প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তার বাসায় আছেন এবং এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিয়া।সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীনসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান বিচারপতি সিনহার অবস্থা জানতে চেয়ে মৌখিক আবেদন করতে গেলে বিচারপতি ওয়াহহাব মিয়া তাদের এ কথা বলেন। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে থাকা প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা গত মঙ্গলবার থেকে এক মাসের ছুটিতে যাওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে চলছে নানামুখী আলোচনা।

এদিকে, সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার সঙ্গে দেখা করে তাকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়ার পর ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়া নিয়ে নানামুখী আলোচনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার দুপুরে আইনমন্ত্রী প্রথমে সুপ্রিম কোর্ট এবং পরে হেয়ার রোডে বিচারপতি সিনহার বাসায় যান। প্রায় আধা ঘণ্টা সেখানে কাটিয়ে বিকাল ৪টার ৪০ মিনিটে আইনমন্ত্রী যখন বেরিয়ে আসছিলেন, প্রধান বিচারপতিকে তখন লনে বেরিয়ে এসে তাকে বিদায় জানাতে দেখা যায়।প্রধান বিচারপতির বাসভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি আনিসুল হক।

প্রধান বিচারপতির দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেছেন, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা তার বাসায় আছেন এবং এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত।সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীনসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বৃহস্পতিবার বিচারপতি সিনহার অবস্থা জানতে চেয়ে মৌখিক আবেদন করতে গেলে বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা তাদের এ কথা বলেন। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে থাকা প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা গত মঙ্গলবার থেকে এক মাসের ছুটিতে যাওয়ায় গত কয়েক দিন ধরে চলছে নানামুখী আলোচনা।সরকার প্রধান বিচারপতিকে চাপ দিয়ে ছুটিতে পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি।অন্যদিকে রাষ্ট্রপতির কাছে লেখা প্রধান বিচারপতির ছুটির আবেদনে অসুস্থতার কথা লেখা থাকার বিষয়টি দেখিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এই ছুটির সঙ্গে রায়ের কোনো সম্পর্ক নেই, চাপেরও কোনো বিষয় নেই। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পাওয়া বিচারপতি সিনহার চাকরির মেয়াদ রয়েছে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। তিনি ছুটিতে যাওয়ায় রাষ্ট্রপতি সংবিধান অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির কার্যভার দিয়েছেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে। বুধবার বিকালে ৩৮ জন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সুপ্রিম কোর্ট আইনবীজী সমিতি সিদ্ধান্ত নেয়, বিচারপতি সিনহার অবস্থা জানতে সহযোগিতা ও দিক-নির্দেশনা চেয়ে তারা আপিল বিভাগের শরণাপন্ন হবেন। এছাড়া সাবেক বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীর নেতত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করারও জন্য চেষ্টা করবেন।সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকালে আদালত বসার পর বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ, এ জে মোহাম্মদ আলী এবং সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আপিল বিভাগের এক নম্বর আদালতে যান।

শুরুতেই আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন একটি লিখিত আবেদন তুলে ধরে গত ২ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে যাওয়া এবং সাক্ষাৎ করতে না পারার কথা বলতে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, “আমি নিশ্চিত, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তার বাসভবনে আছেন।বারের সভাপতি এ সময় তার পুরো আবেদনটি পড়ার অনুমতি চাইলে বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা জানতে চান, এই প্রক্রিয়া ১০৩ অনুচ্ছেদের মধ্যে পড়ে কি না।জয়নুল আবেদীন এ সময় বলেন, সেটা পরে। আমরা একটা আবেদন নিয়ে এসেছি দিক-নির্দেশনা চাইতে, সহযোগিতার জন্য, সেটা আগে পড়ি।এরপর জয়নুল আবেদীন তার এক পৃষ্ঠার লিখিত আবেদন পড়ে শোনান।এসময় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, আমরা আমাদের কথা তুলে ধরলাম। বিষয়টা কিন্তু বিচার বিভাগ সম্পরিকত। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তিনি অসুস্থ।পড়া শেষ হলে বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা বলেন, আমরা আইনের অধীন। আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। জেনেছি উনি অসুস্থতার জন্য পারফর্ম করতে পারছেন না। আমরা আপনাদের কথা শুনলাম, চিন্তা করে দেখব।

জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করছি। আমি নিশ্চিত, তিনি তার বাসভবনে আছেন। তিনি কার সঙ্গে দেখা করবেন কি করবেন না, এটা তার নিজস্ব ব্যাপার। আপনারা আমার চেম্বারে আসবেন। এটা তো প্রকাশ্য আদালতের বিষয় না।পরে বেরিয়ে এসে জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, বিকাল ৪টায় সমিতির কার্যালয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে আবারও বসবেন তারা।গতকালের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকলকে নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত, গার্ডিয়ান অব দ্য কনস্টিটিউশনের কাছে গিয়েছলাম। আমরা সেখানে বলেছি, গত ২ তারিখে বিকাল ৫টা ৩০ মিনিটে মাননীয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে গিয়েছিলাম। প্রাথমিকভাবে বাসভবন থেকে একজন সিপাহি আমাদের জানায়, তিনি অসুস্থ।আমরা যখন বললাম, আমরা বারের প্রতিনিধি, অসুস্থ হলেও তাকে দেখার অধিকার আছে, আমরা তাকে দেখতে চাই, কথা বলতে চাই। তখন বলা হল, আপনারা একটু অপেক্ষা করেন।পরবর্তীতে ওই একই সিপাহি ভেতর থেকে এসে বললেন, স্যার সুস্থ আছেন। কিন্তু তিনি কথা বলতে পারবেন না। এই কথাটিই আজকে আমরা আদালতের কাছে বলেছি।বারের সভাপতি বলেন, আদালত যাতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়, সেই আবেদন তারা করেছেন। রেযহেতু আমরা শুনেছি প্রধান বিচারপতি অসুস্থ, কাজেই এ অবস্থায় আমরা মনে করি, বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমাদের সেখানে যাওয়া দরকার। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে আমাদের যেতে দিচ্ছে না। আদালত আমাদের কথা শুনেছেন।আদালত কী বলেছে জানতে চাইলে জয়নুল আবেদীন বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আমাদের এ বিষয়টি নিয়ে তারা চিন্তা-ভাবনা করে আমাদের জানাবেন।মওদুদ আহমেদ বলেন, এই সঙ্কটটি কোনো দলীয় সঙ্কট নয়। দলমত নির্বিশেষে আমাদের সকলেরই উদ্বেগ যে, আমাদের দেশের প্রধান বিচারপতি অসুস্থ আছেন। তার সাথে আমরা দেখা করে তাকে সমবেদনা জানাতে চাই। তার সুস্থতা কামনা করতে চাই। আজকে এ বিষয়ে বারের সভাপতি এবং ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, আজকে আমরা যে কাজটি করেছি এটি একটি অস্বাভাবিক কাজ। আমরা আদালতের কাছে কোনো আদেশের জন্য যেতে পারি না। এ বিষয়টিই আমি ব্যাখ্যা করে বলেছি, দেশের একজন প্রধান বিচরপতি সম্পর্কে অনেক কথা বাজারে আছে, যেটা দেশের জন্য ভালো না, সরকারের জন্য ভালো না এবং বিচার বিভাগের জন্য ভালো না।বিচারপতি সিনহার ছুটিতে যাওয়ার বিষয়ে আদালতে গিয়ে আইনজীবী সমিতির উদ্বেগ প্রকাশ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, উনার জানা মতে প্রধান বিচারপতি তার নিজ বাসভবনেই আছেন। তাদের প্রার্থনায় আদালত কোরো রকম আদেশ প্রদান করেননি।

প্রধান বিচারপতি দেশের বাইরে যাচ্ছেন- এমন গুঞ্জনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তিনি (প্রধান বিচারপতি) তো এর আগে বহুবার অস্ট্রেলিয়া গিয়েছেন, কানাডায় গিয়েছেন। আমার জানা মতে তার এক মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন, এক মেয়ে কানাডায় থাকেন। এই সমস্ত দেশে এর আগেও উনি গেছেন। এখন উনি যাবেন কি যাবেন না সেটা সম্পূর্ণ উনার নিজস্ব বিষয়। কাজেই এগুলো নিয়ে অহেতুক বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করাই ভালো।এদিকে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের পর দুপুরে আইনজীবী সমিতির সভাপতির কার্যালয়ের সামনে ব্রিফ করেন সমিতির সহ-সভাপতি আওয়ামীপন্থি আইনজীবী নেতা অ্যাডভোকেট মো. ওয়াজি-উল্লাহ।তিনি বলেন, আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদক একটি বিশেষ রাজনৈতক দলের উচ্চ পদে আছেন। তাদের বিশেষ একটি বিশেষ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আছে। যেসব জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মিল আছে, তারাই তাদের সঙ্গে বসেছেন, মত বিনিময় করেছেন। এখানে বারের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বা বারের অন্য সদস্যদের কোনো মত নেই।বুধবারের বৈঠকে এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ওয়াজি-উল্লাহর উপস্থিতির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, যেহেতু আমরা বারের নির্বাচিত সদস্য। যখন কার্যনির্বাহী কমিটির সভা ডাকা হয় ,তখন আমাদের থাকতে হয়। এটা আমাদের সুপ্রিম কোর্ট বারের রীতি। কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় না থাকলে সেটা গঠনতন্ত্রের অবমাননা হয়। তাই আমাদের থাকতে হয়।