নিম্নচাপের কারণে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারের অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।নিম্নচাপের কারণে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারের অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। মানবেতর জীবন যাপন করেছেন সেখানে অবস্থান নেয়া লাখো শরণার্থী। বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে এসব ক্যাম্প। পথেঘাটেও হাঁটু সমান পানি আর কাদা। ত্রাণবাহী যানবাহন কাদায় আটকে পড়ায় ব্যাহত হচ্ছে বিতরণ কার্যক্রম।

মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর জাতিগত শুদ্ধি অভিযান থেকে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে রোহিঙ্গারা শরণার্থীরা। তারা এখন কক্সাবাজারের উখিয়াসহ আশপাশের এলাকায় খোলা আকাশের নিচে অস্থায়ী ক্যাম্পে মানবেতন জীবনযাপন করছে।গত কয়েক দিনের থেমে থেমে বৃষ্টির পানিতে হাটু সমান কাদামাটি আর জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে উখিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায়। পানি প্রবেশ করেছে রোহিঙ্গারা শরণার্থীদের এসব ক্যাম্পেও। এতে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের।কাদায় আটকে পড়েছে ত্রাণবাহী যানবাহন। ত্রাণ বিতরণে কিছুটা শৃঙ্খলা ফেরার পর বৃষ্টির কারণে তা আবারো ব্যাহত হচ্ছে তবে অনেক শরণার্থীই টোকেন না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।

এদিকে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ হিসেবে বালুখালীতে তৈরি করা হচ্ছে শরণার্থী শিবির। আগামী দেড় মাসের মধ্যেই সেখানে ৫৬ হাজার পরিবারকে স্থানান্তর করা হবে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ দেয়ার পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনে অংশ নিয়েছে সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।বুধবার সকালে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের জন্য জেলা প্রশাসনের তহবিলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দেয়া অর্থ সহায়তা গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি একথা জানান।কাদের বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে বিশ্ব জনমত গঠনে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এ সময় ওবায়দুল কাদেরের হাতে নগদ ১৫ লাখ টাকার অর্থ সহায়তা তুলে দেন সাংসদ গোলাম দস্তগীর গাজী।সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ নাগরিকদের দমন অভিযান থেকে বাঁচতে গত তিন সপ্তাহে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেÑজানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)।

এদিকে,এর মধ্যদিয়ে শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় উঠে এসেছে।ইউএনএইচসিআর’এর এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, এর আগেও বাংলাদেশে ৪ থেকে ৫ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছিল। ফলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মোট রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৮ থেকে ৯ লাখে দাঁড়িয়েছে।ইউএনএইচসিআরের হিসেবে, ২০১৭ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৬ কোটি ৫৬ লাখ মানুষ তাদের নিজ এলাকা থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ মানুষ এখন শরণার্থী হিসেবে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে বাস করছেন।ইউএনএইচসিআর’র পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে তালিকার শীর্ষে রয়েছে তুরস্ক। দেশটি সর্বোচ্চ ২৯ লাখ মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। ১৪ লাখ শরণার্থী আশ্রয় দিয়ে তুরস্কের পরেই রয়েছে পাকিস্তান। এরপর ১০ লাখ মানুষ আশ্রয় দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে লেবানন। ইরানে আছে ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৪০০, উগান্ডায় ৯ লাখ ৪০ হাজার ৮০০ ও ইথিওপিয়ায় রয়েছে ৭ লাখ ৯১ হাজার ৬০০। আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা বর্তমান শরণার্থীদের সংখ্যা অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান এখন ষষ্ঠ স্থানে। বাংলাদেশের পরেই রয়েছে আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া।অন্যদিকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও বেশকিছু রোহিঙ্গা রয়েছে।এক প্রতিবেদনে আলজাজিরা জানায়, সৌদি আরবে ২ লাখ, পাকিস্তানে সাড়ে ৩ লাখ, মালয়েশিয়ায় দেড় লাখ, ভারতে ৪০ হাজার, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১০ হাজার, থাইল্যান্ডে ৫ হাজার এবং ইন্দোনেশিয়ায় মাত্র ১ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম রয়েছে।গত মাসের ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে পুলিশ ফাঁড়ি ও সেনা ক্যাম্পে হামলার পর সেনা অভিযানের প্রেক্ষাপটে ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল নেমেছে।