যুদ্ধ নয়, আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সোমবার প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন।বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের সদস্য ৩১টি ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের জন্য তার হাতে চেক হস্তান্তরে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।চেক গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী অ্যাসোসিয়েশনের উদ্দেশে বলেন, মানবিক কল্যাণে সবসময় এগিয়ে আসে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস। সম্প্রতি বন্যার সময় তারা জনগণের পাশে ছিল। এখন মিয়ানমার থেকে অত্যাচারিত হয়ে বাংলাদেশে আসা লোকদের সাহায্যেও এগিয়ে এসেছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তর সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেমন অত্যাচার করেছিল, এরাও একই রকমের অত্যাচারের শিকার। একাত্তরে তিন কোটি বাঙালি গৃহহারা হয়েছিল, আর এক কোটি শরণার্থী হয়েছিল।পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাসহ শরণার্থী হিসেবে দেশের বাইরে আশ্রয় নেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরাও শরণার্থী ছিলাম, এদের দুঃখ আমরা বুঝি।

মিয়ানমারের বিপুলসংখ্যক নাগরিককে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের বিপদে মানুষ মানুষের পাশে না দাঁড়ালে সেটা হবে অমানবিক।আশ্রয় নেওয়া মিযানমার নাগরিকদের সাহায্যে সশস্ত্র বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ দেশের সর্বস্তরের প্রশাসন ও মানুষের আন্তরিক তৎপরতার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে নিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সেখানে বহুমুখী সাইক্লোন সেন্টারসহ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে তার দেওয়া পাঁচ দফা প্রস্তাব বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান সম্ভব বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।গত কয়েক যুগ ধরে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসছে বাংলাদেশ, যারা নিজ দেশ মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার।অগাস্টের শেষ দিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর নতুন করে আরও পাঁচ লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে।জাতিসংঘ মিয়ানমারের ওই অভিযানকে চিহ্নিত করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা রোহিঙ্গাদের মানবিক সঙ্কটে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

গত ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া বক্তৃতায় রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।মিয়ানমারে সহিংসতা ও ‘জাতিগত নিধন’ অবিলম্বে বন্ধ করা; জাতিসংঘ মহাসচিবের নিজস্ব একটি অনুসন্ধানী দলকে মিয়ানমারে পাঠানো; জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল নাগরিককে নিরাপত্তা দিতে মিয়ানমারের ভেতরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ‘সুরক্ষা বলয়’ গড়ে তোলা; রাখাইন রাজ্য থেকে জোর করে বিতাড়িত সব রোহিঙ্গা যাতে মিয়ানমারে তাদের বাড়িতে ফিরতে পারে, তা নিশ্চিত করা; সেই সঙ্গে কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে সেখানে। সোমবার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের সদস্যভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে যেমন অত্যাচার করেছিল, মিয়ানমারের এই বাস্তুচ্যুত নাগরিকরাও তাদের দেশে সেরকম অত্যাচারের শিকার।ওই সময় তিন কোটি বাঙালি গৃহহারা হয়েছিল, আর শরণার্থী হয়েছিল এক কোটি।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দীর্ঘদিন বিদেশে থাকতে বাধ্য হওয়ার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরাও শরণার্থী ছিলাম, এদের দুঃখ আমরা বুঝি।মিয়ানমার থেকে আসা মানুষ যে দুর্দশায় পড়েছে, এই অবস্থায় তাদের পাশে না দাঁড়ালে সেটাই অমানবিক হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষের মানবিক গুণ আছে। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সাহায্য নিয়ে তারা রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়িয়েছে।সশস্ত্র বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবকরা সেখানে কাজ করছে জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও রোহিঙ্গাদের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।