েছিলো সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)।

তবে শেষ পর্যন্ত দেশের মোবাইলফোন অপারেটরদের বাজারে ভারসাম্য আসবে এই প্রত্যাশায় সেই চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবেলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। আইন-নীতিমালা থেকে একচুল না নড়ে পুরো প্রক্রিয়ায় সাধ্যমত ছাড় দিয়ে এই একীভূতকরণের ইতিহাস গড়া হয়েছে বলে জানান বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড.শাহজাহান মাহমুদ।

আজ শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রবির ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও মাহতাব উদ্দিনের হাতে একীভূত কোম্পানির লাইসেন্স তুলে দেয়ার অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী এবং বিটিআরসি চেয়ারম্যান এসব কথা জানান।
তারানা হালিম বলেন, ‘দেশের মোবাইল বাজারে ভারসাম্য আনতেই রবির সঙ্গে এয়ারটেলের একীভূতকরণে জোর দিয়েছি আমরা। কাজটি যথেষ্ট কঠিন ছিলো, টেলিকমখাতে এত বড় মার্জার (একীভূতকরণ) আর হয়নি। তবে বিধি মেনে, বিটিআরসির গাইডলাইন এবং ফি প্রক্রিয়াগুলোয় স্বচ্ছতা রেখে এটা করতে পেরেছি। লেভেল প্লেইংফিল্ড তৈরিতে এটা দরকার ছিলো। দেশে টেলিকমখাতে বিদেশী বিনিয়োগেও এর সুফল আসবে। রবি বড় হওয়ায় এখন বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে রবির পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান আজিয়াটা। তবে এখনি কত টাকার অংকটা বলা যাচ্ছে না।’

বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর রবির সঙ্গে এয়ারটেলের এই বিপুল অংকের একীভূতকরণটা প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিলো ড.শাহজাহান মাহমুদের জন্য।

তিনি বলেন,‘দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম কাজটি ছিলো এই একীভূতকরণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা। অন্যান্য দেশে এরকম বড় বড় প্রতিষ্ঠানের একীভূতকরণ হলেও বাংলাদেশে এরকম আগে হয়নি। তাই একীভূতকরণের কোনোরকম গাইডলাইন ছিলো না। এজন্য গাইডলাইন, আইনিপ্রক্রিয়া এবং ফি নির্ধারণ এবং ফি নিয়ে অপারেটর দু’টির সঙ্গে বোঝাপড়াটা বিটিআরসিকে করতে হয়েছে। আসলে এজন্য ছাড়ও দিতে হয়েছে। দেশের টেলিকম বাজারে ভারসাম্য আনতেই এই ছাড় দিতে হয়েছে।’
একীভূত কোম্পানির লাইসেন্স হাতে পাওয়ার পর রবি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, “রবি’র লক্ষ্য পরবর্তী প্রজন্মের ডিজিটাল কোম্পানিতে রূপান্তরিত হওয়া। এয়ারটেলের সাথে সফলভাবে একীভূত হওয়ার পর আমাদের সে প্রত্যয় আরো দৃঢ় হয়েছে। গ্রাহককেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের নেটওয়ার্কের আওতায় একই সাথে রবি ও এয়ারটেল উভয় গ্রাহকদের সেবা দেয়ার সুযোগ পেয়ে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। রবি-এয়ারটেল নেটওয়ার্ক সমন্বয়ের ফলে অন-নেট কল সুবিধা এবং এয়ারটেল গ্রাহকদের বিস্তৃত নেটওয়াকর্কের আওতায় আনতে পারায় আমরা ইতোমধ্যে গ্রাহকদের মন জয় করেছি। টেলিযোগাযোগ খাতের প্রথম এবং দেশের ইতিহাসে বৃহত্তম একীভূতকরণের সুযোগ দেয়ার জন্য আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।”

উচ্চ আদালতের অনুমোদনের ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে রবি আজিয়াটা লিমিটেড (রবি) ও এয়ারটেল বাংলাদেশ লিমিটেড (এয়ারটেল) একীভূত কোম্পানি রবি হিসেবে এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। রবি’র একটি স্বাধীন ব্র্যান্ড হিসাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এয়ারটেল।