মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সহিংসতা বৃদ্ধি পেতে থাকায় সেখান থেকে অন্তত চার হাজার অমুসলিমকে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছে মিয়ানমার সরকার।অপরদিকে রোববার রাখাইন রাজ্যের কয়েক হাজার মুসলিম রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

রোববার মিয়ানমার সরকার জানিয়েছে, শুক্রবার রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা রাখাইনে পুলিশের ৩০টি চৌকিতে একযোগে হামলা চালালে নতুন করে যে সহিংসতা শুরু হয় তাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯৮ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৮০ জন বিদ্রোহী ও ১২ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য বলে জানিয়েছে তারা। দেশটির সরকার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, রাখাইনের পুরো উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কয়েকশত রোহিঙ্গার লড়াই শনিবার পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। সবচেয়ে হিং¯্র লড়াইয়ের ঘটনাটি ঘটেছে ওই এলাকার সবচেয়ে বড় শহর মংডুর কাছে।আরো সহিংসতার আশঙ্কায় কয়েক হাজার রোহিঙ্গা, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুই বেশি, নাফ নদী ও স্থল সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসার চেষ্টা করছে। সীমান্তে অবস্থানরত রয়টার্সের সাংবাদিক রোববার মিয়ানমারের দিক থেকে গুলির শব্দ শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। শুক্রবারে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে।গত অক্টোবরে মিয়ানমারের সীমান্ত পুলিশের চৌকিতে রোহিঙ্গাদের কথিত প্রাণঘাতী হামলার পর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ওই অঞ্চলের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্মম সামরিক অভিযান চালালে সহিংতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ওই অভিযানে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ ওঠে।

রাখাইনের সহিংসতা কবলিত এলাকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবং সহিংসতার বিস্তারিত প্রতিবেদনে না পাওয়ায় পরিস্থিতি সম্পর্কে পুরো ধারণা করা কঠিন হলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সর্বশেষ হামলাটি এত ব্যাপক ছিল যে তা নিয়মিত বিদ্রোহীদের হামলা না হয়ে বরং আন্দোলন বা গণঅভ্যুত্থানের রূপ নিয়েছে।মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বিদ্রোহী ও বেসামরিকদের মধ্যে পার্থক্য করতে গিয়ে সামরিক বাহিনী হিমশিম খাচ্ছে। রাখাইনের ওই সূত্রটি বলেছেন, সব গ্রামবাসী বিদ্রোহী হয়ে গেছে, তারা যা করছে তা বিপ্লবের মতো হয়ে গেছে। মরবে কী বাঁচবে পরোয়া করছে না তারা। তাদের মধ্যে কে বিদ্রোহী কে নয় তা বলতে পারছি না আমরা।