প্রশাসনিক তৎপরতাকে তোয়াক্কা না করে রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সীমান্ত ডিঙিয়ে পালিয়ে এসে কক্সবাজার জেলা পেরিয়ে এখন বন্দর নগরী চট্টগ্রামের লাগোয়া হাটহাজারীতে আসতে শুরু করেছে। এসব রোহিঙ্গারা তাদের আত্মীয়-স্বজনের হাত ধরে আসছে যারা আগে থেকে এখানে বসবাস করতেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কৌশলে ঢুকে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে।

প্রতিদিন কোন না কোনভাবে তারা দল বেঁধে হাটহাজারী পৌরসভাসহ উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে বিভিন্ন স্তানে অবস্থান নিয়ে বসবাস শুরু করছে। তবে এ নিয়ে প্রশাসন তৎপর থাকলেও আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীদের মধ্যে উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। গত এক সপ্তাহে প্রায় অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গাকে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে প্রেরণ করেছে।অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১২ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) দুপুর ২টায় হাটহাজারী পৌরসভার কামাল পাড়ায় এলাকার নুরুল আলমের ভাড়া ঘর প্রকাশ মাঝি কলোনি থেকে পুলিশ নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ২৫ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত এসব শরণার্থীরা তাদের আতœীয়া নুরজাহান নামে এক রোহিঙ্গা নারীর হাত ধরে এসেছে। সে (নুরজাহান) ৭/৮ বছর ধরে এ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বসবাস করে আসছিল। শুধু তাই নয়, সে মো. সিরাজ নামে ময়মনসিংহ এলাকার এক ব্যক্তির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এমনকি বিগত কয়েক বছর পূর্বে এ দেশের ভোটারও হয়েছে। এভাবে রোহিঙ্গাদের আত্মীয়-স্বজন যারা আগে থেকে এখানে বসবাস করতেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মূলত তারা (রোহিঙ্গা) কৌশলে ঢুকে পড়ছে।

এছাড়া ১৫ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) বেলা ১১টার দিকে আলী অবৈধভাবে আশ্রয় নেওয়ায় হাটহাজারী পৌরসভার রঙ্গিপাড়া এলাকা থেকে আরো ৬ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ২ জন নারী, ২ জন যুবক ও ২জন শিশু রয়েছে। তাছাড়া গত মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) হাটহাজারী উপজেলার চিকনদন্ডি ইউনিয়নের যুগীর হাট জোর পুকুর পাড় এলাকার জনৈক কামালের ভাড়া বাসায় অবৈধভাবে আশ্রয় নেওয়া আরো ১২ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৩ মহিলা, ১ পুরুষ ও ৮জন শিশু রয়েছে। এদিকে ওই নুরজাহানের মত উপজেলাধীন ১নং সিটি কর্পোশেনের দক্ষিণ পাহাড়তলী ওর্য়াড, পৌরসভার ৩-৪টি ওয়ার্ডে বিশেষ করে দেওয়ান নগর, সুজানগর, আদর্শ গ্রামে এবং উপজেলার ৫-৬টি ইউনিয়নের অন্যতম মির্জাপুর, ধলই, ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের পাহাড়ে ও পাহাড়ের পাদদেশে কাঁচা বসতঘর নির্মাণ করে শত শত রোহিঙ্গা বসবাস করে আসছে বলে এ প্রতিবেদককে জানান স্থানীয় এরাকাবাসীরা। তারা আরো জানান, রোহিঙ্গারা তাদের আতœীয়-স্বজনদের হাতে ধরে প্রতিদিন প্রশাসনিক তৎপরতাকে তোয়াক্কা না করে আত্মীয়-স্বজনের হাত ধরে কৌশলে উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে আশ্রয় নেওয়া অব্যাহত রয়েছে। এতে করে আমরা বেশ উৎকন্ঠায় মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাটহাজারী সার্কেল এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল¬াহ আল মাসুম গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, কৌশলে কোন রোহিঙ্গা উপজেলায় ঢুকে পড়লে তাদেরকে শনাক্ত করে নির্ধারিত স্থানে প্রেরণের জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত আছি। তবে হাটহাজারী উপজেলায় যাতে এসব রোহিঙ্গা শরণার্থী ঢুকতে না পারে এ নিয়ে প্রশাসনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।