বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার কতটা গণতান্ত্রিক- তা ফের প্রমাণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।শুক্রবার সকালে রাজধানীর জিরো পয়েন্টের নূর হোসেন চত্বরে নূর হোসেন দিবসে আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।

বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়ে সরকার তাদের প্রতি নমনীয় হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, এটা কোনো নমনীয়তার ব্যাপার না। বিএনপি সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে, অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে কোনো বাধাতো কখনো ছিল না; কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, অনুমতি নিয়ে এযাবৎ তাদের এমন একটি জনসভাও হয়নি, যেখানে কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি।এই বিশৃঙ্খলাগুলোকে ভয় পাই বলেই আমরা এই বিষয়টা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম। আমরা অনুমতি সব সময় দিতে চাই। তারা একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, তাদের অবশ্যই সভা সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার কতটা গণতান্ত্রিক, এই অনুমতি দিয়ে আবারো প্রমাণিত হল।পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর টালমাটাল পরিস্থিতিতে গৃহবন্দি জিয়াউর রহমান পাল্টা এক অভ্যুত্থানে যে ৭ নভেম্বর মুক্ত হন, তাকে বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে থাকে বিএনপি।দিনটি উপলক্ষে বিএনপি ১২ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের আবেদন করলে অনুমতি দেওয়া হবে বলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা দলটিকে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে প্রশাসন।বিএনপির ওই নির্বাচন বর্জন করা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের বলেন, ৫ জানুয়ারী নির্বাচনে বিএনপি আসেনি বলে গণতন্ত্রের কি দোষ? তারা নির্বাচন বয়কট করল।তারা ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বয়কট করে গণতন্ত্র নেই বলে যে সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে, তাদের মনে রাখা উচিত… এই বাংলাদেশে গণতন্ত্র না থাকলে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ), কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) সাকসেসফুল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হত না।

সেতুমন্ত্রী বলেন, আইপিইউ এবং সিপিএ সম্মেলন বাংলাদেশে সফলভাবে অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এটিই প্রমাণিত হল যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে। আছে বলেই বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশ বাংলাদেশকেই লোকেশন হিসেবে ঠিক করেছে।আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিয়ে আসতে বিএনপিকে আহ্বান জানানো হবে কি-না, এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপিকে আহ্বান করলেও তারা নির্বাচনে আসবে, না করলেও নির্বাচনে আসবে। নির্বাচনে তারা আসবেই। তাদের নেতারাই বলেছে, তারা নির্বাচনে আসবেন। কাজেই এখানে আহ্বানের তো কোনো প্রয়োজন নেই।আমরা চাই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক একটি নির্বাচন হোক। বিএনপি একটা বড় দল, তারা অংশ নিলে নির্বাচনটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। সেজন্য আমরা চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক।নির্বাচনকালীন সহায়ক বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির দাবিরও সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের।তত্ত্বাবধায়ক তো পাগল আর শিশু ছাড়া আর কেউ বোঝে না, এ কথা কি শেখ হাসিনার? এ কথা খালেদা জিয়ার। এখন কখনো সহায়ক, কখনো তত্ত্বাবধায়ক, আসলে তারা কি চায়, সেটাই আমরা জানতে চাই।সংলাপের সম্ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংলাপ কেন? দরকার তো নেই।শহীদ নূর হোসেনের প্রতি স্মৃতিচারণ করে কাদের বলেন, নূর হোসেনের রক্ত গণতন্ত্রের বন্ধু। রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে দেশ মাতৃকার ঋণ শোধ করেছেন। নূর হোসেনের স্বপ্নে গণতন্ত্র মুক্তি পেয়েছে। এখন আমাদের অঙ্গীকার হবে বহু রক্তমূল্যে অর্জিত এই গণতন্ত্রকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেব। এটাই আজকের দিনের অঙ্গীকার।

শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ উপস্থিত ছিলেন।