বিষধর সাপকে বসে আনা মানুষের কাছে চিরকালই আকর্ষণীয়। তারওপর যদি একের পর এক প্রদর্শন করা হয় বিষধর সাপের নানা কৌশল তাহলে তো কথাই নেই। এমনই এক ঝাপান খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গোয়ালপাড়া বাজারে। দিনব্যাপী আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে জড়ো হয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। বাদ্যের তালে তালে আর বাশির সুরে একে একে ঝুড়ি ও হাড়ি থেকে বের হয়ে আসে গোখরাসহ বিভিন্ন বিষধর সাপ। মনসা মঙ্গলের পালা গানসহ বিভিন্ন গানের সাথে বাদ্যের তালে সাপুড়েকে নিজে নাচতে হয় আর সাথে ফনা তুলে সাপও বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে। সাপুড়ের ইশারায় সাপের এই অঙ্গ ভঙ্গি প্রদর্শন মানুষকে দেয় অনাবিল আনন্দ। মনিবের ইশারা ইঙ্গিত তাকে ঠিক বুঝিয়ে দিয়েছে, শুধু মানুষকে আনন্দ দেয়ার খেলা নয় বরং আজ মর্যাদার লড়াই। আর এই দৃশ্য দেখতে দুরদুরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন দর্শনার্থীরা। ঝিনাইদহ, মাগুরাসহ বিভিন্ন এলাকার নারী-পুরুষ শিশু সকলেই উপস্থিত থেকে নিবিড় দৃষ্টিতে উপভোগ করেন এই খেলা। আর খেলাকে ঘিরে এখানে সৃষ্টি হয় উৎসবের আমেজ। বসে ছোট আকারের মেলা।
শৈলকুপার অংশগ্রহণকারী সাপুড়ে লিটন বলেন, এটা আমাদের বাপ দাদার পৈত্রিক পেশা। আমার আগে আমার বাবা তার আগে তার বাবা সকলেই সাপ খেলা দেখিয়ে জীবনধারণ করতেন। আমরা বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত সাপ নিয়ে ঘুরে বেড়াই।’
এ ধরনের আয়োজন হলে সাপুড়েদের মধ্যে ভাব বিনিময় ও বিভিন্ন প্রজাতির সাপের খোঁজ-খবর পাওয়া যায় বলে জানান বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সাপুড়েরা।
সদর উপজেলার হাটগোপালপুর থেকে আসা আইয়ুব হোসেন রনি নামে এক দর্শক জানান, এ রকম অয়োজন মাঝে মধ্যে হলে এলাকার মানুষ খুশি হয়।
এ ব্যাপারে আয়োজক স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম শফি ও দোগাছি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইসাহাক জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে এই খেলার আয়োজন। কালের বিবর্তনে লোকাচারের অনেক কিছুই এখন হারিয়ে গেছে। কিন্তু ঝাপান গানের কোনও হের ফের হয়নি। সেই মধ্যযুগ হয়ে একবিংশ শতাব্দীর মানুষের কাছে এখনো সমান জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে এটি।’
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ বলেন, সমাজ থেকে সন্ত্রাস, মাদক দূর করতে এ ধরণের আয়োজন করা দরকার।