গাজীপুরস্থিত ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠাণ মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আব্দুল হামিদ সমাবর্তন অনুষ্ঠাণে সভাপতিত্ব করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত ওই সমাবর্তন অনুষ্ঠাণে সমাবর্তন বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান। অনুষ্ঠাণে তিনি ৩২৮৪ জন গ্রাজুয়েটকে ডিগ্রী প্রদান ও তাদের মাঝে সনদ করেন। এসময় তিনি বিভিন্ন বিভাগের ৩৫জন কৃতি গ্রাজুয়েটকে স্বর্ণ পদক বিতরণ করেন এবং অনুষ্ঠাণে বক্তব্য রাখেন। এবারের সমাবর্তনে পুরঃকৌশল বিভাগ থেকে একমাত্র প্রকৌশলী মোঃ লুৎফর রহমানকে পিএইচডি ডিগ্রী প্রদান করা হয়। এ ছাড়া ডিগ্রী প্রাপ্ত অন্যদের মধ্যে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিআর্ক প্রোগামে ৩১৭৩ জন এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ১১১ জন ডিগ্রী লাভ করেন। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক (এমপি), গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. জাহিদ আহসান রাসেল (এমপি), বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, সচিব, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান, সামরিক-বেসামরিক উচ্চপদস্থ বিভিন্ন কর্মকর্তা, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীনবৃন্দ, শিক্ষক, কর্মকর্তা প্রমুখ।

সমাবর্তন অনুষ্ঠাণে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, আমরা স্বাধীনতার ৪৬ বছর অতিক্রম করেছি। মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিকের পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তির যে লক্ষ্য ছিল তা আজও আমরা পুরোপুরি অর্জন করতে পারিনি। এর বহুবিধ কারণও রয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমাদের জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে আমাদেও উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের পথকে রুদ্ধ করা হয়। বন্ধ হয় মানুষের বাক, মতামত ও চিন্তার স্বাধীনতা। নানা চড়াই উৎড়াই পাড়ি দিয়ে দেশে আজ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে সামনে রেখে বাংলাদেশকে একটি তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর গ্রাম ভিত্তিক সুখি সম¦ৃদ্ধ দেশে পরিনত করতে রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ ঘোষণা করেছেন। এসব রূপকল্প বাস্তবায়নে আপনাদের নিরলস প্রচেষ্টা চলিয়ে যেতে হবে। আজকের শিক্ষিত তরুণরাই এ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনাময়ের দেশ। আমাদের রয়েছে বিপুল মানব সম্পদ ও উর্বর কৃষিভ’মি এবং সম্ভাবনার প্রাকৃতিক সম্পদ। জনবহুল এ দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে হলে প্রয়োজন পরিকল্পিত উপায়ে বিদ্যমান সম্পদের সর্বোত্তম সুষ্ঠু ব্যবহার। প্রকৌশলীগণ উন্নয়নের কারিগর। তাদের মেধা মনন ও সৃজনশীল চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসে টেকসই উন্নয়নের রূপরেখা। তাই প্রকৌশলীদের চিন্তা ও চেতনায় থাকতে হবে দুরদৃষ্টির সুস্পষ্ট প্রতিফলন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্বায়নের বিষয়টিকে যথাযথভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। বিশ্বায়নের এ যুগে দেশ ও জাতিকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের জ্ঞান ও দক্ষতাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নতি করতে হবে। মনে রাখতে হবে আমরা আজ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক। আমাদের আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখতে হলে অর্থনৈতিকভাবে আমাদের স্বাবলম্বী হতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে ক্রেস্ট প্রদান করেন বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য। এর আগে রাষ্ট্রপতি ও বিশ^বিদ্যালয়সমূহের ভাইস চ্যান্সেলর মোঃ আবদুল হামিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক সদস্য এবং অনুষদের ডীনদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক সমাবর্তন শোভাযাত্রা সহকারে অনুষ্ঠান স্থলে আসেন। সমাবর্তন উপলক্ষে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়।

এর আগে তিনি কাশিমপুর কারা ক্যাম্পাসে কারা সপ্তাহ ২০১৮ এর উদ্বোধন করেন এবং বক্তব্য রাখেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠাণের পর দুইদিনের সফর সম্পন্ন করে তিনি হেলিকপ্টারযোগে গাজীপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। তিনি সোমবার দুপুরে দুইদিনের সফরে গাজীপুরে আসেন। রাতে তিনি গাজীপুর সার্কিট হাউজে অবস্থান করেন।