পাবনায় শারীরিক ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতাও দমাতে পারেনি ৯ শিক্ষার্থীকে। সাত দৃষ্টি প্রতিবন্ধি যুবক শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবার জন্য শ্রুতি লেখকের সহায়তায় পাবনা সেন্ট্রাল গার্লস্ স্কুল কেন্দ্রে থেকে জেএসসি এবং ২ শারিরীক প্রতিবন্ধী সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে রফিকুল পা দিয়ে লিখে একাউন্টিং অনার্স ও হাবিব রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছে। দরিদ্র এসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধিদের এ সংগ্রামে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি যোগ হয়েছে নানা ধরনের আর্থ-সামাজিক প্রতিকুলতা। সব বাধা ও প্রতিকুলতাকে জয় করে তারা সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন।
জানা যায়, নরসিংদী জেলার রোমান মিয়া, পিতা রমিজ উদ্দিন, চাঁদপুর জেলার মোঃ শাজাহান গাজি, পিতা আনোয়ার গাজি, টাংগাইল জেলার মিনাজ উদ্দিন, পিতা জুলহাজ উদ্দিন, জয়পুরহাট জেলার রিয়াদ হোসেন, পিতা মোঃ ফরিদ হোসেন, যশোর জেলার হাফিজুর রহমান, পিতা মনিরুজ্জামান, পাবনা সদর উপজেলার শুভোন মোল্লা, পিতা ওয়াজেদ মোল্লা ও শাকিল প্রামানিক, পিতা ইসহাক প্রামানিক এই সাত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পাবনার মানব কল্যাণ ট্রাষ্টের আশ্রয়ে থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে।
মানব কল্যান ট্রাষ্ট সিংগা পাবনা, এই প্রকল্পের আওতায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দৃষ্টি প্রতিবন্ধিসহ সকল শ্রেণীর প্রতিবন্ধী শিশুর পূর্ণবাসন, পথশিশু সহ এতিম শিশু প্রতিপালন হচ্ছে প্রায় ১৮৫ জন।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধিদের লেখপড়ার জন্য প্রয়োজন ব্রেইল পদ্ধতি। অথচ দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সুযোগ নেই। পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন শ্র“তি লেখকের। দরিদ্র এসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধিদের শ্র“তি লেখক যোগার করা এবং তাদের (দশ হাজার টাকা) সম্মানী তো দুরের কথা লেখা পড়ার করার নুন্যতম আর্থিক ব্যয় নির্বাহ করারও সক্ষমতা নেই। তার পরেও থেমে থাকেনি এসব সংগ্রামী দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর শিক্ষা জীবন।
এছাড়া পা দিয়ে লিখে একান্টটিং অনার্স পরীক্ষায় অংগ্রহণকারি পাবনা ভাঙ্গুড়া উপজেলার রফিকুল ইসলাম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও শারিরীক অক্ষমতার কারণে প্রতিবন্ধী হিসাবে তাকে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয় নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধি এ পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্রের উত্তর মুখে বলে শ্র“তি লেখকদের শোনান এবং শ্র“তি লেখকরা সেটি লিখে আবার তাদের পড়ে শোনান। একারনে তাদের জন্য তিনঘন্টার অতিরিক্ত ২৫ মিনিট বেশি সময় বরাদ্দ করা হয়েছে।
এই ৯ জন পরীক্ষার্থীর মত আরো প্রায় ৭৫ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধি পাবনার সিঙ্গা মানব কল্যান ট্রাষ্টের আশ্রয়ে থেকে ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখা পড়া করছেন। এ প্রতিষ্ঠান থেকে ৬জন ৯ম শ্রেণীতে, ১০ম শ্রেণীতে ৭জন, একাদশে ৬ জন, ৩ জন এমএ সহ বিভিন্ন শ্রেনীতে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। মানব কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হোসেন জানান, এ প্রতিষ্ঠানকে সরকারি পৃষ্টপোষকতা দেয়া হলে সারা দেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধিদের সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষালয় হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।