একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিকল্প রাজনৈতিক জোট’ বা ‘বৃহত্তর রাজনৈতিক শক্তির উত্থান’ ঘটাতে ‘জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও কামাল হোসেন।বৃহস্পতিবার বিকল্পধারা সভাপতি বি চৌধুরীর প্যাডে তার প্রেস সচিব জাহাঙ্গীর আলমের স্বাক্ষরে গণমাধ্যমে পাঠানো তাদের যৌথ ঘোষণার কথা জানানো হয়।সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির এক সময়ের নেতা বি চৌধুরী এবং গণফোরাম সভাপতি ও আওয়ামী লীগের এক সময়ের নেতা কামাল হোসেন দুই প্রধান জোটের বাইরে আলাদা জোট গড়তে সক্রিয় রয়েছেন।তাদের যৌথ ঘোষণায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করে বলা হয়, এই পরিস্থিতিতে জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি অহিংস বিকল্প রাজনৈতিক ধারা গড়ে তোলা সময়ের দাবি।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে এনডিএফ নামে একটি জোট গঠন করেছিলেন বি চৌধুরী, যাতে কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগের আবদুল কাদের সিদ্দিকী এবং জাসদের (জেএসডি) নেতা আ স ম আবদুল রবও ছিলেন।এবারও একটি জোট গঠনের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন বি চৌধুরী, এই প্রক্রিয়ায় কামাল হোসেনের পাশাপাশি নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাও যুক্ত রয়েছেন।২০১২ সালে এই অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও কামাল হোসেন

২০১২ সালে এই অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও কামাল হোসেনতার আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় যুক্তফ্রন্ট গড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন বি চৌধুরী ও কামাল হোসেন। তারপর ২০১২ সালে একবার তারা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। যৌথ ঘোষণায় একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলা হয়, দেশকে যারা ভালোবাসেন, যারা দেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী, তাদেরকে একটি প্রগতিশীল, পাহাড় ও সমতলের মানুষসহ সকল সম্প্রদায়ের পূর্ণ অধিকার সম্পন্ন একটি বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়া আহবান জানাচ্ছি।রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার ‘অর্থবহ পরিবর্তনের’ লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানান প্রবীণ এই দুই রাজনীতিক।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা তো দীর্ঘদিন ধরেই একটি জাতীয় ঐক্যের কথা বলে এসেছি। এটি আজকে যৌথভাবে দিলাম। আর এটি একেবারেই প্রাথমিক আহ্বান, সবাই আমাদের ডাকে আশা করি সাড়া দেবে।

যৌথ ঘোষণায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার পটভূমি ব্যাখ্যা করে বলা হয় ১৯৭১ সালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে মুক্তিকামী জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশের জনগণ জাতীয় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে লেখা সংবিধান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন। সংবিধানে স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করা হয়েছে যে, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ।এতে বলা হয়, জনগণ সে ক্ষমতা প্রয়োগ করবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ সংবিধানের আলোকে জনগণের মৌলিক চাহিদা, ন্যায্য অধিকার ও আশা-আকাঙ্খাগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জনগণের পক্ষে জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করবে। স্বাধীনতার লক্ষ্য, চেতনা ও মূল্যবোধকে অবহেলা করা হলে কিংবা জনগণের অধিকারগুলো বাস্তবায়িত না হলে বুঝতে হবে জনগণ ক্ষমতার মালিকানা হারাতে বসেছে। এ পরিস্থিতিতে জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি অহিংস বিকল্প রাজনৈতিক ধারা গড়ে তোলা সময়ের দাবি।ঐক্যবদ্ধ জনগণকে একটি মহাশক্তি উল্লেখ করে যৌথ ঘোষণায় এই দুই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আরও বলেন, জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তির কাছে পৃথিবীতে অনেককেই মাথা নত করতে দেখেছি। ৫২ থেকে ‘৯০Ñএর বিভিন্ন গণআন্দোলনে এবং ৭১-এর স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ জনগণ বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের জনগণকে রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার অর্থবহ পরিবর্তনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যৌথ ঘোষণায় তারা আরও বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির অংশগ্রহণ এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনি আইন ও নির্বাচন ব্যবস্থার দাবিতে এবং দারিদ্র্যমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত এবং সন্ত্রাসমুক্ত একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি ছাত্র সমাজ, শিক্ষিত ও সুধীজন, আইনজ্ঞ, চিকিৎসক, শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, কৃষক, সাবেক সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী ও অন্যান্য পেশাজীবী মানুষের সমন্বয়ে বৃহত্তম একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটাতে হবে। দেশের এই শীর্ষ দুই রাজনীতিবিদ আরও বলেন, দেশকে যারা ভালবাসেন, যারা দেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী তাদেরকে একটি প্রগতিশীল, পাহাড় ও সমতলের মানুষসহ সব সম্প্রদায়ের পূর্ণ অধিকারসম্পন্ন একটি বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।উল্লেখ্য, এর আগে ২০১২ সালে একটি হোটেলে এবং পরবর্তী সময়ে প্রেসক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানেও ড. কামাল হোসেন ও বি. চৌধুরী জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাদের ওই আহ্বানে খুব একটা সাড়া মেলেনি। যদিও ইতোমধ্যে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সমন্বয়ক করে একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় বি চৌধুরীর বিকল্প ধারা, ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, আসম রবের জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য আছে।