ড. আব্দুল আলীমকে ডিন ও রিজেন্ট বোর্ড থেকে প্রত্যাহারের দাবীতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ঘোষণা

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় শনিবার বেলা ১০ টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, গুলাগুলি, সংঘর্ষ, বঙ্গবন্ধু হলে হামলা ও মোটর সাইকেল ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১৫/২০ জন কমবেশি আহত হয়েছে। আহতদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড ও সামাজিক অনুষদ বিভাগের ডিন পদ থেকে ড. আব্দুল আলীমকে অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতি।
আহতরা হচ্ছেন; সেকশন অফিসার রফিকুল ইসলাম, সেকশন অফিসার তৌফিকুর রহমান সৈকত, সিনিয়র স্টোর কিপার জমসেদ হোসেন পলাশ, নিরাপত্তা প্রহরী লিটন হোসেন, জনি, বাংলা বিভাগের মাস্টার্স শেষপর্বের আবু জাফর, শামীম হোসেন ও সাইফুল ইসলাম চতুর্থবর্ষসহ উভয়পক্ষের কমবেশি ২০ জন।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, শুক্রবার ছিল পাবিপ্রবির প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষা। পরীক্ষার ডিউটির সময়ে পাবিপ্রবি’র সামাজিক অনুষদের ডিন ও বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এম আব্দুল আলীমের সাথে গেটের নিরাপত্তা কর্মিদের বাকবিতান্ডার ঘটনা ঘটে। এরই এক পর্যায়ে নিরাপত্তা কর্মিরা সংঘবদ্ধ হয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে ড. আব্দুল আলীমের উপর হামলা চালায় এবং তাকে শারিরীক ভাবে লাঞ্চিত করে। এ ঘটনা রাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে মারপিট ও লাঞ্ছিতের খবর জানতে পেরে শনিবার বেলা সাড়ে ১০ টার দিকে বিভাগের শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় কয়েকজন শিক্ষকও শিক্ষার্থীদের পাশে অবস্থান গ্রহণ করেন। এ খবর পেয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লাঠিসোঠা নিয়ে অবস্থানকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় উভয়গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। সংঘর্ষে নারী কর্মচারী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়। এ দিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেলা ১১ টার দিকে ক্যাম্পাসের বঙ্গবন্ধু হলে হামলা চালিয়ে শিক্ষার্থীদের মারপিট ও লাঞ্ছিত করে। বিক্ষুদ্ধরা ক্যাম্পাসে রাখা প্রায় শতাধিক মোটর সাইকেল ভাংচুর করে।

এ বিষয়ে সেকশন অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আব্দুল আলীমের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী লাঠিসোঠা নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।

এ দিকে আহতাবস্থায় হাসপাতালের সামনে বাংলা বিভাগের মাষ্টার্স শেষ পর্বের শিক্ষার্থী শামীম হোসেন বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরে বাংলা বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে নিয়ে প্রতিবাদ জানাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে আমাদের উপর অতর্কিত এই হামলা চালিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা দাবী করেন, শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর হামলা চালিয়েছে।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় পাবিপ্রবি’র বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এম আব্দুল আলীমের সাথে। তিনি দাবী করেন, আমার উপর হামলা হয়েছে এমন খবর পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়েই শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে জড়িয়ে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বা ভিত্তিহীন। এ ঘটনার সাথে আমার কোন ধরণের সংশ্লিষ্টতা নেই।’’

এ দিকে পাবিপ্রবি’র কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি জি এম শামসদ ফখরুল ও কর্মচারী সমিতির সভাপতি জামসেদ হোসেন পলাশ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড ও সামাজিক অনুষদ বিভাগের ডিন পদ থেকে ড. আব্দুল আলীমকে অপসারণ না করা পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ঘোষণা করেছে।

পাবিপ্রবি’র প্রক্টোর আওয়াল কবির জয় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শিক্ষক ড. আব্দুল আলীমের সাথে অসদাচরণ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবী করলেন প্রক্টোর। পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।