১৫ই আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসে ব্যানার ছেঁড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইউনুচ গণি চৌধুরী ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী অনুসারীদের মধ্যে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ফাঁকা গুলি বর্ষণ ও দেশীয় অস্ত্রের মহড়া। এতে আতঙ্কিত হাটহাজারীবাসীর দিন কাটছে চরম নিরাপত্তাহীনতায়। এছাড়া অনুসারীরা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মহড়া দিতে গিয়ে উভয় পক্ষ জড়িয়ে পড়ছে সংঘর্ষে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও কলেজ শিক্ষার্থীরা জানান, বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইউনুচ গণি চৌধুরীর অনুসারীরা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মহড়া দিতে দেখা গেছে। ইউনুচ গণি চৌধুরীর অনুসারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হাসান নেতৃত্বে সকাল ১১টায় দিকে শতাধিক নেতাকর্মী দেশীয় তৈরী অস্ত্র-শস্ত্র, লাটি-সোঠা নিয়ে হাটহাজারী কলেজে প্রবেশ করে মহড়া দিতে থাকে এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী অনুসারীদের হন্য হয়ে খোঁজতে থাকে। তবে ইউনুচ গণি চৌধুরীর অনুসারীরা এমন ঘটনা ঘটতে পারে এ আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী অনুসারীরা কলেজ ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিল।

পরে কলেজের ছাত্র মিলনায়তন থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে ক্যাম্পাসে ত্রাস সৃষ্টির জন্য প্রায় ৮-১০ রাউন্ড দিয়ে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। এ সময় তারা কলেজের বিজ্ঞান ভবনে জানালা ভাংচুর করে। এ সময় কলেজের শিক্ষার্থীরা ভয়ে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে দিববিদিক ছুটাছুটি করতে দেখা গেছে। এছাড়া রাওয়াত বিন জাফর (১৭) নামে কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী অনুসারী মনে করে ধারালো রাম দা দিয়ে কোমরে ও হাতে কুপিয়ে মারাতকভাবে আঘাত করে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এরপর তারা উপজেলা গেইট থেকে শুরু করে হাটহাজারী কলেজ গেইট, কাচারী সড়ক, বাজার হয়ে বাসস্টেশন চত্তরে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সভা করে আবার পূনরায় রাঙ্গামাটি সড়ক হয়ে জাগৃতি ক্লাবের সামনে এসে মিছিলটি শেষ করে। উক্ত প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে কয়েকটি ফাঁকা গুলি ও দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিতে দেখা গেছে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।এ ব্যাপারে ইউনুচ গণি চৌধুরীর অনুসারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ১৫ই আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসে আমাদের ব্যানার যারা ছিঁড়েছে তারা প্রকৃত রাজনীতিবিদ বা ছাত্রলীগের কেউ নন। তারা হলেন ইয়াবা ব্যবসায়ী, মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী। তাদের স্থান হাটহাজারীতে হবে না। তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য আজকে আমাদের এই প্রতিবাদ সভা।

এদিকে, গত বুধবার (১৬ আগস্ট) দিবাগত রাত এগারটায় উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের চবি ১ নম্বর গেইটস্থ সইজ্যা পাড়ায় এলাকায় ৭/৮টি মোটর সাইকেল ও ২টি সিএনজি চালিত অটোরিক্শা যোগে অজ্ঞাতনামা ২৫ থেকে ৩০ জন যুবক অন্তত ৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। এ সময় এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এরপরই থেমে থেমে আরো অন্তত ১৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। রাতের অন্ধকারে চলতে থাকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ওই এলাকায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী সমর্থক মিজানুর রহমান এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইউনুচ গণি চৌধুরীর অনুসারী ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হাসান বসবাস করেন। ঘটনার জন্য এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দায়ী করছে। পরে রাত ৩টা পর্যন্ত থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

বিষয়টির ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ও হাটহাজারী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান জানান, তিনি চবি ২নং গেইট এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন প্রায় দুই বছর ধরে। গ্রামের বাড়ির বাসার সামনে কয়েকজন নেতাকর্মীকে নিয়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনাকালে সময় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক হাসানের নেতৃত্বে অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জন তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় তারা অন্তত ৯ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। এ সময় তাদের পিটুনিতে ছাত্রলীগ কর্মী আরাফাত (২০) আহত হন।আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলার দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে এমনটা স্বীকার করে হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ বেলাল উদ্দীন জাহংগীর মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা কোন গ্র“পকে ছাড় দিচ্ছি না। ঘটনার খবর পাওয়া মাত্র আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এনেছি এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করছি।