আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র ধারার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিশীল নির্মাতাদের সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্র তৈরির লক্ষ্যে শুক্রবার থেকে রাজধানীতে শুরু হচ্ছে ষোড়শ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব।এবারের উৎসবে বাংলাদেশের পাশাপাশি আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ইরান, ইরাক, ফ্রান্স, চীন, কাজাখস্তান, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, তুর্কি ও সুইজারল্যা-সহ ৬৪টি দেশের ২১৬টি চলচ্চিত্র দেখানো হবে।

শুক্রবার বিকাল ৪টায় জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত এ উৎসবের উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।উদ্বোধনী আসরে বিশেষ অতিথি হিসেবে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উৎসবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল।

তিনি জানান, তুরস্কের নির্মাতা কাজিম ওজর আলোচিত চলচ্চিত্র ‘জার’ এবারের উৎসবের উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হবে।চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও সেমিনারের ভেন্যু হিসেবে এবার নির্বাচন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল ও প্রধান মিলনায়তন।এছাড়া আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তন, রাশিয়ান কালচার সেন্টার ও স্টার সিনেপ্লেক্সে উৎসবের চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শিত হবে।কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার চত্বরে উৎসব চলাকালীন সময়ে নিয়মিত মিলনমেলার আয়োজন করা হয়েছে। এখানে চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা তাদের চলচ্চিত্র পরিচিতির জন্য সমবেত হবেন।গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নিয়মিতভাবে মিট দ্য প্রেসের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে চলচ্চিত্রকার, প্রযোজক, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দেবেন।আয়োজকরা জানান, ১৩-১৪ জানুয়ারি আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে চলচ্চিত্রে নারীর ভূমিকা বিষয়ক ‘ফোর্থ ইন্টারন্যাশনাল উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্স’ এর আয়োজন করা হয়েছে। দেশ-বিদেশের নারী চলচ্চিত্র নির্মাতারা তাদের চলচ্চিত্র অভিযাত্রার গল্পের পাশাপাশি নারী নির্মাতাদের নানা প্রতিবন্ধকতার গল্পও শোনাবেন এই কনফারেন্সে।

এবারের উৎসবে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘ফার্স্ট এশিয়ান ফিল্ম ক্রিটিকস অ্যাসেম্বলি’ কনফারেন্সে এশীয় অঞ্চলের ১২টি দেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকাররা অংশ নেবেন।উৎসবের অংশ হিসেবে ৫ জানুয়ারি থেকে রাজধানীর পাঠশালায় শুরু হয়েছে অষ্টম ঢাকা আন্তর্জাতিক সিনে ওয়ার্কশপ। চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে আসা বিদেশি চলচ্চিত্রকাররা এখানে বিভিন্ন সেশনে ওয়ার্কশপ পরিচালনা করছেন।এবারের উৎসবে এশিয়ান কম্পিটিশন বিভাগে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১৫টি চলচ্চিত্র এই বিভাগে (নূন্যতম ৭০ মিনিটব্যাপী ফিকশন ফিল্ম) প্রতিযোগিতা করছে। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কারের পাশাপাশি এ বিভাগে পুরস্কৃত করা হবে শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা-অভিনেত্রী, শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক ও শ্রেষ্ঠ চিত্র নাট্যকারকে।ফরাসি নারী নির্মাতা জুলি বার্টুসেলি এবং সিলিনি সিএমার সাতটি ছবি দিয়ে সাজানো হবে রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগটি। এই বিভাগের সবগুলো চলচ্চিত্র আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে।আগের উৎসবে বাংলাদেশ প্যানোরোমা বিভাগটি না থাকলেও এবার তা যোগ হয়েছে। চলচ্চিত্র বিষয়ক সংগঠন ফিপরেসসি এই বিভাগে সমালোচক পুরস্কার দেবেন। বিভাগের ১০টি চলচ্চিত্র থেকে একটি চলচ্চিত্র শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র এবং একজন নির্মাতা পাবেন শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার।৪১টি সিনেমা নিয়ে সাজানো সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড বিভাগ থেকে দর্শক জরিপে একটি চলচ্চিত্র নির্বাচিত হবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে।১১টি শিশুতোষ চলচ্চিত্র নিয়ে সাজানো হয়েছে চিলড্রেনস বিভাগটি। পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান মিলনায়তন ও জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে প্রদর্শিত হবে এই চলচ্চিত্রগুলো। এই বিভাগ থেকে একটি চলচ্চিত্র পাবে বেষ্ট জুভেনাইল অডিয়েন্স বাদল রহমান অ্যাওয়ার্ড’।রাজশাহীর আড়ানিতে লাল মাফলার দিয়ে ট্রেন দুর্ঘটনা রুখে দেওয়া দুই শিশু বিজয়ী নির্মাতার হাতে পুরস্কারটি তুলে দেবেন।২৯টি চলচ্চিত্র নিয়ে সাজানো হবে স্পিরিচুয়াল ফিল্মস বিভাগ। রাশিয়ান কালচারাল সেন্টারে প্রদর্শিত সিনেমাগুলো থেকে একটি শ্রেষ্ঠ কাহিনিচিত্র এবং একটি শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্র পুরস্কার পাবে।৫০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নিয়ে সাজানো হচ্ছে উইমেন ফিল্ম মেকারস সেশন, যার সবগুলো চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে। এ বিভাগ থেকে একটি শ্রেষ্ঠ কাহিনিচিত্র, একটি শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্রের পুরস্কার দেওয়া হবে। রদশ-বিদেশের ৫২টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নিয়ে সাজানো হয়েছে শর্ট অ্যান্ড ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম বিভাগ। জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল হলে প্রদর্শিত হবে এই চলচ্চিত্রগুলো। এই বিভাগে রয়েছে শ্রেষ্ঠ কাহিনিচিত্র ও শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্রের পুরস্কার।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।উৎসবের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, এ ধরনের আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের পরিচিতি আরও বাড়ছে।ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ব্যাপ্তি আরও বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি।