বিশ্বে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে সবাইকে অক্লান্ত পরিশ্রম করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে শনিবার গণভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।গণভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দলীয় নেতা-কর্মী, বিচারক, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বৈশ্বিক মঞ্চে আমাদের জন্মভূমিকে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করতে আমাদের সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। বিষয়টি সব সময় আমাদের মনে রাখতে হবে।প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের পথে আমাদের যাত্রা যেন অব্যাহত রাখতে পারি, সে জন্য আমি জনগণের দোয়া চাই।সামরিক শাসন, সন্ত্রাসবাদ ও মাদকাসক্তির সমস্যার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এসব দানবদের হাত থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হবে।

তরুণেরা যেন ভুল পথে না যায়, সে জন্য অভিভাবক, শিক্ষক, ইমাম ও ধর্মীয় নেতাদের যতœবান হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, একটি শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ে তুলতে চায় সরকার। শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হয়ে উঠবে। সমৃদ্ধির পথে হাঁটবে এই দেশ।’

জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন। রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরে আসার পর আওয়ামী লীগ সেই লক্ষ্যে অক্লান্তভাবে কাজ করে চলেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ দেশের জনগণ এখন সেই কাজের সুফল পাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। আমরা এ হার আরও কমাতে পারব, ইনশাআল্লাহ।’ ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার আশাবাদ পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।অনুষ্ঠানে আসা অতিথিদের সেমাই, কেক, ফল ও মিষ্টিজাতীয় খাবার দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে ও শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ফারুক খান ও দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং তারপর বিচারপতি, কূটনীতিক, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের নাগরিকদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয় সেমাই, সন্দেশ আর ফল দিয়ে।আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ফুলের তোড়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে আসেন। এ সময় মূল মঞ্চে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলন তার ছোট বোন শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল এবং পুতুলের ছেলে জারিফ।সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ একে একে এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সরকারপ্রধানকে কাছে পেয়ে অনেকেই তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন এ সময়।প্রধানমন্ত্রী মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শোনেন এবং সমাধানের জন্য ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন।এর মাঝেই পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরে সমবেতদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।দেশবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা এবং যারা এবার হজ করেছেন, তাদের মোবারকবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা সকলে দোয়া করবেন, উন্নয়নের পথে আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি; তা যেন অব্যাহত থাকে।এ ঈদের তাৎপর্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা পবিত্র ঈদুল আজহার মাধ্যমে এটাই শিখি; কীভাবে আত্মত্যাগ করা যায়।সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগে বন্যা হয়েছে। সে বন্যা আমরা মোকাবেলা করেছি। নদীভাঙায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত; তাদের ঘরবাড়ি তৈরি করা থেকে সব ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। ইনশাল্লাহ, এই বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না।”আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে এবং তার ফল দেশবাসী পাচ্ছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন,আজ বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।

জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক থেকে সমাজকে রক্ষা করতে সবাইকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা সকলেই লক্ষ্য রাখবেন, যেন আমাদের এই দেশে আমাদের যুব সমাজ যেন বিপথে না যায়। মাদকাসক্তি বা জঙ্গিবাদের সঙ্গে যেন জড়িত না হয়।শুভেচ্ছা বিনিময় পর্বে বেলা সোয়া ১১টার দিকে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা গণভবনে আসেন। তিনি নির্ধারিত বসার জায়গায় গেলে শেখ রেহানা সেখানে যান এবং বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কথা বলেন।কূটনীতিকসহ অন্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর প্রধানমন্ত্রী তার নির্ধারিত আসনে যাওয়ার সময় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রীর ডান দিকে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং বাঁ দিকে প্রধান বিচারপতির বসার জায়গা নির্ধারিত ছিল।প্রধানমন্ত্রী তার আসনে বসার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্য সাকিব আল হাসান তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।বাংলাদেশের এই তারকা ক্রিকেটার এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সোফার পাশে হাঁটু মুড়ে বসেন। সরকারপ্রধান এ সময় সাকিবের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন এবং নিজের প্লেট থেকে কাটা চামচে তুলে ফল ও মিষ্টি খাইয়ে দেন।পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলেন এবং একসঙ্গে সবার ছবি তোলা হয়।