কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ১৪১ জন রোহিঙ্গাকে বাধা দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।টেকনাফের তিনটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে রোববার রাত সাড়ে নয়টা থেকে সোমবার ভোররাত চারটা পর্যন্ত ওই রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন। টেকনাফ ২ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম বলেন, উল্লিখিত সময়ে টেকনাফের হোয়াক্যং ইউনিয়নের তিনটি পয়েন্ট দিয়ে ১৪১ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের প্রতিহত করা হয়।

সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানান টেকনাফ ২ বিজিবির পরিচালক।উখিয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় ৭৫ জন রোহিঙ্গা ও দুজন দালালকে আটক করে উখিয়া থানার পুলিশ। পরে আটক রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সন্ধ্যার দিকে অনুপ্রবেশের সময় ৭৫ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। এ সময় দুজন বাংলাদেশি দালালকে আটক করা হয়।পুলিশ জানায়, আটক রোহিঙ্গাদের ৩৪ বিজিবি কক্সবাজারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর দুই দালালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতে পাঠানো হবে।কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল মঞ্জুর হাসান বলেন, আটক রোহিঙ্গাদের আজ ভোররাতে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযানের মধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা আরও নয় রোহিঙ্গাকে আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, রোববার মধ্যরাতে ওই নয়জনকে হাসপাতালে আনা হয়।তাদের মধ্যে দুইজনকে দগ্ধ অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছে। আর ছয়জনের গায়ে গুলির ক্ষত আছে। স্বজনদের মাধ্যমে ও পুলিশ তাদের চট্টগ্রামে নিয়ে এসেছে।

এই নয়জন হলেন- নুরুল হাকিম (২৬), সাকের (২৭), মামুনর রশিদ (২৭), নুরু সালাম (১৫), পারভেজ (২০), আবুল কাশেম (২৭), নুরুল আমিন (২২), সাদেক (২০) ও জাহিদ হোসেন (২০)। তাদের মধ্যে সাদেক ও জহিদ হাসপাতালে এসেছেন দগ্ধ অবস্থায়।এএসআই আলাউদ্দিন জানান, রোববার রাতে ভর্তি হওয়া নয়জনসহ মোট ১৭ জন রোহিঙ্গা এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেলে এসেছেন চিকিৎসা নিতে। তাদের মধ্যে একজন শনিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।চট্টগ্রাম মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক এস খালেদ চৌধুরী বলেন, দগ্ধ অবস্থায় আসা রোহিঙ্গারা বলেছেন, বোমা বিস্ফোরণে তারা আহত হয়েছেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।গত বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমারের রাখাইনে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর ওই রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ওই রাতের পর থেকে এ পর্যন্ত ১০৪ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ১২ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য।আরও সহিংসতার আশঙ্কায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা নাফ নদী ও স্থল সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে। সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ অংশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষীদের গুলি করার ঘটনাও ঘটেছে।এদিকে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় আরও ২২৪ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি।অনুপ্রবেশে সহায়তাকারী দুই দালালকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন রোহিঙ্গা। গ্রেপ্তার দুই দালাল হলেন- উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের মোহাম্মদ সালামের ছেলে মো. জাকের হোসেন (৩৫) এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের চাকমা কাটা এলাকার নূর হাকিমের ছেলে আনোয়ার হোসেন (২৮)।উখিয়া থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, রোববার মধ্যরাতে উখিয়ার বালুখালী সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশকারী ৭৫ জন রোহিঙ্গাকে বালুখালী পানবাজার এলাকা থেকে আটক করা হয়। ওই সময়ই দুই দালালকে গ্রেপ্তার করা হয়।পরে আটক রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। আমরা দুই দালালের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, উখিয়া থানা পুলিশের হাতে আটক রোহিঙ্গাদের সোমবার ভোররাতে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।

এছাড়া রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার ভোর রাত পর্যন্ত টেকনাফের নাফ নদীর উনচিপ্রাং ও হোয়াইক্যং সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় ১৪৯ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে ফেরত পাঠানো হয় বলে বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম জানান।এদের মধ্যে টেকনাফ থানা পুলিশের হাতে আটক আট রোহিঙ্গা রয়েছেন বলে জানান তিনি।