আপনজনহীন ১১৪ বছরের বৃদ্ধা জমসের আলী। সড়ক দুর্ঘটনা গুরুতর আহত হয়ে দীর্ঘ দু’মাস যাবত হাসপাতালে আছেন। চিকিৎসা ও সেবাশুশ্রূষা করার মতো কেউ নেই। চলাচল করা তো দুরের কথা বিছানা থেকে উঠে বসার মতো ক্ষমতা তার নেই। পায়খানা প্রসাব করেন অন্যের সাহায্যে। দুঃখ, কষ্ট আর যন্ত্রণায় বাকরুদ্ধ হয়েছেন তিনি। কেউ দেখতে গেলে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকান। কথা বলার ক্ষমতা নেই। তার শেষ গন্তব্য কোথায় তা কেউ জানেননা।

জমসের আলী (১১৪) লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের টি,এনটি পাডার মৃত হাসেম মাহমুদ এর ছেলে।
থাকেন ভাতিজা আমিনুরের বাড়িতে জীর্ণশীর্ণ ভাঙ্গা কুঠিরে। বর্ষাকালে ঘরের চালা দিয়ে পানি পড়ে সবই ভিজে যায়। ভাতিজা আমিনুর ইটের খোয়া ভেঙ্গে সংসার চালান। নিজেই খাবেন তার উপায় নেই, এরপরেও চাচার দায়িত্ব নিবে কিভাবে।
বৃদ্ধার সংসার চলতো বয়স্ক ভাতা আর অন্যের সাহায্য দিয়ে। চিকিৎসা করতে ইতিমধ্যে অনেক ধারদেনা করেছেন বৃদ্ধা স্ত্রী মতিজন নেছা।

উপজেলা শহরের পাশে বাড়ি বৃদ্ধ জমসেরের। আশপাশে রয়েছে অনেক কোটিপতির বাড়ি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, জমসের আলীর খোঁজখবর নেওয়া ও পাশে দ্বারানোর মতো কেউ নেই। যেখানে ৫০-৬০ বছরের অনেকেই শারীরিক ও মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে, সেখানে ১১৪ বছরের বৃদ্ধা জমসের আলীর ভাগ্যে কি আছে তা উপর ওয়ালাই ভালো করে জানেন। হয়তো আপনার আমার সামান্য কিছু সাহায্য সহযোগীতাই পারে বৃদ্ধ জমসের আলী একটু সন্ধ্যান করে দিতে।

গত দু’মাস আগে উপজেলার শাহগরীবুল্লাহ মাজারের সামনে সকাল ১১ টার দিকে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হন এবং তার বা পা ভেঙ্গে যায়। সে সময় গুরুগত আহত অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হলে তার বা পা প্লাস্টার করা হয়। অর্থাভাবে চিকিৎসা করতে না পেরে সেখা থেকে পালিয়ে আসেন।
এরপরে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন ২৭/০৯/১৭ ইং তারিখে। যার রেজি নং ভর্তি ১৩৪৮৮/৩৫, বেড নং পুরুষ- ১২।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের পিছানায় শুয়ে আছে। তার সাথে কথা বলতে চাইলে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কিছুই বলতে পারেনা। পাশে বসে আসে তার দ্বিতীয় স্ত্রী মহিজন নেছা।

ঐ হাসপাতালের আবাসিক অফিসার ডাঃ নাঈম হোসেন বলেন, বৃদ্ধ বয়সে পায়ের হাড় ভেঙ্গে গেলে তা শেরে উঠতে সময় লাগে। হাসপাতাল থেকে তাকে প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র দেওয়া হচ্ছে। তবে পুরোপুরিভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

বয়সকালে জমসের আলী একজনকে বিয়ে করেছিলো। বিয়ের ৩০-৪০ পরে ঐ স্ত্রী অসুখে মারা যায়। তার কোন সন্তান হয়নি। এরপরে জমসেত বিয়ে করেন মতিজন নেছা নামের এক একজনকে। দুর্ভাগ্য তার কোলেও কোন সন্তান নেই। মতিজন নেছাও এখন বৃদ্ধা হয়ে গেছে। কাজকর্ম করার মত আগের মতো আর শক্তি নেই। বয়সকালে জমসের আলী তামাক বাধার কাজ করে সংসার চালিয়েছিলো। বয়স হওয়ার পর থেকে প্রায় ৩০-৪০ বছর থেকে কোন কাজ করতে পারেনা।

পারিবার বিষয়ে কথা হলে জমসেরের স্ত্রী মহিজন নেছা বলেন, সংসার চলে স্বামীর বয়স্ক ভাতা আর অন্যের সাহায্য সহযোগীতা দিয়ে। তাও আবার এক বেলা খেলে আর একবেলার খাবার নাই।

সড়ক দুর্ঘটনায় জমসের আলী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় ইতিমধ্যে তাদের অনেক ধারদেনা হয়েছে। দু’মাস থেকে সে সরকারী হাসপাতালে রয়েছে। স্বামীর চিকিৎসা করার মতো আর একটি টাকাও নেই। এখন কি দিয়ে অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা করাবেন। কি খাবেন আর কিভাবে অন্যের ধারদেনা পরিশোধ করবেন, সেই চিন্তায় যেন রাতে ঘুম আসেনা মতিজন নেছার।

স্বামীর চিকিৎসা ও নিজের একটি ঘর নির্মাণ করার জন্য, সমাজের বিত্তবানদের কাছে আর্থিক সহযোগী চান, বৃদ্ধ জমসের আলীর স্ত্রী বৃদ্ধা মতিজন নেছা।