রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপর ‘গণহত্যা’ চালানোর অপরাধে মিয়ানমার সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করেছে মালয়েশিয়ার একটি গণআদালত। শুক্রবার এই ইস্যুতে মালেশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে রোম ভিত্তিক পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনালের (পিপিটি) সাত সদস্যের একটি গণআদালত এমন ঘোষণা দেন। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা, কোচিন এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে চলমান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিশেষ এই আদালতের শুনানিতে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের অফিসিয়াল দায়িত্ব পালনের কথা বলে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম জনগণকে কৌশলগত লক্ষ্যে’ পরিণত করে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে, আর এটা অবশ্যই যুদ্ধাপরাধ।

শুনানির পর রায়ে বলা হয়, উপস্থাপিত তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে এই ‍বিষয়ে একমত হওয়া যায় যে, মিয়ানমার সরকার তাদের কোচিন ও মুসলিম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসমূহের জনগণের উপর ‘গণহত্যা’র প্রয়াস নিয়ে হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছে। এমনকি মিয়ানমার তার মুসলিম নৃগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যার চালানোর অপরাধে দোষী। গণআদালত মনে করে, যদি এখনই মিয়ানমার সরকারকে থামতে বাধ্য করা না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে রোহিঙ্গাদের উপর চলমান গণহত্যা ও বর্বর নিধনযজ্ঞ আরও বৃদ্ধি পাবে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।

৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫শ মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে। এরই মধ্যে চলতি মাসের ১৮ তারিখ থেকে আজ শুক্রবার পর্যন্ত মালয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ক্যাম্পাসে পিপিটি এই শুনানির আয়োজন করে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য শোনেন এবং তাদের দেয়া তথ্য-উপাত্ত রেকর্ড করেন। বিশ্বের সবার সামনে রাখাইন রাজ্যে চলমান বর্বর নিপীড়নের কথা বিশ্ববাসীর সামনে ‘খোলাসা’ করতেই রোম ভিত্তিক পিপিটি গণআদালত এই শুনানির আয়োজন করে।

গণহত্যা বন্ধ করতে ও রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের জন্য মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিতে এখন এই রায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অঙ্গ, প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে জাতিসংঘে পাঠানো হবে। তবে এই রায় বাস্তবায়নের কোন আইনি বাধ্যবাধকতা নেই।