জীবনের ভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় ও সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অসংখ্য রোহিঙ্গা মুসলমানের নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন । সোমবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থানরত খালেদা জিয়া। বিবৃতিতে তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে সহিংসতায় সেদেশের রোহিঙ্গাদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিবর্ষণে অসংখ্য মানুষ হতাহতের ঘটনায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং এটির নিন্দা জানাচ্ছি। রোহিঙ্গারা বসতবাটি, সহায় সম্বল হারিয়ে প্রাণভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের সীমান্তগুলোতে ভিড় জমাচ্ছে।

বেগম জিয়া বলেন, রাখাইন রাজ্যে গ্রামের পর গ্রামে আগুন জ্বলছে। প্রাণভয়ে রোহিঙ্গারা দিগি¦দিক ছুটে বেড়াচ্ছে। গহীন অরণ্যে ঢুকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করছে। আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের ওপরও মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী অবিরাম গুলিবর্ষণ করে যে নারকীয় পরিবেশ তৈরি করেছে তা বর্ণনাতীত। গুলিবিদ্ধ গুরুতর আহত রোহিঙ্গা যারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসতে সক্ষম হয়েছে তাদের অনেকেই হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে এবং কারো কারো মৃত্যু হয়েছে।সুদীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার নিবিড় সম্পর্কে আবদ্ধ জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার এলাকায় রোহিঙ্গা পুরুষ-নারী-শিশুরা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য নাফ নদীর বিস্তৃত এলাকাজুড়ে তীরে বসে ভয়ঙ্কর অনিশ্চয়তায় প্রহর গুনছে। এই দৃশ্য অমানবিক, বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক।

সুপ্রাচীনকাল থেকে পশ্চিম হতে পূর্ব দিকে যাওয়ার সিংহ দুয়ার হচ্ছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত। এই দুয়ার দিয়েই দুই বিস্তৃত অঞ্চলের মধ্যে ভাব, ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, বানিজ্য ও কুটনৈতিক আদান-প্রদান উত্তরোত্তর ক্রমবর্ধমানভাবে বিকশিত হয়েছে। আবহমানকাল ধরে দুই দেশের সম্পর্ক সমমর্যাদায় অভিষিক্ত। সমমর্যাদার এই ঐতিহ্যকে সম্মান দেখিয়ে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে বিশ্বাস করেন বেগম জিয়া।তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গারা সমাধানহীন একটি অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে নিপতিত থাকলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ক্রমাগতভাবে অবনতিশীল হতে থাকবে এবং এতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ঐতিহ্যগত স্থিতিশীলতায় বিরুপ প্রভাব ফেলবে। সুসম্পর্কের আবহমানধারা যাতে কোনোভাবেই বিনষ্ট না হয়, সে বিষয়ে মিয়ানমার সরকারকে সতর্ক ও দায়িত্বশীল হয়ে রোহিঙ্গা সংকটের জরুরী অবসান ঘটাতে হবে।সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে যেকোনো সংকট আরো ঘনীভুত হয়। যুগ যুগ ধরে রোহিঙ্গারা অত্যাচারিত হচ্ছে। ভূমিচ্যুত হয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আশ্রয় নিতে আসছে প্রধানত: সীমান্তবর্তী বাংলাদেশে। এছাড়া আরো কিছু দেশেও রোহিঙ্গারা উদ্বাস্ত হয়ে জীবনযাপন করছে। গণতন্ত্র ও নাগরিক স্বাধীনতার যুগে জাতি, বর্ণ, ধর্ম সম্প্রদায় ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের নির্মূল করতে সহিংসতা সৃষ্টি অচিন্তনীয় ও বিশ্ববিবেককে গভীরভাবে স্পর্শ করে।আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি-রোহিঙ্গাদের জীবন ও বসবাসের নিরাপত্তা বিধান এবং তাদের ওপর রক্তাক্ত সহিংসতার পূণরাবৃত্তি বন্ধ করতে মিয়ানমার সরকার প্রাজ্ঞ ও দুরদর্শী নীতি নিয়ে অগ্রসর হবে। জীবন ভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা পুরুষ-নারী-শিশুদের বাংলাদেশে আশ্রয় এবং তাদের সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমি দায়িত্বরত বাংলাদেশের প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি।তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে অমনোযোগী বাংলাদেশ সরকারের দুর্বল কূটনৈতিক তৎপরতার কারণেই পরিস্থিতি শোচনীয় রুপ ধারণ করেছে। আমি বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।